পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : জন্মের কয়েক ঘন্টার পর মৃত ঘোষণা করে প্যাকেটে পুরে ট্যাপ মুড়িয়ে দেওয়া সে নবজাতক মারা গেছে। গতকাল (বুধবার) বেলা দেড়টায় নগরীর মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। পৃথিবীর আলো দেখার পরপর চিকিৎসকদের নিষ্ঠুর অবহেলা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল তাকে।
মৃত ঘোষণা করে প্যাকেট করার প্রায় ৩৪ ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হলো। ম্যাক্স হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বসু বন্ধু বড়ুয়া নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে বাচ্চাটিকে দেখতে ম্যাক্স হাসপাতালে যান চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি জানান, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
সোমবার রাতে নগরীর প্রবর্তক মোড়ের বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে ওই শিশুর জন্ম হয়। তার মা রিদওয়ানা কাউসার বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন; আর বাবা নুরুল আজম কক্সবাজার জেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। জীবিত সন্তানকে মৃত ঘোষণার জন্য সিএসসিআরের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন তারা।
ডা. রিদওয়ানা অভিযোগ করেছেন, সোমবার রাত ১টায় তাকে লেবার রুমে নেওয়ার দ্ইু ঘণ্টা পর তার বাচ্চাকে মৃত ঘোষণা করেন এনআইসিইউয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসক। একটা প্যাকেটে আমার বাচ্চাকে আমার কেবিনে দিয়ে যায় তারা। আমি প্যাকেট খুলে দেখি আমার বাচ্চার চেস্ট মুভমেন্ট ও গ্যাসপিং রেস্পিরেশন (লম্বা শ্বাস) হচ্ছে। দ্রুত আমার বাচ্চাকে নিওনেটালে পাঠালে ওরা বারবার বাচ্চাকে মৃত বলতে থাকে। বাচ্চার মুভমেন্টকে তারা পাত্তাও দিল না। একটু ধরেও দেখল না।
এরপর শিশুটিকে সিএসসিআর থেকে নেওয়া হয় ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে। সেখান থেকে পরে নেওয়া হয় ম্যাক্স হাসপাতালে। মঙ্গলবার রাতেও মেয়েকে নিয়ে আশায় ছিলেন রিদওয়ানা; বলেছিলেন, সে মোটামুটি সুস্থ আছে। সিএসসিআর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলায় অভিযোগ এনে তিনি বলেন, তারা যদি বাচ্চাটাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিত, রিসাসিটেইট (জীবন ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা) করত, তাহলে ওর কন্ডিশন ইমগ্রুভ করত। ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসক মৌ জানিয়েছিলেন, সুস্থ নবজাতকের ওজন ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ কিলোগ্রাম হয়, সেখানে রিদওয়ানার মেয়ের ওজন মাত্র ৫০০ গ্রাম।
এদিকে নবজাতকটিকে ‘মৃত’ ঘোষণার বিষয়টি তদন্তে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে সিএসসিআর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে জীবিত নবজাতককে ‘মৃত ঘোষণা’ করার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস। শিশু বিশেষজ্ঞ মো. শাহ আলমকে আহ্বায়ক করে গঠিক এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ডেপুটি সিভিল সার্জন অজিত কুমার দে ও সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী এসএম সাহেদুল ইসলাম। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ আমাকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন এই বিষয়টির তদন্ত কমিটি করে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে। আমি তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। আমরা তিনদিনের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর চিন্তা করেছিলাম। এর মধ্যে আমাদের সেই ছোট্ট বাচ্চাটি যাকে জীবিত অবস্থায় মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল সে সত্যি সত্যি মারা গেল। এটি আমাদের সবার জন্য বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। চিকিৎসক দম্পতি তাদের প্রথম সন্তানকে হারালো। তাদের সমবেদনা জানানোর কোনো ভাষা নেই। আমরা এই বিষয়ে কোনো অবস্থাতেই এই অবহেলাকে সহ্য করবো না।
এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য বিভাগে প্রতিবেদন দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের পরামর্শ দেব। সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে এখনও কিছু ভাবেনি শিশুটির পরিবার। তবে তারা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চান। নবজাতকটির মামা মোহাম্মদ রাফিদ সিদ্দিকী বলেন, আমরা আইনি বিষয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। পরিবারে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমরা চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।