পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী : মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা অক্ষুণœ রাখতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-উলামায়ে কেরাম সর্বদা সচেষ্ট ও সতর্ক রয়েছেন, তবে অনাকাক্সিক্ষত কিছু কিছু ঘটনা কোথাও ঘটে থাকা অস্বাভাবিক নয়। আমাদের দেশে প্রচলিত মাদ্রাসাগুলোর ধর্মীয় পরিবেশের সাথে তুলনা হয় না। ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধানসমূহ যথাযথভাবে মেনে চলার ক্ষেত্রে সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ খুবই কম, শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করার সুযোগও নেই। ছাত্রদের অবাধে মাদ্র্রাসা প্রাঙ্গণে চলাফেরা বা অযথা সময় কাটানোর সুযোগ কোথায়? প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার অর্থাৎ যেখানে আবাসিক ব্যবস্থা নেই, সেখানে প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের সময় ক্লাসের কক্ষেই অবস্থান করা হয়। তাদের যোহরের নামাযে অংশগ্রহণ করতে হয়। আসরের পূর্বে ছুটি হলে নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে যেতে হয়। হোস্টেলে অবস্থানকারীদের তত্ত্বাবধানে কোন কোন শিক্ষক নিয়োজিত থাকেন। নামাযের সময় হলে কেউ অনুপস্থিত থাকল কিনা সেদিকে কড়া দৃষ্টি রাখা হয়, ছাত্রদের নিয়ম-শৃংখলার মধেই মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন কাটাতে হয়, এরূপ ছাত্রদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তারা উস্তাদ-মুরুব্বিগণের কাছে যে শিক্ষা উপদেশ লাভ করে থাকে, বাস্তব জীবনে তা মূল্যবান পাথেয় হিসেবে গণ্য হয় এবং তাদের আদর্শিক ও নৈতিক গুণাবলী সর্বসাধারণের কাছে সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হয়। তাদের চাল-চলন, আচার-আচরণে স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তাকে ইসলামী আদর্শ শিক্ষার প্রতিফলন বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রতিটি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসব ঐতিহ্য-বৈশিষ্ট্যের ধারক-বাহক, কওমি হোক বা আলিয়া পদ্ধতির হোক। তাই দেখা যায়, কওমি মাদ্রাসার সনদের প্রতি সরকারী স্বীকৃতির ব্যাপারে যে মতানৈক্য দেখা যায়, তাতে মাদ্রাসার স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা ক্ষুণœ হওয়ার আশংকা প্রধান কারণ হিসেবে বিরাজ করছে।
শুরু থেকে সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সরকার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন।
তিনি সম্পূর্ণভাবে সরকারে আজ্ঞাবহ থাকতে বাধ্য এবং শিক্ষক-স্টাফ কর্মচারী সবাই প্রিন্সিপালের নিয়ন্ত্রণাধীন। পক্ষান্তরে অন্যান্য বেসরকারি মাদ্রাসায় ও শিক্ষকবৃন্দ সুপার বা প্রিন্সিপালের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও প্রিন্সিপাল নিয়োগে সরকারের কোন হাত থাকে না। ম্যানেজিং কমিটি এ পদে যোগ্য লোক নির্বাচিত করে থাকে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সরকারী হস্তক্ষেপের কোন অবকাশ নেই। অবশ্য মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বা এতদসংক্রান্ত কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ থাকলে তারা যা খুশি তা করতে পারেন। কিন্তু মাদ্রাসাগুলো যেহেতু মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। কাজেই কোন অমুসলিম দ্বারা পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলে, তবে এগুলো সম্পূর্ণভাবে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এবং সরকারী তদারকিতে মাদ্রাসার সকল কর্মকা- পরিচালিত হবে-এটাই স্বাভাবিক। মাদ্রাসা শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য-স্বকীয়তা, পাঠ্যসূচি প্রণয়নের দায়িত্বও সরকারী মহলের ওপর বর্তাবে, এটাও অস্বাভাবিক নয়। অথচ এ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত নানা পরিবর্তনশীল ও রদবদলযোগ্য বিষয়সহ ইসলামের অপরিবর্তনীয় বেশ কিছু বিষয়। যেমন- কোরআনের তফসির, হাদিস, ফেকাহ, উসুল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের নির্বাচিত গ্রন্থাবলী। পরিবর্তনশীল বিষয়গুলো সংস্কার করতে গিয়ে ইসলামের মূল বিষয়গুলো যদি আক্রান্ত হয়ে পড়ে, এ আশঙ্কা তো উড়িয়ে দেয়া যায় না, এরূপ আশঙ্কা অতীতেও ছিল। এ সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে কলিকাতা মাদ্রাসার ছাত্ররাও ঐ সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল।
শিক্ষকগণ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন, সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে না পারায় সংগ্রামের পক্ষ অবলম্বন করাও ছিল বিপজ্জনক। মনে মনে তারা ইংরেজবিরোধী সংগ্রামের পক্ষে থাকলেও নীরবতার নীতিই অবলম্বন করেন। মাদ্রাসা হতে পাস করা ছাত্ররা যেহেতু কোন সরকারী কাজের যোগ্য বিবেচিত হতো না, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কঠিন ছিল। এ কারণে ছাত্ররা মুসলমানদের মধ্যে স্বাধীনভাবে বিদেশীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়াতো। এ ধারণা ছিল তৎকালীন বাংলার লে. গভর্নর স্যার ফ্রেডারিক হলিডের মধ্যে। তিনি মনে করতেন, মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি ফেকার কিতাবে জেহাদ, জিম্মি, দারুল-হরব এবং দারুল ইসলাম বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকায় এগুলো পড়ানো ও শেখানো হয়। এ কারণে মুসলমানদের মনে বিদেশী শাসকদের বিরুদ্ধে ঘৃণার প্রেরণা জন্ম নেয় এবং এরাই জনগণের মধ্যেও এ প্রেরণা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং জীবিত রাখছে। আলিয়া মাদ্রাসার (তৎকালীন) সাবেক প্রধান শিক্ষক মওলানা মোহাম্মাদ ওয়াজীহ জুমার নামাজে এই কারণে শরিক হতেন না যে, তিনি মনে করতেন, দেশটি দারুল হরব এবং দারুল হরবে জুমার নামাজে জায়েজ নয়। লে. গভর্নর এ শিক্ষার ঘোর বিরোধী ছিলেন। জানা যায়, সে সময় ফেকার কিতাব হতে জেহাদ অধ্যায় বাদ করে দেয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে আবার তা সংযোজিত হয়। লে. গভর্নর সাহেবের জানা ছিল না যে, কোরআনে জেহাদ সংক্রান্ত বহু আয়াত যেমন রয়েছে তেমনি একই বিষয়ে হাদিসের সংখ্যাও বিপুল এবং ফেকাহ হচ্ছে কোরআন ও হাদিসের সংকলন গ্রন্থ ।
(আগামীকাল সমাপ্য)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।