Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কান্তজীর মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে ঢাকার সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় বনানী পূজামন্ডপ

আজ থেকে শুরু হচ্ছে পূজা

প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : বনানী মাঠে গত আট বছর ধরে পালন করা হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব। এটি এখন ঢাকার সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় পূজাম-প। এ বছর নবম বারের  মতো দুর্গা উৎসব উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে বনানী মাঠের সেই আকর্ষণীয় পূজা ম-প। বনানী মাঠের পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে পূজা ম-প তৈরির কাজ। গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চমীর দিন পূজা ম-পের কাজ শেষ হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার ষষ্ঠীর দিন মহা ধুমধামে ষষ্ঠী উৎসবের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী দুর্গা পূজা উৎসর শুরু হবে। ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিদিনই এখানে নানান আয়োজনে চলে পূজা উৎসব। দশমীর দিন বিকেলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা গুলশান-বনানী এলাকা ঘুরে দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় আশুলিয়ায়। পূজা ম-প এলাকায় নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কন্তজীর মন্দিরের আদলে এ বছরের পূজা ম-পটি তৈরি করা হয়েছে। ম-প তৈরির কাজ করেছে স্পটলাইট বিডি ইভেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মহা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদুল হক ও এমডি জাহিদ হাসান এ ম-পটির পরিকল্পনা ও ড্রয়িংয়ের কাজটি করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পূজা ম-প তৈরির কাজ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে গতকাল রাতে।
আয়োজক সংগঠন গুলশান বনানী পূজা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক শুধাংসু কুমার দাস বলেন, অস্থায়ী এ ম-পটি প্রতি বছর দেশ-বিদেশের নানা স্থানের আকর্ষণীয় ও ঐতিহাসিক মন্দিরের আদলে অত্যন্ত সৌন্দর্যম-িত করে নির্মাণ করা হয়ে থকে। এ বছর আমরা এ পূজা ম-পটি কান্তজীর মন্দিরের আদলে তৈরি করেছি।
এ বছরের পূজার উৎসব কেমন হবে জানতে চাই তিনি বলেন, আশা করি ভালোই হবে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। বাকিটাও ভালোই হবে বলে আশা করছি। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়েও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানী মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মন্দিরটি তৈরির শেষ সময়ের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। কোথাও মিল অমিল থাকলে সেখানে চলছে ঘষা মাজা। শ্রমিকেরা মহা ব্যস্ত। কেউ রঙ করছে, কেউ শোলা দিয়ে ময়ূর কিংবা গণেশের ছবি পিটিং করছে। ১১০/৭৫ স্কয়ার ফিট জায়গার উপর মূল পূজা ম-পটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়ও পূজা ম-প এলাকার নানা প্রয়োজনে তৈরি কার হয়েছে বেশকিছু কমিউনিটি বক্স। এর মধ্যে নিরাপত্তার কাজ তদারকি করার জন্য পুলিশের জন্য একটি ও র‌্যাবের একটি কন্ট্রোল রুম। ভিআইপি অতিথিদের জন্য একটি রুম, রক্তদান কর্মসূচি পরিচালনা করার জন্য একটি রুম, স্বাস্থ্যসেবা দান কাজ পরিচালনা করার জন্য একটি রুম, পূজা কমিটির জন্য একটি অফিস রুম, গোয়েন্দা বিভাগের জন্য একটি রুম, ফায়ার ব্রিগেডের জন্য একটি রুম, সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুম, কালচারাল প্রোগ্রামের জন্য একটি অস্থায়ী স্টিজ। মাঠের দুটি স্থানে টয়লেট ব্যবস্থা ও দুটি স্থানে হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা।
পূজার সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবেন, পুলিশ, র‌্যাবের বিপুল উপস্থিতি। এছাড়ও সাদা পোশাকে সিআইডি, এজবি, এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা। এছাড়া বনানী মাঠের পুরা এলাকাজুড়ে থাকবে সিসি ক্যামেরার আয়ত্তে।
পুলিশ কন্ট্রোল রুমে কথা হয় বনানী মাঠের পূজা উৎসবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনানী থানার এএসআই আবদুল আওয়ালের সাথে। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমরা গতকাল থেকেই কাজ শুরু করেছি। বনানী থানার তিনজন ও মিরপুর পিওএম থেকে ১০জন পুলিশের সদস্য স্থায়ীভাবে পূজা ম-প এলাকায় দয়িত্ব পালন করবে। আর টহল পুলিশতো থাকবেই।
তিনি বলেন, আমরা গত বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছি বিসর্জনের দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবো।
স্পটলাইট বিডি ইভেন্টের মহা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো স্থাপনা দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দিরের আদলে এবং বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সাম্প্রতিক মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা বাজেরা মাস্তানীর কালচারাল আদলে এ বছরের পুজা মন্ডবটি তৈরি করা হয়েছে। লোহার রডের ফ্রেমের উপর বেইজমেন্ট তৈরি করে তার উপর ফ্লাইবোর্ড দিয়ে ম-পটির মূল স্ট্রাকচার দাঁড় করা হয়েছে। ম-পটির সৌন্দর্যবর্ধন ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য দেয়াল পেস্টিং ও টেরাকোটার কাজ করা হয়েছে ককশীট (শোলা) দিয়ে।
স্পটলাইট বিডি ইভেন্টের এমডি জাহিদ হাসান ইনকিলাবকে বলেন, ১১০/৭৫ স্কয়ার ফিট জায়গার উপর এ পূজা ম-পটি তৈরি কারা হয়। প্রায় ২১ দিন ধরে প্রতিদিন ১২০ জন শ্রমিকের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফলে এ ম-পটি তৈরি করা হয়েছে। সুদক্ষ কারিগর ও শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় অত্যন্ত আধুনিক ও নান্দনিকরূপে এ পূজা ম-পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিমা রাখার স্থানের পিছনের কাজ করা হয়েছে (ব্যাক গ্রাউন্ডের কাজ) সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া সাড়া জাগানো হিন্দি সিনেমা বাজেরা মাস্তানীর কালচারাল সিস্টেমের আদলে। কান্তজির মন্দির দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি নবরতœ মন্দির নামেও পরিচিত কারণ তিনতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রতœ ছিল। কান্তজীউ মন্দির ১৮ শতকে নির্মিত একটি চমৎকার ধর্মীয় স্থাপনা। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত যা লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত। ধারণা করা হয়, মহারাজা সুমিত ধর শান্ত এখানেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তাঁর শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কান্তজীর মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে ঢাকার সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় বনানী পূজামন্ডপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ