পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬) উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলক আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট দেশের প্রথম মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬) পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরা দিয়াবাড়ী মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই রেলপথ পরিচালনার জন্য দৈনিক ব্যয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বিশাল এ ব্যয় শুধু যাত্রী ভাড়া থেকে তোলা সম্ভব নয়। এ জন্য বিকল্প আয় বা ভর্তুকির প্রয়োজন। মেট্রোরেলের ভাড়া এখনও নির্ধারণ বা তার জন্য প্রস্তাব করা হয়নি।
হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে আশপাশের দেশগুলোর মেট্রোরেলের ভাড়া পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি দাবি বেশি ভাড়া হলে অবশ্যই যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। এতে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পানিতে যাবে। সমিতির মহাসচিব বলেন, আমরা রেল সার্ভিসে দেখছি আয় হচ্ছে, কিন্তু লুটপাটও হচ্ছে। মেট্রোরেলেও যেন লুটপাটের কারখানা না হয়।
মেট্রোরেল সূত্রে জানা গেছে, ৬টি বগি নিয়ে মেট্রোরেল ভায়াডাক্টে (মেট্রো লাইন) চলাচল করবে। দিয়াবাড়ি ডিপো থেকে মিরপুরের পল্লবী হয়ে আবার ডিপোয় ফিরে যাবে ট্রেনটি। এর আগে ২১ এপ্রিল এমআরটি ৬-এর প্রথম ট্রেনসেট ঢাকায় পৌঁছায়। প্রথম সেটে ৬টি কোচ ও শিফটিং জিক নিয়ে দুটি বার্জ ঢাকায় পৌঁছায়। পরে ধাপে ধাপে অন্য ট্রেনসেট (বগি) ঢাকায় এসেছে। আরও আনার প্রক্রিয়া চলমান। দেশের প্রথম এই মেট্রোরেলে থাকবে ২৪টি ট্রেনসেট। প্রতিটি ট্রেনসেটের ৬টি করে ১৪৪টি কোচ থাকবে। প্রতিটি ট্রেনসেটে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ২ হাজার ৩০৮ জন। ঘণ্টায় মেট্রোরেল উভয়পাশে যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার। এমআরটি-৬ সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব হতে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে প্রায় শতভাগ। দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি হয়েছে অর্ধেকের বেশি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয়ের মতোই সরকারের এ মেগা প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার খরচও তুলনামূলক বেশি। এই রেলপথ পরিচালনার জন্য দৈনিক ব্যয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। পাশাপাশি মেট্রোর বিশাল নির্মাণ ব্যয়ও রয়েছে। ব্যয়বহুল এই বাহনটিতে দৈনিক এ পরিমাণ অর্থ ওঠানো কঠিন হবে। ফলে শুধু যাত্রী পরিবহন করে মেট্রোরেলের ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে না। এ জন্য ভর্তুকির প্রয়োজন হবে। তবে বিকল্প খাত থেকে আয়ের চিন্তাভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে বিপণিবিতান, হোটেল, স্টেশন প্লাজা, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে এমআরটি লাইন-৬ এর প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের অধীনে ২৮ দশমিক ৬১৭ একর ভ‚মি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) এবং স্টেশন প্লাজা নির্মাণের জন্য এ জমি ব্যবহার করা হবে। রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্বের উত্তরা সেন্টার স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬) ভাড়া এখনও নির্ধারণ বা তার জন্য প্রস্তাব করা হয়নি। কবে নাগাদ চ‚ড়ান্ত হবে তাও জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে মেট্রোরেল চালুর আগে বাস্তবতার ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এতে ভর্তুকিও থাকতে পারে অথবা বিকল্প আয় থেকেও ভর্তুকি মেটানো হতে পারে। আগামী বছরের জুন নাগাদ প্রথম ধাপে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে মেট্রোরেল চালু করা হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মূল ভায়াডাক্টে পরীক্ষামূলক চলাচলও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় স্বপ্নের এ বাহনটির ভাড়া নিয়ে বেশ আগ্রহ সাধারণ যাত্রীদের। আর ব্যয় মেটাতে চিন্তিত ঢাকা ম্যাস চ্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাবেক সচিব এমএএন সিদ্দিক ইনকিলাবকে বলেন, ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ভর্তুকিতে চলালাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়টি কারা নির্ধারণ করবে? এটা তো আমার (মেট্রোরেল) বিষয় না। এটা সরকার নির্ধারণ করবে। আর ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় তাহলে কেন ভর্তুকির প্রশ্ন আসবে? তিনি বলেন, আমাদের আইনে দুইটি বিষয় আছে। প্রথমত, জনগণের সামর্থ্য বা সক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য যে ব্যয় হবে সেটি তুলে আনা। এখন এটা কীভাবে সমন্বয় করবে, সরকারি সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমার পক্ষে কোনও কিছুই বলা সম্ভব না। আর যদি কোনও কারণে সরকার মনে করে ভর্তুকি দিতে হবে, সেটি সরকারের বিষয়। এমডি বলেন, আমাদের যেটা পরিচালনা ব্যয় সেটি সরকারকে জানিয়ে দেবো। আমরা বলবো, পরিচালনা ব্যয় এত হলে মেট্রোরেল নিজের মতো করে চলতে পারবে। সরকার যদি মনে করে সামর্থ্য ও সক্ষমতার জন্য প্রথম দিকে একটু কমিয়ে ভাড়া রাখবো, সে ক্ষেত্রে ওই অর্থটা না আসলে তো মেট্রোরেল চলতে পারবে না। এটা যদি সমন্বয় করা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে আমরা প্রথম থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলতে পারবো।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, দেশে যেসব ট্যাক্সিক্যাব ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামানো হয়েছে সেগুলো জনবান্ধব করা যায়নি বলেই জনমানুষের পরিবহনে পরিণত হয়নি। এ কারণে বাধ্য হয়েই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এখন এখানে আগে বিবেচনা নিতে হবে এই বাহনগুলোকে গণবান্ধব পরিবহনে পরিণত করতে হলে কী ধরনের ভাড়া কার্যকর করা উচিত। এক্ষেত্রে আশপাশের দেশগুলোর মেট্রোরেলের ভাড়া পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা রেলে দেখেছি আয় হচ্ছে, কিন্তু লুটপাটও হচ্ছে। মেট্রোরেলও যেন লুটপাটের কারখানা না হয়। বেশি ভাড়া হলে অবশ্যই যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। এতে করে হাজার কোটি টাকার যে বিনিয়োগ সেটি পানিতে যাবে। এরই মধ্যে আমরা বিআইডবিøউটিএ’র লঞ্চ এবং শুল্ক প্রত্যাহার করে নামানো ট্যাক্সিক্যাবেও দেখেছি। যেগুলো এখন উধাও হয়ে গেছে। যাত্রীবান্ধব না হওয়ায় মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যাত্রী সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেলে তা জনমানুষের বাহনে পরিণত হয় না। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেটি যেন বিবেচনায় নেওয়া হয়। তিনি বাসের ভাড়ার সমপরিমাণ না হলেও যেন তার কাছাকাছি থাকে সে বিষয়ে জোর দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।