Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় খাদিজাকে কুপিয়েছি

ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সিলেট জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
খলিলুর রহমান : সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কোপানোর দায়ে ছাত্রলীগ নেতা ও কথিত প্রেমিক বদরুল আলম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিকালে অতিরিক্ত মহানগর মুখ্য হাকিম শারাবান তহুরার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল। পরে আদালত থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রাসকিউশন) তৌহিদুর রহমান।
তিনি জানান, জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর কড়া পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে গতকাল দুপুরে হাসপাতাল থেকে এই আসামীকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে এসে আদালতে হাজির করে শাহপরাণ থানা পুলিশ। শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বদরুল প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সে প্রেমঘটিত কারণেই খাদিজাকে কুপিয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করা করে খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস।
এদিকে, খাদিজা বেগম নার্গিসকে কোপানো তার কথিত ‘প্রেমিক’ বদরুলের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো সিলেট নগরী। এই দাবিতে গতকালও সকাল থেকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার তেমুখীতে ‘সদর উপজেলার সচেতন নাগরিকবৃন্দ’র ব্যানারে একই কাতারে দাঁড়িয়ে বদরুলের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন কামরান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আলী আহমদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ছাত্র নামধারী বখাটে নরপশু বদরুল আলমকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে অন্য কেউ দ্বিতীয়বার ভাববে। কিন্তু তার শাস্তি যদি নিশ্চিত না হয়, তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
এদিকে বদরুল আলমের শাস্তির দাবিতে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। বুধবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে তারা জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক অবরোধ করেন। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ফজিলাতুন্নেছা বলেন, বদরুলের শাস্তির দাবিতে আমরা বিক্ষোভ করেছি। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানাচ্ছি।
আগেও বখাটেপনার জন্য গণধোলাই খেয়েছিল বদরুল
ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : সিলেট এমসি কলেজে খাদিজা বেগমের ওপর হামলাকারী বদরুল ছাতকের দক্ষিণ খুরমা ইউপির মনিরজ্ঞাতি গ্রামের দ্বীন মজুর সাইদুর রহমানের পুত্র। সে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জস্থ আলহাজ্ব আয়াজুর রহমান হাইস্কুলের শিক্ষক বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ঘোপাল এলাকায় একই স্কুলছাত্রীর সাথে বখাটেপনা করতে গিয়ে সে এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ের শিকার হয়। পরে প্রতারণা করতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের হাতে গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানায়। এসময় প্রতারণার মাধ্যমে সে আ’লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা ভোগ করেছে। বদরুল শাবির শিক্ষার্থী ও চলতি বছরের ৮ মে অনুমোদিত শাবি ছাত্রলীগ কমিটির সহ-সম্পাদক। এঘটনার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে এমসি কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনমজুর পরিবারেই বেড়ে ওঠে বখাটে বদরুল। ছোট বেলা থেকেই ছিল সন্ত্রাসী উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির। আলহাজ্ব আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মখলিছুর রহমান জানান, যোগদানের পর মনিরজ্ঞাতি থেকে ওই শিক্ষক (খ-কালীন) স্কুলে আসা যাওয়া করতেন। ঘটনার দিনও স্কুল বন্ধ ছিল। এ লোমহর্ষক ঘটনাটি জানার পর স্কুল থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ইউপি সদস্য সুহেল আহমদসহ স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, বখাটে বদরুল খাদিজার বাড়ি হাউশা গ্রামে লজিং থেকে শাবিতে লেখাপড়া করতো। এ সুযোগে খাদিজাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তার কুপ্রস্তাব সব সময়েই খাদিজা প্রত্যাখ্যান করলে সে হিং¯্র হয়ে উঠে। পরিবারের লোকজন বিষয়টি জেনে চরিত্রহীন বদরুলকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপরেও সে খাদিজার পিছু ছাড়েনি। বিভিন্নভাবে তাকে প্রেম নিবেদন করে আসছিল। ৭ বছর গৃহ শিক্ষক থাকাকালে প্রত্যহ সে প্রেম নিবেদন করেছে। কিন্তু সাড়া না দেয়ায় সফির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় গিয়ে খাদিজাকে আবারো উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। এসব ঘটনায় একাধিকবার ঘোপালসহ বিভিন্ন এলাকায় তাকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে। কিন্তু গায়ে ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সব সময়ই এসব ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। বদরুল ৪ ভাই ও একবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ৭/৮ মাস আগে তার দিন মজুর পিতা মারা গেছেন। সে ছোট বেলা থেকেই একজন বখাটে প্রকৃতির লোক ছিল। তার চাচা ফজল উদ্দিন, মা ও চাচীসহ পরিবারের লোকজন বখাটে বদরুলের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন বলে জানান। দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।



 

Show all comments
  • সিরাজুল ইসলাম ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ৬:৩৮ এএম says : 0
    হত্যার চেষ্টায় শাস্তি অনেক বড়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply
  • Asaduzzaman Asad ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ৯:৫৫ এএম says : 0
    ..........র কুকর্মের বিচার জদি আগে হতো তাহলে আজ এধরনের ঘটনা ঘটতোনা
    Total Reply(0) Reply
  • সোহাগ আহমদ মাহি ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ৯:৫৬ এএম says : 0
    এই ....................র ফাসি হউক
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdul Jalil ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ৯:৫৭ এএম says : 1
    ফাসি ফাসি ফাসি চাই
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ৯:৫৮ এএম says : 0
    তাহলে এখন কোন বিচার ছাড়াই তার ফাঁসি কার্যকর করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • এম,জাহেদ ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:১৬ পিএম says : 0
    শুধু শাস্তি শাস্তি বললে হবে না দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হতে হবে, কেউ জেন দ্বিতীয় বার এরকম ঘটনা করার সাহস না পায়।কৈয় শাস্তি হয় না এরকম ঘটনা আগে অনেক বার হয়েছে বিচার হয় না কয় দিন পর জেল থেকে বাহির হয়ে আবার আর একটা ঘটাবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় খাদিজাকে কুপিয়েছি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ