পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী : বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, এক সময় মরহুম মাওলানা এম. এ. মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যসূচীর সংস্কার করতে চান না। এ নিয়ে তখন সংবাদপত্রে হৈচৈও কম হয়নি। অথচ সারা জীবন তিনি শিক্ষার উন্নয়নে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন এবং পাঠ্যসূচীর প্রধান ঐতিহ্য ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো তথা স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তার উপর কোন প্রকারের হস্তক্ষেপ কিংবা রদবদল না করে যুগচাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনে কোন আপত্তি করেননি। এ উদ্দেশ্যে তিনি বহুবার গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূর প্রসারী নানা সংস্কার প্রস্তাব জমিয়াতের পক্ষ হতে পেশ করেছেন এবং পাঠ্যসূচীতে তার প্রতিফলনও রয়েছে। এতদসত্ত্বেও মাওলানা এম.এ. মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি পাঠ্যসূচী সংস্কারের বিরোধী ছিলেন যা অমূলক ও অসত্য।
অনেকদিন আগের কথা। ঘটনাটি ছিল এই যে, ১৯৯৭ সালের ৬ ও ৭ এপ্রিল জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা এম.এ. মান্নানের সভাপতিত্বে সংগঠনের উদ্যোগে দেশের সকল মাদ্রাসা প্রধানদের এক সম্মেলন ঢাকার মহাখালিস্থ বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোদার্রেছীন ও মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের স্বার্থে সর্বসম্মতভাবে সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য ৭ দফা সুপারিশ করা হয়। সপ্তম দফায় বলা হয়, দেশের বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যেহেতু সকল বিষয়ের সমন্বয়ে চালু হয়েছে, তাই এক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন নেই। এই মর্মে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে খোলা চিঠি দেয়া হয়েছে (সূত্র: ইনকিলাব, ১৩ এপ্রিল, ১৯৯৯)।
পরেরদিন ১৪ এপ্রিল ঢাকার একটি বাংলা দৈনিক স্বনামে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন খোলা চিঠি শীর্ষক এক বিরাট নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে প্রশ্ন রাখা হয়, তাহলে এখন মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচীতে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, এটা খোলা চিঠির লেখক বা জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কোন যুক্তিতে বলেছেন? লেখাটি শেষ করা হয়েছে এই বলে এখন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে নির্ধারণ করা অতি জরুরী। তা না হলে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা শিক্ষা ধারার মতো জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে আমরাও হাজার বছর পিছিয়ে যাবো। এ বক্তব্য ও মন্তব্য এখন থেকে ১৯ বছর আগের। বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এখনো বিতর্কের অন্ত নেই। আবার গুঞ্জন চলছে, মাদ্রাসা শিক্ষা জাতীয়করণ করা হবে, এর দ্বারা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের খোলা চিঠির মর্ম পরিষ্কার হয়ে যায়।
জমিয়াত পাঠ্যসূচীর যুগোপযোগী সংস্কারের বিরোধী কখনও ছিল না, এখনো নেই, সে কথা আমরা আগেই বলেছি। কাজেই আমরা দঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, সরকারের মাদ্রাসার শিক্ষার উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করার কোন বিশেষ মহল সচেষ্ট হলে তা সফল হবে না এবং মাদ্রাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য-স্বকীয়তা ও মূল্যবোধ ক্ষুণœ করার যে কোন উদ্যোগ ব্যর্থ হতে বাধ্য। জাতীয়করণের দাবী বা প্রস্তাবের আড়ালে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হাঁটু ভাঙা বা পঙ্গু করে দেয়ার সুদূর প্রসারী চিন্তা কাজ করছে কিনা তা প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধির বাইরে নয়। এ অশুভ সংকেত অনুভব করে মাদ্রাসা প্রেমিক ইসলামী শিক্ষা দরদী সবাই শংকিত ও বিচলিত। অনেকেই আবেগবশত এর সপক্ষে জোর দাবি তুলছেন। এর সর্বনাশা পরিণতি সম্পর্কে গভীর দূরদৃষ্টি দিতে পারছেন না। আমাদের এ আলোচনা তাদের চোখও খুলে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে সবাই আশাবাদী।
মাদ্রাসা শিক্ষা, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ইসলামী-আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ-এর প্রশংসনীয় ভূমিকা সর্বস্তরে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শিক্ষামন্ত্রী প্রায় সময় মাদ্রাসা শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল, মাদ্রাসা সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে তা সহজেই অনুমেয় ।
মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ কাল যাবত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে, তাঁর নিন্দা, প্রতিবাদ কখনও থামেনি। আলেম সমাজ সর্বদা এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। সুতরাং জাতীয়করণ করার চিন্তা বাদ দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচলিত পাঠ্যসূচীভুক্ত মৌলিক বিষয়গুলোতে কোন প্রকারের হস্তক্ষেপ না করে তা অক্ষুণœ রাখা এবং অপরাপর বিষয়গুলোতে যুগোপযোগী সংস্কার সাধনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে বিশেষায়িত এ শিক্ষা ব্যবস্থার সমূহ কল্যাণ।
(সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।