Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদার টেক্সটাইলের অর্থ পাচার

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রভাব খাটিয়ে রূপালী ব্যাংকের মূলধনের অর্ধেক হাতিয়ে নিয়েছেন সুলতান আহমেদ
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : রূপালী ব্যাংক থেকে ধাপে ধাপে ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করে দিয়েছে মাদার টেক্সটাইল। এই ঋণ ব্যাংকটির মূলধনের অর্ধেকের বেশি। বিপুল অংকের এই ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে জামানত আছে মাত্র ৩১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি, যদিও এটা ব্যাংকের অতিমূল্যায়িত হিসাব।
টেক্সটাইল কোম্পানিটির কাছে ব্যাংকের বর্তমানে ৯২৩ কোটি টাকা পাওনা থাকলেও বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করে ২শ’ কোটি টাকাও তুলতে পারবে না বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির একজন মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বিভিন্ন অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ এসব অর্থ ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়ে কানাডায় পাচার করেছেন। রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভায় উত্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিপুল অংকের ঋণ নিলেও কিস্তির অর্থ পরিশোধ করেন নি সুলতান আহমেদ। এজন্য এই ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় তিন বার রি-সিডিউল করিয়ে নিয়েছেন। ‘চাপ প্রয়োগ করে’ মওকুফ করিয়ে নিয়েছেন সুদের ২শ’ ২২ কোটি টাকা। ঋণের কিস্তি ও সুদ গণনা স্থগিত করিয়ে নিয়েছেন ২০২২ সাল পর্যন্ত। এতে ব্যাংকটি সুদ আয় হারাবে আরও ৬শ’ ৬৬ কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ ৮শ’ ৮৮ কোটি টাকার উপরে।
এদিকে মূল টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন রূপালী ব্যাংকের একজন মহা-ব্যবস্থাপক। নতুন রি-সিডিউল শর্ত অনুযায়ী, ৯ শতাংশ সুদে ২০২৩ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে মাদার টেক্সটাইল। ওই কর্মকর্তা জানান, সুলতান আহমেদের বয়স বর্তমানে ৭৬ বছর। তার হার্টে ৬টি রিং পরানো আছে। তার দুই ছেলের মধ্যে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত; অন্যজন প্রতিবন্ধী। তার আর কোন সন্তান নেই। ২০২৩ সালের পর এই ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া যাবেÑ এর কোন নিশ্চয়তা নেই। আর জামানতের সম্পদ বিক্রি করলে ব্যাংক ১শ’ কোটি টাকাও ফিরে পাবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
রূপালী ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সুলতান আহমেদ ব্যবসায়ে লোকসানের কথা বলে সুদ মওকুফ করিয়ে নিয়েছেন। স্থগিত করিয়ে নিয়েছেন সুদ ও ঋণের কিস্তি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ওই সূত্রগুলো জানায়, তিনি এসব অর্থ কানাডায় পাচার করেছেন। কিন্তু যার একাউন্টে এসব অর্থ পাচার করেছেন তিনি পুরো অর্থ আত্মসাৎ করায় বিপদে পড়ে গেছেন সুলতান আহমেদ। তিনি না পাচার করা অর্থ ভোগ করতে পারছেন, না ঠিকমতো ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন।
রূপালী ব্যাংকের বোর্ডে উত্থাপিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সিঙ্গেল বোরোয়ার লিমিট (একক ঋণসীমা) ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ একটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ব্যাংকটির মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ ভাগ ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী (এমওইউ) সিঙ্গেল বোরোয়ার লিমিট ১৫ শতাংশ। তবে মাদার টেক্সটাইলের ঋণের পরিমাণ ব্যাংকের মূলধনের ৫০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ, ব্যাংকের মূলধনের অর্ধেকের বেশি আটকে গেছে এই গ্রুপটির কাছে।
সামান্য জামানতে ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার, সুদ মওকুফ, সুদ ও কিস্তি স্থগিত প্রসঙ্গে মাদার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, সব কিছু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে। ‘অর্থের বিনিময়ে তিনি এসব অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন’ স্বীকার করে তিনি বলেন, যারা আমার এসব কাজ করে দিয়েছে তারা প্রভাবশালী। তাদের ক্ষমতা আছে বিধায়ই আমার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। “পারলে তাদের বিরুদ্ধে লেখেন। আপনি কিছুই করতে পারবেন না তাদের।”
এ বিষয়ে জানতে রূপালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশীষ চক্রবর্তীর ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদার টেক্সটাইলের অর্থ পাচার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ