পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720127219](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার (উত্তরাঞ্চল থেকে ফিরে) : এরশাদের শাসনামলে ‘জাতীয় কবিতা কেন্দ্র’ ও ‘এশিয়া কবিতা কেন্দ্র’-এর মধ্যে কবি বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হলো। কোন সংগঠন কত কবি নিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে। শত কবি, হাজার কবি সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে সংগঠন দু’টির ব্যানারে কবিতা পড়তে লাগলেন। তখন এত টিভি, অনলাইন মিডিয়া ছিল না। হাতেগোনা কয়েকটি প্রিন্ট মিডিয়ার সাহিত্য পাতাই ছিল কবিদের ভরসা। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো কবি গজানোর চিত্র দেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক কবি মুহম্মদ রফিক ক্ষিপ্ত হয়ে লিখলেন ‘সব শালা কবি হতে চায়’ শিরোনামে কবিতা। মোহাম্মদ রফিকের ‘সব শালারা কবি হতে চায়’ কবিতার মতোই দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সিটমহল এবং আশপাশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে বসবাসরত চুনোপুঁটি থেকে রাঘব-বোয়াল সবাই চায় পাচার করা গরুর টাকার ‘বখরা’। সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসা গরু ও মাদকের টাকার বখরার জন্য দিনরাত সবাই থাকেন মুখিয়ে। উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১০টি সীমান্ত এলাকা ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেল। পাচার হয়ে আসা গরুর টাকার বখরা যেন তাদের জীবন-মরণ। সীমান্তে সবার মুখে গরুর আলোচনা। গরু ছাড়া যেন সব অন্ধকার। দহগ্রাম ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যানের হম্বিতম্বি হয়ে একদিকে ছুটে যাওয়া দেখে সঙ্গী বললেন, দেখছেন বখরার জন্য ছুটছেন।
কয়েকদিন ঘুরে জানা গেল, গরু আসে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল দিয়ে বেশি। আর মাদক আসে মোঘলহাট, কুলাঘাট, ফুলবাড়িঘাট, আদিতমারীর দুর্গাপুর, কালীগঞ্জের চামটা, লতামারী, চন্দ্রপুর, বুড়িরহাট, গোড়ল, তালুক দুলালী, হাতিবান্ধার দইখাওয়া, সিঙ্গিমারী, জাওরানী, উত্তর সিঙ্গিমারী, বড়খাতা, গোতামারী, পাটগ্রামের বুড়িমারী, মৃগলিবাড়ি, পানবাড়ী, ঝালাঙ্গী, শমসেরনগর, বাউরা, ধবলগুড়ি, কুচলিবাড়ী, ধবলসুতি সীমান্ত দিয়ে। ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা গরু আর মাদকের টাকার বখরা নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজন ব্যস্ত থাকেন। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় স্কুল-কলেজ পড়–য়া কিশোর-কিশোরী, তরুণ-যুবকরা মাদকমুখী হয়ে পড়েছে।
চোরাই গরু-মাদকের টাকার ভাগ-বাটোয়ারার কাহিনী সীমান্তের সবাই জানে; কিন্তু কেউ মুখ খুলে বলতে সাহস পায় না। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তগুলোতে যেন চলছে গরু ও মাদক পাচারের মহা সমারোহ। প্রশ্ন হলো গ্রামের তরুণরা যে মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে সে দায় কার?
ছুটছি তো ছুটছিই। এ সীমান্ত থেকে ও সীমান্ত। এক জেলা থেকে আরেক জেলা। তিনবিঘা করিডোর থেকে ফিরে পাটগ্রাম সদর না উঠে গাড়ি ছুটে চলছে বাবুল-কামাল সীমান্তে। সেখানে পাটগ্রাম পৌরসভা মেয়রের গ্রামের বাড়ি। পথে এক স্থানীয় সাংবাদিক জানালেন, সেখানে গিয়ে ভাঙ্গা নামের একজনকে পাওয়া গেলে সব খবর জানা যাবে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে বর্তমানে সীমান্ত ‘গরম’। বিএসএফের কড়া নজরদারি। ভাঙ্গা আপনাদের সীমান্তে নেবে কৃষক সাজিয়ে। ওর সাথে বিএসএফের সখ্য আছে। কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর পথে যাকেই পায় তাকেই সঙ্গী প্রফেসর ইফতেখার আহমেদ (ইনকিলাব পাঠগ্রাম সংবাদদাতা) জিজ্ঞাস করেন ভাই ভাঙ্গার বাড়ি কতদূর? উত্তর আসে সামনে? সামনে সামনে করতে করতে সীমান্তের ৮২৯ নম্বর পিলারের কাছে এসে গেছি। পিলারের পাশেই চা বাগান। স্থানীয়রা জানালেন, চা বাগান একশ’ বছরের পুরনো। ওই বাগান নোম্যান্স ল্যান্ডে। এ বাগান নিয়ে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে অনেক দেন-দরবার হয়েছে। অতঃপর চা বাগানটি ভারতের মালিকানায় থেকে যায়। চা বাগানের আশপাশে শত শত গরু জমিতে ঘাস খাচ্ছে। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। রাতেই ওইসব গরু চলে আসবে ছিটমহলে। অতঃপর যাবে বাংলাদেশের মূল ভূখ-ে। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ১০ থেকে ১৫টি করে বাছুর উন্মুক্ত গোয়ালঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে। ওরা কি সবাই গরু প্রতিপালন করে? প্রশ্ন শুনেই হায়দার আলী নামের একজন জানান, ওই সব রাতে করিডোর দিয়ে পার হয়ে যাবে মূল ভূখ-ে। প্রতিদিন ৫০টি গরু করিডোর দিয়ে নেয়ার নিয়ম। কিন্তু.....।
একটি গরু মরে রাস্তায় পড়ে রয়েছে। ছবি তুললেন সঙ্গী। অতঃপর ভাঙ্গা খোঁজ। যে ভাঙ্গাকে খুঁজছি তাকে সবাই ‘ডাঙ্গোয়াল’ নামে ডাকে। সীমান্তে গরু পাচারের ব্যবসা কোটি কোটি টাকা লগ্নি হয়। যারা ব্যবসা করেন তারা সীমান্তে যান না। ভাড়াটে হিসেবে যারা গরু পাচার করেন তাদের ডাঙ্গোয়াল বলা হয়। ছিটমহল এবং তার আশপাশের অনেক তরুণ লেখাপড়া বাদ দিয়ে গরু পাচারকারীর খাতায় নাম লিখিয়ে ‘ডাঙ্গোয়াল’ পরিচিতি পেয়েছে। এ পেশায় গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল এবং উচ্ছন্যে যাওয়া ছেলের সংখ্যাই বেশি। সীমান্তে ডাঙ্গোয়াল ডাঙ্গাকে খুঁজছি কেন রহস্যজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সবাই জানতে চায়। সঙ্গী জানান, তাকে ওপার থেকে বাচ্চার খেলনা আনতে দিয়েছি। সে খেলনা ভারতে পাওয়া যায়। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করেও ডাঙ্গোয়াল ভাঙ্গাকে পাওয়া গেল না। অগত্যা পাঠগ্রাম পৌরসভার এক আত্মীয় সীমান্ত দেখাতে নিয়ে গেলেন। লুঙ্গি পরিহিত আত্মীয় কয়েকজন কৃষককে (যারা জমিতে গরুর জন্য ঘাস কাটছিল) সঙ্গে নিয়ে চললেন। দেখা গেল ভারতের কয়েকজন বাসিন্দা কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে এসে গৃহপালিত গরুর জন্য ঘাস কাটছে। আইলের এক পাশে ভারতের ধানক্ষেত অন্য পাশে বাংলাদেশের ধানক্ষেত। এক কৃষক জানালেন, সীমান্তে এই যে বিস্তৃত মাঠের পর মাঠ ধান দেখছেন। কোনো জমিতে পোকার আক্রমণ নেই। আগে পোকার আক্রমণে ধানের ক্ষতি হতো। ধানের গাছে নানা রোগ-ব্যাধি হতো। সীমান্তে বিএসএফের হাজার পাওয়ারের বাতির কারণে এখন আর ফসলের জমিতে পোকামাকড় হয় না। কোনো জমিতে পোকামাকড় হলে সন্ধ্যায় সীমান্তের বাতিগুলো জ্বলে উঠলে সব পোকামাকড় ওই আলোর দিকে যায়। ফলে জমিতে ফলন ভালো হয়। এক কৃষক জানালেন, আগে এত পাওয়ারের বাতি সীমান্তে ছিল না। যখন পাওয়ারি বাতি ছিল না তখন ধানের ক্ষেতে পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিল। অথচ ওই বাতিই এখন আমাদের কৃষি জমির ফসলের উপকার করছে। বুড়িমারী, মোঘলহাট, আদিতমারীর দুর্গাপুর, বুড়িরহাট, হাতিবান্ধার দইখাওয়া, সিঙ্গিমারী, জাওরানী, উত্তর সিঙ্গিমারী, বড়খাতা, পানবাড়ী, কুচলিবাড়ী, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, বরইবাড়ি সীমান্ত ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারাও একই তথ্য দেন। ফুলবাড়ি আর গঙ্গার হাটের মাঝামাঝি সীমান্তের এক গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদের ক্ষতি করছে। বিএসএফ আগ্রাসী আচরণ করছে। কিন্তু সীমান্তের ভারতীয় বাতিগুলো আমাদের ধানক্ষেত থেকে শুরু করে সব ধরনের ফসলের উপকার করছে। আগ্রাসী ভারত চতুর্দিকে আমাদের ক্ষতি করলেও সীমান্তে তাদের বাড়ি আমাদের কৃষির উপকার করছে শুনে ভালোই লাগল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।