পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য ম্লান করে দিচ্ছে গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং। এই খাতে গত সাত বছরে যে উন্নতি হয়েছে তার সুফলটা কেবলমাত্র ঢাকাকেন্দ্র্রিক। আর ঢাকার বাইরে মফস্বলের চিত্র এতটাই উল্টো যে সেখানে বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির শেষ নেই। গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, প্রায় সব উপজেলাতেই দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এসব এলাকায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার তুলনামূলক চিত্রই বলে দেয় রাজধানীর সাথে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে কতটা বৈষম্য। গ্রামে একবার বিদ্যুৎ গেলে সহজে তার দেখা মেলে না। অনেক উপজেলা শহরে দিনে গড়ে ৬ বার পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশও হচ্ছে। এই সমস্যার জন্য পিডিবি দায়ী করছে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। আর বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণেই গ্রাহকদের এমন ভোগান্তি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, গতকাল (বুধবার) বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯ হাজার মেগাওয়াট। আর উৎপাদনও ছিল ৯ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এই হিসাবে দেশে কোথাও কোনো লোডশেডিং থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, গতকালও দেশের বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, সন্দ্বীপ, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বগুড়া, লালমনিরহাট, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নীলফামারী, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। জেলা শহরের চেয়ে উপজেলা পর্যায়ে লোডশেডিংয়ের যাতনা আরও বেশি।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। সারা দেশে লাখ লাখ গ্রাহককে নতুন সংযোগও দেয়া হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩ লাখ গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। যেভাবে এই গ্রাহক সংযোগ দেয়া হচ্ছে, সেভাবে বাড়তি বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো পাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আরইবি (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড) বলছে, সম্প্রতি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমেছে। এজন্য বেড়েছে লোডশেডিং। বেশকিছু বিদ্যুৎ অফিসে এরই মধ্যে হামলা-ভাংচুর হয়েছে। তারা চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এতে করে লোডশেডিং বেড়েছে। এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরইবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বড় হামলাও হতে পারে। এজন্য আরইবি’র পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গড়ে আরইবি’র বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পাচ্ছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট। ফলে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি তাদের সামাল দিতে হচ্ছে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমেই। এতে করে গ্রামে অঞ্চলভেদে তিন থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। পুড়ে যায় ট্রান্সফরমার। এছাড়া ভোল্টেজ সমস্যা তো রয়েছেই। বিদ্যুতের এই দুরবস্থার জন্য আরইবি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জিএম বলেন, ন্যাশনাল গ্রিড থেকে ঠিকভাবে সরবরাহ না পাওয়ার কারণেই লোডশেডিং বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাজীপুরের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার পাশে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় চাহিদার ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ কম দেয়া হচ্ছে। এই ঘাটতি মিটাতে গিয়ে শিল্পাঞ্চলসহ কেপিআইভুক্ত এলাকাগুলো পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে।
একইভাবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির টাঙ্গাইলের এক কর্মকর্তা বলেন, তার জেলায় শুধুমাত্র আরইবি গ্রাহকদেরই চাহিদা রয়েছে ৯০ মেগাওয়াটের উপরে। সেখানে তারা সরবরাহ পাচ্ছে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘন ঘন লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই কর্মকর্তার মতে, শারদীয় দুর্গা পূজার এই সময়টাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এই সুবিধা রাখাটা অপরিহার্য বিধায়, আমরা চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে বলেছি। আশা করি, পূজায় আমরা চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ পাব। অন্যথায় রাতে লোডশেডিং বেশি হলে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে।
পূজায় বিদ্যুতের এই বাড়তি চাহিদা শুধুমাত্র টাঙ্গাইলেই নয়; দেশের প্রতিটি জেলা থেকেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বহাল রাখতে বলা হয়েছে। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন আরইবি’র কাছে। আর আরইবি’র পক্ষ থেকে বিষয়টি পিডিবি’কে জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে পিডিবি বলছে, আরইবি যে হারে প্রতিমাসে সংযোগ বাড়াচ্ছে সেহারে বিতরণ লাইনের উন্নয়ন ঘটায়নি। তাদের ট্রান্সফরমার সমস্যা, ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে দুর্বলতার কারণেই গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির কারণে সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট অর্ধ শতাধিক লোক মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আঞ্চলিক অফিস ঘেরাও এবং বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লোডশেপিং বাড়তে থাকলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে।
গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোতে হামলার আশঙ্কা ব্যক্ত করে গত ২৮ আগস্ট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে একটি চিঠিও দিয়েছেন আরইবি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, তীব্র লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজের কারণে গ্রাহক অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায়ই মাঠ পর্যায়ে বিদ্যুৎ অফিস ভাংচুর হচ্ছে। অবরোধ করা হচ্ছে মহাসড়ক। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তি হ্রাস পেয়েছে। বর্তমান অবস্থা বিরাজমান থাকলে জনরোষ ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকবে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরইবি সূত্রে জানা গেছে, অনেক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এর সঙ্গে রয়েছে দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থা। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে গ্রামগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব সময় গুরুত্ব দেয়া হলেও গ্রামের গ্রাহকরা একেবারেই বৈষম্যের শিকার। তদুপরি রয়েছে সঞ্চালন লাইনের সমস্যা, কোথাও কোথাও গ্রিড সাব-স্টেশন না থাকা এবং গ্রিড লাইনে সমস্যা রয়েছে। এসব কারণে ময়মনসিংহ অঞ্চল এবং যশোর ও খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে। এছাড়াও সংস্থাটির সাড়ে ছয় লাখের মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড।
এ ব্যাপারে আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ মাসে ৪৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে তিন লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। এতে করে গত বছরের তুলনায় আরইবি’র অতিরিক্ত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে আরইবি’র যেখানে চাহিদা ছিল গড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট, এখন তা ৫ হাজার মেগাওয়াটে এসে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি ইনকিলাবকে বলেন, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম হওয়ার মূল কারণ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। বিদ্যুৎ বিভাগ এই সীমাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।