পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.কে.এম ফজলুর রহমান মুন্শী : ইবনে যিয়াদের কূটভাবনা সুুষ্ঠু প্রয়োগ করতে তেমন দেরি হলো না। তারই নির্দেশে কতিপয় অস্ত্রধারী অনুচর প্রেরণ করে হানীকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হলো। ইবনে যিয়াদ এ সময় হানীকে লক্ষ্য করে বললো, ‘মুখে সাম্য-মৈত্রী ও অনুতাপের স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও কতিপয় দুষ্ট-দুরাচার গোড়া থেকেই রাজানুকূলের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে দুরভিসন্ধির পথ বেছে নেয়। এই লোকটি তার অন্যতম। সুতরাং এই রাজদ্রোহী বৃদ্ধকে বাজারের ধারে প্রকাশ্যে কতল করতে হবে। মানুষ দেখবে, প্রতিষ্ঠিত শাসনকর্তার নির্দেশ লঙ্ঘন করলে তার কী মূল্য দিতে হয় ও শাস্তি ভোগ করতে হয়। হানী ছিলেন সমগ্র কুফার সম্মানিত ব্যক্তি। ধনবল জনবল ও অস্ত্রবল সবদিক থেকেই তিনি প্রভূত যশ ও গৌরবের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু আজ এই নিদানকালে কুফার একটি প্রাণীও তার প্রতি চোখ তুলে তাকালো না। কারো মুখ হতে সমবেদনার একটি কথাও বের হলো না। জনগণ ভয়ে আতঙ্কে ও আশঙ্কার ভেতর কাল কাটাতে লাগলো। নিতান্ত অসহায় অবস্থায় তুর্কি গোলাম বশীরের তরবারির আঘাতে হানীর দেহ দ্বিখ-িত হয়ে গেলো। এজিদের মনঃতুষ্টির জন্য ইবনে যিয়াদ হযরত ইমাম মুসলিম ও হানীর মস্তক দামেস্কে প্রেরণ করলো। বিন যিয়াদের এহেন কার্যকলাপে এজিদ যারপরনাই প্রীত হলো। দামেস্কের দরবারে আনন্দের নহবত বাজতে লাগলো। সে সঙ্গে এজিদ ইবনে যিয়াদের কাছে দূত মারফত পত্র প্রেরণ করলো। পত্রে সে উল্লেখ করলো ‘তোমার কার্যক্রমে আমার সন্তুষ্টির অন্ত নেই। আমি গুপ্তচর মারফত জানতে পারলামÑ ইমাম হুসাইন (রা.) শিগ্গিরই কুফার পথে রওয়ানা হতে মনস্থ করেছেন। যদি তাই হয়, তাহলে ইমামের পথ রোধ করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করো। কিন্তু মনে রেখো, প্রথমেই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ো না। প্রতিপক্ষের অস্ত্র নিক্ষেপিত হলেই অস্ত্রের ব্যবহার করবে। আর আমি একই সঙ্গে ‘অলিদ বিন আতামা’কে মদিনার গভর্নর পদ হতে বরখাস্ত করলাম এবং তার স্থলে ‘আমর বিন সাঈদ’কে গভর্নর নিযুক্ত করলাম। এখন হতে তুমি গুপ্তচর মারফত আমাদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে। ‘আমরা’ তোমাকে ইমামের গতিবিধি ও মদিনার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করবো। সাবধান! “কোনো অবস্থাতেই ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না।” এদিকে ইমাম হুসাইন (রা.) কুফা গমন করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলেন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পরিবার-পরিজন সকলেই তাকে কুফা গমনে বাধা প্রদান করলেন। কুফার জনগণের নেমকহারামি ও মুনাফেকির কথা বার বার তুলে ধরলেন। কিন্তু না, ইমাম হুসাইন (রা.) কারো কথায় কর্ণপাত করলেন না। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বহু অনুনয়-বিনয় সহকারে ইমামকে কুফা গমনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার অনুরোধ জানালেন। সকল পরামর্শ, সকল নসিহত উপেক্ষা করে হুসাইন (রা.) স-পরিবারে কুফার পথে রওয়ানা হলেন। নিয়তির টানে এগিয়ে চললেন তিনি। কে যেন অলক্ষ্যে থেকে তাকে কুফার দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে লাগলো। তিনি সে অলক্ষ্যের ডাক শ্রবণ করে সবকিছু ভুলে গেলেন। বিস্মৃত হলেন পরিবেশ পরিম-ল ও বর্তমান অবস্থার কথা। কী যেন তার চাই। কুফাতেই মহামিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।
ইমাম হুসাইন (রা.) স্বতঃস্ফূর্তভাবে কুফার পথে চলেছেন। সত্যের সাধক, সত্যের সৈনিক, সত্যের পতাকাধারী পরম এক সত্যকে বরণ করার জন্য স্থির মস্তিষ্কে যেন এগিয় যাচ্ছেন। তিনি চলেছেন এক পরিপূর্ণতার দিকে। মহামিলনের এক অমোঘ আকর্ষণে, জগৎ সংসারের অতীত এক মোহনীয় মায়া যেন তাকে প্রবল টানে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। জিলহজ মাস একে একে সাতদিন অতীতের খাতায় জমা হয়ে গেছে। হিজরী ৬১ সালের এই দিনে ইমাম হুসাইন (রা.) ‘সাকাহ’ নামক স্থানে পৌঁছেন। সেখানে কবি ফরজদকের সাথে তার দেখা হয়। ফরজদক ইরাক হতে মদিনা প্রত্যাবর্তন করছিলেন। তিনি কবিকে ইরাকের সার্বিক রাজনৈতিক অবস্থা ও কুফার পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। কবি বললেন, ‘হযরত! কুফার জনগণের অন্তর আহলে বাইতের প্রতি অনুরক্ত। কিন্তু তাদের উন্মুক্ত তরবারি আহলে বাইতের বিরুদ্ধে উমাইয়া শাসনের সপক্ষেই উত্তোলিত হবে। আমার মনে হয়, আকাশ হতে আল্লাহপাকের গায়েবী সিদ্ধান্ত জারি হয়ে গেছে। আল্লাহ পাকের যা ইচ্ছা তাই তিনি সমাধা করবেন। কবি ফরজদকের কথা শুনে হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ বন্ধু! আল্লাহপাকের পবিত্র ফয়সালা যদি আমার অনুকূলে হয় তাহলে শোকর আদায় করবো। আর যদি আমার প্রতিকূলেও হয়, তবুও এর জন্য কোনো দুঃখ নেই। কারণ আমার নেক নিয়ামতের বদলা অবশ্যই তিনি আমাকে দান করবেন। কেননা আল্লাহর বিধান এই যে, তিনি কখনো কাউকে নেক নিয়তের পূর্ণ ফল হতে বঞ্চিত করবেন না। তিনি যে পরম দয়াময় অনন্ত করুণা নিধান রাব্বুল আলামীন।’ তারপর ইমাম হুসানই (রা.)-এর কাফেলা সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।