Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুছাকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার

প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : মুছাতেই আটকে আছে বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত। আর সেই মোস্টওয়ান্টেড আবু মুছা শিকদারকে ধরতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিলো পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার গতকাল (বৃহস্পতিবার) নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, মিতু হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত সাতজন গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মুছার নেতৃত্বে একটি দল এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছ্।ি মুছা নিজে থেকে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে, না কারও নির্দেশে এ কাজ করেছে- তা জানার জন্য তাকে গ্রেফতার করা জরুরী। মুছার অবস্থানের খবর দিতে পারলে বা গ্রেফতারে সহায়তা করলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মিতু হত্যাকা-ের ৪ মাসের মাথায় মূলহোতা মুছাকে ধরতে এ পুরস্কার ঘোষণা দিল পুলিশ। গত ৫ জুন সকালে নগরীর ও আর নিজাম রোডে শিশুপুত্রের সামনে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তার মিতুকে। হত্যাকা-ের পরপর নগর পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে সুরমিলিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও অভিযোগের তীর ছুঁড়েন জঙ্গিদের দিকে। যুক্তি দেখান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনাকারী বাবুল আক্তার তাদের রোষানলে পড়তে পারেন।
ওই রাত থেকে সারাদেশে শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। টানা এক সপ্তাহের অভিযানে সারা দেশে আটক করা হয় অন্তত বিশ হাজার মানুষকে। যাদের মধ্যে জঙ্গি ছিল মাত্র ৫০ জন। তবে নগর পুলিশের কর্মকর্তারা প্রথমে জঙ্গিদের সন্দেহ করলেও পরে তারা জামায়াত শিবিরকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। ধরে আনা হয় হাটহাজারীর মুসাবিয়া দরবারের খাদেম আবু নসর গুন্নুকে। বলা হয় সে শিবিরের সাবেক কর্মী। তবে তার স্বজনরা অভিযোগ করেন মাজার নিয়ে বিরোধের জেরে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ খেয়ে পুলিশ গুন্নুকে এই মামলায় আটক করে। রবিন নামে এক যুবককেও এই মামলায় আটক করা হয়। তবে তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য না পেয়ে পুলিশ পরে বলতে বাধ্য হয় তারা এই খুনের ঘটনায় জড়িত নয়।
মিতু খুনের মাত্র কয়েকদিন আগে তার স্বামী বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম থেকে এসপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায় বদলি হন। স্ত্রী খুনের ওই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতে ওঠেন তিনি।
ওই বাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে গত ২৪ জুন ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর নানা গুঞ্জন ছড়ায়। তখন তার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র নেওয়ার খবর ছড়ালেও সে বিষয়ে কেউই মুখ খুলছিলেন না। তার ২০ দিন পর গত ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বাবুলের অব্যাহতির আবেদন তার কাছে রয়েছে। তার ২২ দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন হয়।
সন্দেহের তালিকায় বাবুল আছেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর সে সময় পুলিশ কর্মকর্তারা না দিলেও তদন্তের ‘ভালোই অগ্রগতি হয়েছে’ বলে দাবি করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) মো. কামরুজ্জামান।
এদিকে মিতু হত্যার পর পুলিশের হাতে সাতজনকে গ্রেফতার হওয়া ছাড়াও আরও দুজন পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২৬ জুন আদালতে জবানবন্দি দেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে আবু মুছার নাম বলেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয় মামলার আসামি মুছা ছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তৎকালিন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বাবুল আক্তারের সোর্স। মিতুকে হত্যার অস্ত্র জোগানদাতা হিসেবে গ্রেফতার এহতেশামুল হক ভোলাও পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের সোর্স হিসেবে পরিচিত। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ভোলাও দাবি করেছেন খুনের জন্য সে মুছাকে অস্ত্র ভাড়া দিয়েছিলেন।
পুলিশ বলছে মুছাকে ধরা গেলে হত্যাকা-ের জট পুরোপুরি খুলে যাবে। তবে হঠাৎ করে তাকে ধরতে কেন পুরস্কার ঘোষণা তা নিয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে। কারণ শুরু থেকেই মুছার স্ত্রী ও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে মুছা পুলিশের কাছে রয়েছে। মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার জুলাই মাসের শুরুতে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, সাদা পোশাকে আসা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ২২ জুন সকালে বন্দর এলাকায় তাদের বাসা থেকে মুছাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতার করিনি, গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। মিতু হত্যাকা-ের তদন্তের সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, মিতু হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত আমরা সাতজনকে গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সবকিছু বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত যেটি পাওয়া গেছে, মুছার নেতৃত্বে একটি দল এই হত্যাকা- সংঘটিত করেছে। এখন যাদেরকে ধরতে পেরেছি আমরা এর মধ্যে মুছা নেই। তবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা হচ্ছে, মুছার নির্দেশে এবং তদারকিতে এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে।
এখন যেটি পাওয়ার বিষয়, যেটি জানার বিষয় সেটি হচ্ছে মুছা স্বপ্রণোদিত হয়ে অথবা কারও নির্দেশে অথবা কারও হয়ে খুন করেছে কিনা? এই উত্তর পাবার জন্য মুছাকে পাওয়া খুবই জরুরী। আমরা আকাশপথ, স্থলবন্দরসহ সকল সীমান্তে মুছা যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারে সেই বিষয়টি জানিয়ে রেখেছি। তবে মুছাকে গ্রেফতারে আমরা এখনও সফল হয়নি।
বাবুল আক্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, উনি মামলার বাদি। উনার সঙ্গে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তার বিভিন্ন সময় কথা হয়েছে। আমাদের যদি প্রয়োজন হয় উনাকে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে আসার জন্য বলা হবে। ইতোমধ্যে তিনি নিজেও আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। আশা করছি উনার কাছ থেকে নতুন কিছু তথ্য পাব।
মুছাকে কেউ নির্দেশ দিয়েছে বলে সন্দেহ কেন করছেন জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার বলেন, তদন্তের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই বলছি হয়ত মুছা স্বপ্রণোদিত হয়ে অথবা তাকে দিয়ে কেউ খুন করাতে পারে। এটা তদন্তে পরিষ্কার হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুছাকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ