পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হতদরিদ্রদের জন্য দশ টাকা কেজি মূল্যের চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। এই চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরকালে আওয়ামী লীগের মীর শওকাত আলী বাদশা এমপির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি ৫০০ জনের জন্য একজন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। ডিলার এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা হতদরিদ্রদের তালিকা করে সে অনুযায়ী চাল বিতরণ করবে। এই তালিকা প্রস্তুতকালে কোনো গরমিল বা অনিয়ম যেন না থাকে সংসদ সদস্যরা সেই তালিকা যেন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। সরকারি কর্মকর্তারাও যেন পরীক্ষা করে দেখেন। যদি কেউ তালিকায় অনিয়ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের প্রয়োজন তাদের নাম না থেকে যদি সচ্ছল কারো নাম থাকে তাহলে ঐ সচ্ছলদের নাম বাতিল হবে এবং অসচ্ছলদের নাম দেয়া হবে। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বক্তৃতায় দশ টাকা কেজি চালের কথা বলেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় অসচ্ছল, হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি মূল্যে চাল বিতরণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ইসাফিল আলমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ কর্মসূচি দীর্ঘদিন পর্যন্ত রাখার সিদ্ধান্ত আছে। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন হতদরিদ্রদের মাঝে স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করে যাই। ১৯৯৮ সালের বন্যার পর ২০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে ৫৫ লাখ মানুষের মাঝে ৯ মাস বিতরণ করেছি। তাই যতদিন প্রয়োজন ১০ টাকা মূল্যের এই চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। যদিও অদূরভবিষতে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় এই কর্মসূচি লাগবে না, তবে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম এবং বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীদের মাঝে এই বিতরণ অব্যাহত রাখব।
ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদ এমপির তারকা চিহিৃত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন, জনবান্ধব সরকারি সেবা ব্যবস্থাপনা এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আইনসম্মত নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত সেবা পৌঁছানো এবং নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। আইনের খসড়া ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষ ও নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৯ম গ্রেডের নিয়োগপ্রাপ্ত নবীন কর্মচারীদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৪ মাসের স্থলে ৬ মাস করা হয়েছে। বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৯টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হচ্ছে। ১৩-২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বছরব্যাপী ৬০ ঘণ্টা কর্মকালীন প্রশিক্ষণের মডিউল চূড়ান্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে দেশের অভ্যন্তরে এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঝঃবঢ় প্রকল্পের আওতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সংস্থারগুলোর ৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য দেশের অভ্যন্তরে এবং সীমিত আকারে বিদেশে ক্রয় ব্যবস্থাপনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের সংস্থান রাখা হয়েছে। ইচঅঞঈ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এক বছরে এক হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ বিসিএস ক্যাডার কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের সুবিধা উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও জাইকার যৌথ উদ্যোগে ওঢ়ং-ঞয়স হয়েছে শীষর্ক প্রকল্পের আওতায় ২০৩০ জন কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দপ্তর/কার্যালয়ে ২ হাজার ৩০টি ক্ষুদ্র উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর স্কলারশিপ অর্জনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মচারী বৈদেশিক প্রশিক্ষণ মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। শ্রীলংকা এবং ফ্রান্সের সাথে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন, জনবান্ধব সরকারি সেবা ব্যবস্থাপনা এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আইনসম্মত নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনের খসড়া ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন লাভ করেছে।
সরকারি কর্মচারীদের সৃজনশীল কার্যক্রমকে উৎসাহিত ও সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রশাসন পদক প্রবর্তন করা হয়েছে।
দাপ্তরিক কাজে বাংলা বানানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা ও প্রশাসনিক পরিভাষা পুস্তিকা প্রণয়ন করে তা অনুসরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী যথাসময়ে আবেদনকারীকে তথ্য প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে। দ্রুত নাগরিকদের সেবা প্রদানের জন্য সিটিজেন চার্টার প্রণয়ন করে তা অনুসরণ করা হচ্ছে।
নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে। কার্যক্রম গুলো হচ্ছে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ অনুযায়ী কর্মচারীদের অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতিজনিত কারণে বিভাগীয় মামলা রুজু করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অর্জনের লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের চাকরিতে প্রবেশের সময় সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯- এর বিধি-১৩ অনুযায়ী সম্পদের হিসাব বিবরণী গ্রহণ এবং সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে আয়ের উৎস প্রদর্শনপূর্বক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ে অনুমতি প্রদান। শুদ্ধাচার কৌশল প্রবর্তন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং গণমুখী, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহীত অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একজন ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য গৃহীত কার্যক্রমের ফলে জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত সেবা পৌঁছানো এবং নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হকের এক তারকা চিহিৃত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে তখনই জনগণ বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করেছে। আমাদের সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব কর্মসূচি প্রান্তিক জনগণের জন্য নিবেদিত। দেশের সব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের অন্যতম কমসূচি হিসেবে স্বল্পমূল্যে মহানগর, বিভাগ, জেলা পর্যায়ে ওএমএস খাতে আটা বিক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সাথে আমরা সারাদেশে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে গ্রামীণ জনপদের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি কেজি ১০ টাকা করে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ কার্যক্রম চালু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর আমি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় এ কর্মসূচি উদ্বোধন করছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে কার্ড প্রদান করে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এবং মার্চ -এপ্রিল এই ৫ মাস প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রির কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এবং এ কর্মসূচি দীর্ঘ মেয়াদে চলবে। এতে দেশের আড়াই থেকে তিন কোটি লোক উপকৃত হবে। এ দেশে আর কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবে না। এ কর্মসূচি নাম হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং স্লোগান হচ্ছে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’। এই কর্মসূচি আমার বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম কার্যক্রম।
লাক্ষ্মীপুর-৪ আসনের মো: আবদুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ক্রীড়া পরিদপ্তর দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বাছাইকৃত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর ফলে দেশের তৃণমূল থেকে উঠে আসবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। দেশের প্রতিটি উপজেলায় খেলার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হলে তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষিত ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় তৈরি হবে। মাদক নির্মূলে সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে মন্দাভাব থাকা সত্ত্বেও আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৬.২ বিলিয়ন, ২২.৯২ বিলিয়ন, ২৪.৩ বিলিয়ন, ২৭.০৩ বিলিয়ন, ৩০.১৯ বিলিয়ন, ৩১.২১ বিলিয়ন, এবং ৩৪.২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। সরকারের রপ্তানিবান্ধব নীতিসহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রপ্তানি উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।
বগুড়া-৫ আসনের হাবিবুর রহমান এমপির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রোধসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শেখ হাসিনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা উন্নতি এবং সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের নির্মূল বর্তমান সরকারের একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যদের হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুতপূর্বক গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
দেশে ৬ হাজার স্কুল ৪০১ কলেজ স্থাপন করা হয়েছে
রাজশাহী-৩ আসনের আয়েন উদ্দিন এমপির তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় গৃহীত ও বাস্তাবায়িত চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৯৭টি একাডেমিক/আবাসিক ভবন, ছাত্রাবাস, ৬১৩৪টি বিদ্যালয় (সরকারি-বেসরকারি), ৪০১টি কলেজ (সরকারি-বেসরকারি) এবং ৯১৫টি মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণ বা সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ৩ হাজার ২৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ/সংস্কারের কাজ চলছে।
সবার আগে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করুন
বিশেষ সংবাদদাতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার আগে দেশের জনগণের কল্যাণে চিন্তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সবার আগে জনগণের কল্যাণের কথাই সবাইকে চিন্তা করতে বলব, আমরা তাদেরকে কতটুকু দিতে পারছি, দেশের কতটুকু উন্নয়ন করতে পারছি এবং দেশকে কতটুকু মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে পারছি। একই সাথে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজিএস) অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (এনএসডিসি) ৪র্থ বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং এনএসডিসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। টেকসই এবং প্রকৃত উন্নয়ন কখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়।
শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা সব সময়ই জনগণের জন্য আত্মনিবেদনে প্রস্তুত রয়েছি। ক্ষমতা কোন ভোগের বা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের বিষয় নয়। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়াতেই আমরা সফলতাও পাচ্ছি।
জনগণকে আর একটু ভালো রাখাই তার সরকারের সার্বক্ষণিক চিন্তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি জনগণের কথা না ভেবে শুধু নিজেদের চিন্তাই করতাম তাহলে হয়তো তাদের জন্য কিছুই করা সম্ভব হত না। আমাদের চিন্তাতে সবসময় সবার জন্য খাদ্য এবং কর্মসংস্থান, সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন. আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই আমাদের আন্তর্জাতিক বিশ্বে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
দেশের দ্রুত উন্নয়ন তথা মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের সকল জনগণকে শিক্ষিত করে তুলতে চায়, যাতে করে যেকোন উন্নয়ন কর্মকা-ই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভবপর হয়।
এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। জাতিসংঘে ২০০০ সালে এমডিজি এবং ২০১৫ সালে এসডিজি উভয় লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়নের সময়ই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার সেখানে উপস্থিত থাকার সুযোগ হওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এগুলোতে বিভিন্ন মতামত দেয়ারও সুযোগ হয়েছিল। এ কারণেই দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের করণীয়, কৌশল ও পরিকল্পনা কি হবে সে বিষয়গুলোও চিন্তা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সারাদেশে যে বিশেষ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেসব জায়গায় বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিকল্পনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন এবং তার সরকারও সেই পরিকল্পনানুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের কর্মকা-ে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে, তাদের নিজেদের মাঝে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে নিজেদের মেধাকে ব্যবহার করে তারা এখন নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এসময় দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমরা জনশক্তিও রপ্তানি করি। সেখানেও আমরা মনে করি, আগে যেমন ধরে বেঁধে পাঠানো হত। সেটা না, আমরা দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে চাই।
সবাই ‘ম্যাজিকটা’ জানতে চায়:
সরকারের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই জানতে চায় আমাদের উন্নয়নের ‘ম্যাজিক’ কি?
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এ উন্নতিতে অনেকে জিজ্ঞেস করেন উন্নয়নটা আপনারা করলেন কিভাবে? কেউ বলেন, ম্যাজিকটা কি? কেউ বলেন, বিস্ময়টা কি? এরকম নানা প্রশ্ন আমাকে করেন, আমি শুনি। একটাই ম্যাজিক, সেটা হলো দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসা আর দেশের মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে কাজ করা।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অঙ্গীকার করেছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো। ইতোমধ্যে আমরা অনেক অর্জন করেছি। বিশ্ব মন্দার সময় আমরা সরকার গঠন করলেও আজকে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি করতে সক্ষম হয়েছি। সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করে।
বাংলাদেশের অতীত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখতো। মনে করতো বাংলাদেশ মানে সবার কাছে হাত পাতবো, ভিক্ষা চাইবো, আর চলবো। কিন্তু এখন আর বাংলাদেশকে কেউ সেভাবে চিন্তা করে না। বাংলাদেশ যে কিছু করতে পারে এটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। আমাদের যে ইমেজ গড়ে উঠেছে সেটাকে ধরে রাখতে হবে।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চন্নু, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।