পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিচারক নেই চার মাস যাবৎ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে পুরনো নথিপত্র
মালেক মল্লিক : বিচারক না থাকায় গত চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে একমাত্র প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ। শুধু বিচারকই নয়; জরাজীর্ণ ভবন, এজলাসেও বৃষ্টির পানি পড়ে, নেই পর্যাপ্ত জনবল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার স্থান। একই সঙ্গে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে মামলার নথিপত্র। ট্রাইব্যুনালের ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের। এদিকে পার্শ্ববর্তী প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালেরও একই অবস্থা। জরাজীর্ণ টিনশেড ভবন, বসার স্থান না হওয়ায় বারান্দায়ই অফিস করতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। গত বুধবার সরেজমিন ঘুরে এমন বেহালদশা চিত্র দেখা যায়, একমাত্র প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে। শুধু নিয়োগ জটিলতার কারণে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬ বার এই আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ বন্ধ হয়েছে। এতে করে যেমনি বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বাড়ছে তেমনিভাবে বাড়ছে মামলার জট। ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব সমাধানে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে জানানোর পর কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। এই আদালতের প্রতি মন্ত্রণালয়ের নজর নেই।
সূত্র মতে, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক না থাকায় গত পাঁচ মাস যাবৎ বিচারকার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। ফলে বিচারকার্যে স্থবিরতা নেমে আসছে। জানা যায়, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল। রাজধানীর আবদুল গনি রোডে শিক্ষা ভবনের বাম পাশে অবস্থিত এ ট্রাইব্যুনাল। সরকারি চাকরিজীবী পিয়ন থেকে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের চাকরি নিয়ে সঙ্কটে পড়লে প্রথমে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে পরে আপিল ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হন। বর্তমানে আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন বিচারপতি এ কে এম ফজলুর রহমান। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শেখ মো: রজব আলী এবং ড. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। এছাড়াও অফিসার ৪ জন, বেঞ্চ অফিসার ১ জন, পিয়ন ৪ জনসহ ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির একজন টাইপিস্টের পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য। নিয়োগ চূড়ান্ত হলেও হঠাৎ নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মামলার বার্ষিক কোনো পরিসংখ্যান রাখতে পারছে না। যদিও প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় মামলার তথ্য।
এদিকে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলার রায়ের কপি এবং রেকর্ড রাখার জন্য কোনো জায়গা নেই। এতে করে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেসব নথি রয়েছে সেগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। পুরনো টিনশেড ভবনের চারটি রুম বরাদ্দ নেয়া হলেও গত বছর শেষের দিকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে নষ্ট হয়ে যায় অনেক ফাইল। আদালতের বিচারকাজ চলে টিনশেড ভবনের একটি কক্ষে। বৃষ্টি হলে এজলাসেও আবার পানি পড়ে। এতে মামলার বিচারকার্যে বিঘœ ঘটে।
সূত্র মতে, গত ১৮ মে বিচারপতি রজব আলী অবসরে চলে যাওয়ার পর থেকে ওই আদালতের বিচারকার্য বন্ধ রয়েছে। বিচারক চেয়ে আবেদন জানানো ৪ মাস অতিবাহিত হলেও মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে আপিল ট্রাইব্যুনালে ৫০৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পাঁচ বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ সালের পর থেকে প্রতি বছর মামলার নিষ্পত্তির হার বেশি ছিল। চলতি বছর ১৮ মে পর্যন্ত নিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল ২৯৪টি। এর আগের বছরে ২৯৩টি। চলতি বছর বিচারক না থাকায় নিষ্পত্তির হার ফের কমেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করলেও বিচারক সঙ্কটের কারণে ১ বছর ৪ মাস বিচারকার্য চালাতে পারেননি বলে জানা গেছে। বিচারক না থাকার কারণে কোর্টও বসতে পারছে না। অফিস স্টাফরা বসে বসে অবসর সময় পার করছেন। ফলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিচারপ্রার্থী জানালেন, সরকার আপিল ট্রাইব্যুনালে ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারক নিয়োগ দিচ্ছে না। কারণ সরকার চায় না এসব মামলার নিষ্পত্তি হোক।
এদিকে দেশের সাতটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মধ্যে আপিল আদালতের পাশে পুরাতন টিনশেড ভবনে ১, ২ ও ৩-এর বিচারকার্য চলে। এই ট্রাইব্যুনালগুলোতেও পর্যাপ্ত রুম নেই। রুমের সঙ্কট থাকার কারণে বারান্দায়ও মাঝে মধ্যে কোর্ট বসে। অফিস স্টাফরাও বারান্দায় কাজ চালান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানালেন, একাধিকবার আমাদের চেয়ারম্যান এসব সমস্যার কথা মন্ত্রণালয়কে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এই আদালতের প্রতি মন্ত্রণালয়ের কোনো নজর নেই বললেই চলে।
বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন বেগম ইনকিলাবকে বলেন, আপিল ট্রাইবুনালের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে রেকর্ড রুমের সঙ্কট। এছাড়াও বর্তমানে একজন বিচারক না থাকার কারণে বিচারকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চেয়ারম্যান মন্ত্রণায়লকে জানিয়েছেন। আশা করি অতিদ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।