পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উজানে অতি বর্ষণে ভারতের ঢল আসছে হু হু করে। সেই সাথে উজানে সব বাঁধ-ব্যারেজ খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে গত বেশ কিছুদিন যাবত তেমন উল্লেখযোগ্য মাঝারি বা ভারী বৃষ্টিপাত নেই। তবে উজানের ঢল-বানের তোড়ে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহ এবং শাখা-প্রশাখা, উপনদীগুলোতে পানি বেড়েই চলেছে। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি হয়ে মোহনা, দক্ষিণের উপক‚লভাগ পর্যন্ত নদ-নদী-খাল-খাঁড়িগুলো উত্তাল। এরফলে সর্বনাশা বন্যা ও নদীভাঙনের আরো বিস্তার ঘটছে। বন্যা-ভাঙন গড়ালো সেপ্টেম্বরে। গতকাল বুধবার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-পদ্মাসহ সাতটি নদ-নদী ১৮টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়।
যমুনা নদে পাউবোর ৯টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের সবক’টিতেই পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহে আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। প্রধান নদ-নদীসমূহে একযোগে বাড়ছে পানি। অন্যান্য নদ-নদীতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে অনেক এলাকায় নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতীরের বাসিন্দাদের বসতভিটা, ফল-ফসলি জমি, ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের ঘুম নেই।
সর্বনাশা বন্যা ও নদীভাঙন কবলিত রংপুর বিভাগ দেশের উত্তর জনপদ, মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি-মোহনা পর্যন্ত লাখো পানিবন্দি মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ সীমাহীন। সেপ্টেম্বর তথা ভাদ্র মাসের শেষ দিক, আশি^নের শুরু পর্যন্ত গড়াচ্ছে চলমান বন্যা ও নদীভাঙন। পাউবোর এক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে আগেই জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বন্যা-ভাঙনের উন্নতি নির্ভর করছে উজানে ভারতে বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি ও ঢলের উপর।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, উত্তর-মধ্যাঞ্চলে জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইল, পাবনা, মধ্য-দক্ষিণে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর জেলার নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। তাছাড়া আরো বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, গ্রাম-জনপদ বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে প্লাবিত হচ্ছে।
দেশের নদ-নদী পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবো জানায়, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, ধরলা, ঘাঘট, ধলেশ^রী, আত্রাই এই ৭টি নদ-নদী ১৮টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫০টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫২টি স্থানে হ্রাস ও ৭টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে।
গত মঙ্গলবার ৫১টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, ৫৩টি স্থানে হ্রাস, ৫টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং ১৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। গত সোমবার ৪৪টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, ৫৬টি স্থানে হ্রাস, ৯টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং এরমধ্যে ৬টি নদ-নদী ১৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।
নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রধান নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদী ভাগ্যক‚ল ও মাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যে পানি আরও বেড়ে গিয়ে গতকাল বিকাল নাগাদ পদ্মা মাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হয়।
প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল বিকাল পর্যন্ত পাউবোর সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, উত্তর জনপদ ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অন্যতম প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপদসীমার ঊর্ধ্বে রয়েছে। তাছাড়া উভয় নদের শাখা-প্রশাখা, উপনদীগুলোতে বাড়ছে পানি। ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের সবক’টিতেই বাড়ছে পানি। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে বিপদসীমার ৪৬ এবং হাতিয়া পয়েন্টে তিন সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুনখাওয়া পয়েন্টে মাত্র ৭ সে.মি. নিচে রয়েছে।
যমুনা নদের ৯টি পয়েন্টেই পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে এবং আরও বৃদ্ধির দিকে রয়েছে। এরমধ্যে ফুলছড়িতে বিপদসীমার ৪১, সাঘাটায় ২২, বাহাদুরাবাদে ৪৬, সারিয়াকান্দিতে ৫৬, কাজীপুরে ৫৪, সিরাজগঞ্জে ৫৩, পোড়াবাড়ীতে ১৭, মথুরায় ১৮, এবং আরিচায় ১৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যতম প্রধান অববাহিকা গঙ্গা-পদ্মার উজানে গঙ্গায় এবং ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা নদী গোয়ালন্দে বিপদসীমার ৫৩ এবং সুরেশ^রে ১৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমা বরাবর এবং ভাগ্যকূলে মাত্র এক সে.মি. নিচে এসেছে।
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ১০ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধায় ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সে.মি. উপর দিয়ে বইছে। উত্তর-মধ্যাঞ্চলে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঘাবাড়ীতে বিপদসীমার ৫০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যাঞ্চলে ধলেশ^রী নদীর পানি বেড়ে টাঙ্গাইল জেলার এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার ৫৮ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। সিংড়ায় গুড় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৪ সে.মি. নিচে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কয়েকদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চর, দ্বীপচরসহ নদ-নদী অববাহিকার নীচু এলাকার এখনো ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার কাঁচা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কুড়িগ্রাম কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, চলমান বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার ৪শ’ ৭ হেক্টর জমির রোপা আমন ও ২শ’ ৭০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত, ১শ’ হেক্টর জমির বীজতলা দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনাসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাইসহ অন্যান্য শাখা নদীগুলোর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, পদ্মা যমুনার অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে পানির তোড়ে এবাব ভয়াল থাবার মুখে পড়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। গত ২৮ আগষ্ট রাতে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের জনগণের একমাত্র চিকিৎসা সেবার অবলম্বন হাতিঘাটা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে নতুন করে হাতিঘাটার জনমনে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার আজিমনগর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত চরাঞ্চল পরিদর্শন করেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন ও হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৫টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে এসব মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতে দেশের তাঁত ও দুগ্ধশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা নদীতে ৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর ও গোহালা নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে শাহজাদপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।