Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নামছে পানি ভাটিতে চাপ

আট নদ-নদী ১৪ পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে : উজান থেকে ভাটি অবধি ভাঙনের তান্ডব : প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক স্কুল-মাদরাসা, ক্লাস শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

অবশেষে নামছে বানের পানি। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। উজানে ভারী বৃষ্টি ও ভারতের ঢল আপাতত হ্রাস পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মাসহ দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে একযোগে ঢল-বানের পানি হু হু করে ভাটির দিকে নামছে। এ কারণে দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটিতে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় চাঁদপুর, লক্ষীপুর-নোয়াখালী, ভোলা-বরিশাল অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে সাতক্ষীরা পর্যন্ত উজানের বানের পানির প্রবল স্রোতের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এসব এলাকার নদ-নদী, শাখা-প্রশাখা, খাল-খাঁড়িগুলোতে ঢলবাহিত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোতেও বাড়ছে পানি। বানের পানি হ্রাসের সাথে সাথে নদীভাঙনের তান্ডব বেড়ে চলেছে উজান থেকে ভাটি এলাকায়। এদিকে নদীভাঙন ও বন্যা কবলিত ১৫টি জেলায় অনেক স্কুল-কলেজ-মাদরাসা কাদা-পানিতে প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এখনো লাখো পানিবন্দি ও বন্যার্ত মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয়, চিকিৎসার অভাবে চরম দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করছেন।
নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল মঙ্গলবার জানায়, প্রধান সব নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং তা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আজ বুধবার সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। আজ তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৮টি নদ-নদী ১৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। নদীগুলো হচ্ছে- যমুনা, পদ্মা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, গড়াই, কালিগঙ্গা, পুরাতন ধলেশ্বরী ও তুরাগ। প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৩৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৭২টিতে হ্রাস পাচ্ছে ও ৩টি পয়েন্টে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। সোমবার নদ-নদীর ৪৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫৯টিতে হ্রাস, ৪টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত এবং ৮টি নদী ১৫ পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। রোববার ৩৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৬৬টিতে হ্রাস, ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং ৯টি নদ-নদী ২০টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।

প্রধান নদ-নদীসমূহের পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল বিকাল পর্যন্ত পাউবোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যমুনা নদের পানি আরো হ্রাস পেয়ে ৯টি স্টেশনের মধ্যে ৪টিতে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, মথুরা ও আরিচা। উজানে গঙ্গায় ও ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। এখনো গোয়ালন্দ, ভাগ্যকূল, মাওয়া ও সুরেশ্বর এই চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আত্রাই ও ধলেশ্বরী নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়েছে। আত্রাই নদী বাঘাবাড়ীতে বিপদসীমার ৪৭ সে.মি. এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি টাঙ্গাইল জেলার এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার ৫২ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে তুরাগ নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সে.মি., মানিকগঞ্জ জেলার জাগিরে পুরাতন ধলেশ্বরী বিপদসীমার ৩ সে.মি. এবং তারাঘাটে কালিগঙ্গার পানি বিপদসীমার ৩০ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে গড়াই নদীর পানি মাগুরা জেলার কামারখালীতে বিপদসীমার ১০ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮ সে.মি. ঊর্ধ্বে এবং চাঁদপুরে মেঘনার মোহনায় ৩৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বিকাল নাগাদ উভয় নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। উজানের পানি নামতে থাকায় ভাটি ও দক্ষিণের মোহনা ও উপকূলভাগ ফুলে-ফুঁসে উঠেছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ভাদ্রের বড় অমাবশ্যার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের নদ-নদীর পানির ভাটিমুখী চাপে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলজুড়ে প্লাবন পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বিপুলসংখ্যক রোপা আমন ছাড়াও উঠতি আউশের জমি ডুবে গেছে। সাগর মাঝারি মাত্রায় উত্তাল রয়েছে। কুয়াকাটায় ব্যাপক গর্জনের সঙ্গে ৫-৮ ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে।

জামালপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জামালপুরের কয়েক জায়গায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। কয়েক সপ্তাহে নদীগর্ভে চলে গেছে শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলী জমি ও জামালপুর-খোলাবাড়ি পাকা সড়কের ৩’শ মিটার রাস্তা। সরকারি হিসাবে ভাঙনের কারণে গৃহহীণ হয়ে পড়েছে ৬৫টি পরিবার। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, বসত-বাড়ি, ফসলী জমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোবাইল ফোনে বলেন, যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন রোধে আমরা দ্রুতই কাজ শুরু করবো। তবে এখন পানির চাপ অনেক বেশি। তাই ইচ্ছা করলেই কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও কয়েক জায়গায় কিছু কাজ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে পানি না কমলে চুড়ান্ত কাজ করা সম্ভব হবে না।



 

Show all comments
  • ash ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 0
    HAJAR HAJAR KUTHI TAKAR SHAJIYE RAKHA BLOCK KOTHAY GASE??????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নামছে পানি ভাটিতে চাপ

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ