Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাদ্রের ‘তালপাকা’ গরমে বেতাল জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ষড়ঋতুর নিয়মেই এখন চলছে ভাদ্র মাসের শেষ সাপ্তাহ। বাঙালি প্রবাদে রয়েছে ভাদ্র মাসের গরমে তাল পাকে। গরম না হলে তাল পাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। সে গরমটা হয় এই বাংলা ভাদ্র মাসে। কিন্তু এবারের ভাদ্রের শুরুতেই বৃষ্টি দাপট দেখিয়েছে। ফলে মাসের শুরুতে ভাদ্রের চিরচেনা রূপটি বোঝা যায়নি। কিন্তু বৃষ্টি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বমূর্তিতে হাজির হয় ভাদ্র। চিটপিটে গরম, ভ্যাপসা গরম, যা-ই বলি না কেন প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। ইট পাথরের ইরামতের জঞ্জাল রাজধানীতে যারা বসবাস করেন তারা ভাদ্র মাসেও গরমে হাঁসফাঁস করছেন। চৈত্র্যের গরমে যারা জীবনের তাল ঠিক রেখেছেন তাদেরও ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে বেতাল অবস্থা হয়ে গেছে।
এবার কী এক অদ্ভুত আবহাওয়া বিরাজ করছে! আকাশে মেঘের ঘনঘটা, হঠাৎ হঠাৎ নেমে পড়ছে বৃষ্টি। কখনো মূসুলধারে কখনো ছিপছিপে। এ যেন লন্ডন শহরের দৃশ্য!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ থাকলেও কচি তাল কচি ডাবের মতোই সুস্বাদু। রৌদ্রের খরতাপে এই কচি তালশাঁস তৃষ্ণা নিবারণ করেই; সঙ্গে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে দেহ রাখে ক্লান্তিহীন। ডাবের পানির মতোই তালের শাঁস প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরে শক্তি জোগায়। এছাড়াও পাকা তালের রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া আর গমের আটা মিশিয়ে বানানো হয় তালের বড়া, চালের গুঁড়া মিশিয়ে বানানো হয় পিঠা, দুধের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে বানানো হয় তালক্ষীর। এ ছাড়া তালের সরু চাকলি তাওয়ার ওপর রেখে বানানো হলদে সাদা রঙের ফিনফিনে দোসা ক্ষীরে ডুবিয়েই যা খাওয়ার নিয়ম। এই আধুনিক যুগে রন্ধন পটীয়সীরা তৈরি করে থাকেন কলাপাতায় তালপিঠা, তালের স্পঞ্জ কেকসহ নানান পদের মুখরোচক খাবার।
কিন্তু তালপাকা গরমে নগরবাসী বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। রাজধানীতে যারা প্রচণ্ড গরমে কাজে বের হন তারা ডাব খেয়ে ক্ষণিকের জন্য প্রাণ জুড়াতে পারেন না। ডেঙ্গু রোগের কারণে ডাবের ঠান্ডা পানির দামে যেন আগুন লেগেছে। প্রতিটি ডাব ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভাদ্র মাসের প্রথম থেকেই কখনো টানা, কখনোবা দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ঝিরিঝিরি মিষ্টি বাতাস বয়ে যায়, কখনো পড়ে ভ্যাপসা গরম। গাছপালা কম থাকায় কংক্রিটের রাজধানী ঢাকায় ভ্যাপসা গরমের মাত্রা বেশি।
ভাদ্র মাসে শুরু হওয়া ভ্যাপসা গরম আশ্বিন, অর্থাৎ শরৎকালের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে জলীয় বাষ্প ভ্যাপসা গরমের মূল কারণ। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশে কখনো কখনো কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকায় মানুষের শরীর থেকে ঘাম কম বের হয়। শরৎকালে (ভাদ্র-আশ্বিন) তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করে। তারপরও বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকায় গরম বেশি অনুভূত হয়। কম গরমেই মানুষের অস্বস্তি বেড়ে যায়।
গতকালও আবহাওয়া অফিস বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঢাকাসহ দেশের একাধিক বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, ঢাকায় বৃষ্টি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সারাদিন মেঘলা আকাশের সাথে রোদের দেখাও মিলতে পারে। আর আজ শনিবার উত্তর বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হলে বোঝা যাবে দেশে কী প্রভাব পরবে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশের তাপমাত্রার তথ্যে বলা হয়েছে, দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ফেনীতে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগামী ৫ দিনের আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে, সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে নিকলিতে ২৯ মি.মি. ও ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১৪ মি.মি.।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। পরে সেটি ভারতের স্থলভাগে উঠে নিঃশেষ হয়ে যায়। গত বুধবার প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে বৃষ্টিহীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার বেলা বাড়লে মেঘে ঢেকে যায় রাজধানী ঢাকার আকাশ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হালকা বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়াবিদরা এবং আবহাওয়ার অফিস পূর্বাভাসে যাই বলুক ভাদ্রের এই তালপাকা গরমে রাজধানীর মানুষের যেন বেতাল অবস্থায় পড়ে গেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালপাকা গরম
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ