দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন ঃ আসহাবে কাহাফ কি ঘুম থেকে জাগল ৩শ’ বছর পর?
উত্তর : অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিল জালিম বাদশা। নাম তার দাকিয়ানুস। বাদশা ছিল মূর্তিপূজারী, প্রজারাও তাই। সবাই পুতুল তৈরি করে তার পূজা করত। আর মূর্তিপূজারী ছাড়া তারা কাউকে দেখতে পারতো না। একদা এমন কিছু লোকের সন্ধান মিলে যারা প্রতিমা পূজারি নয় কিন্তু হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারী। তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করত। বাদশা দাকিয়ানুস এর কানে এই খবর পৌঁছলে। সে বলল ধরে নিয়ে আসো তাদের আমার রাজ্যে বাস করে অথচ আমার দেবতা কে মানে না, এত বড় সাহস! দেখি তারা কারা। তাঁরা সংখ্যায় ছিল মাত্র সাতজন। তাঁরা ভাবল, সর্বনাশ, বাদশাহ ওর কানে গেছে, আর কি রক্ষা আছে আমাদের? ভয়ে তাঁরা আল্লাহর নাম নিয়ে সেদিনই বেড়িয়ে পড়লেন রাতের আধারে।ঠিক করলেন, জঙ্গল কিংবা কোন পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিবেন। পরে সুযোগমত অন্য দেশে চলে যাবে। চলার পথে দেখলেন, একটি কুকুরও তাদের পিছু নিয়েছে। এ আবার কোন আপদ! যা ভাগ। তারা কুকুরটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু কুকুরটা যায় না। আল্লাহর কি কুদরত! হঠাৎ কুকুরটা কথা বলে উঠলো। বলল, যারা আল্লাহকে ভালবাসে আমিও তাঁদের ভালোবাসি।আপনারা ওই রাক্কীম নামক উপত্যাকার গুহায় নিশ্চিন্তে ঘুমান, আমি পাহারা দিচ্ছি।”তাঁরা তখন ভাবলেন, যে কুকুর কথা বলে, সে তো সামান্য কুকুর নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছেন। নিশ্চিন্তে তারা উপত্যকার গুহায় প্রবেশ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। আর কুকুরটি গুহায় প্রবেশ দ্বারে শুয়ে তাঁদের পাহারা দিতে লাগল। একসময় কুকুরটাও ঘুমিয়ে পড়ল।রাত পেরিয়ে গেল, সকাল হল। কিন্তু আশ্চর্য! না লোকগুলোর ঘুম ভাঙলো না, কুকুরটির এভাবে দিন গেল সপ্তাহ গেল, মাস গেল, বছর গেল, শতাব্দি গেল কিন্তু তাঁরা সেখানে ঘুমিয়ে আছেন তো আছেনই, ভুল করে কেউ যদি সেই পাহাড়ের কাছে যেত, অদ্ভুত কোন জীব মনে করে ভয়ে দৌড়ে পালাতো। অবশেষে একদিন সত্যিই তাদের ঘুম ভাঙল।
সুপ্রিয় পাঠক! কতদিন পরে জানেন? তিন শতাব্দি পরে। যখন তাঁদের ঘুম ভাঙল তখন যোহরের সময়। একে অপরকে সালাম করে নামাজের জন্য দন্ডায়মান হলেন নামাজ শেষে পরস্পর বলাবলি করেন, আমরা কতক্ষণ ঘুমিয়েছি ভাই? একজন বললেন, একদিন, আরেকজন বললেন দেড় দিন, অন্যজন বলল না, না দু দিন। তারপর যখন নিজেদের শরীরের দিকে নজর পড়ল, তখন দেখে আজব কান্ড। হাত পায়ের নখ হয়েছে অনেক লম্বা, মাথার চুল পড়েছে কোমরে এবং দাড়ি-গোঁফ ঝুলছে হাঁটু পর্যন্ত। তখন একজন বলে উঠল, আল্লাহ জানেন আমরা কতদিন ঘুমিয়েছি একজন বলল, বড্ড খিদে পেয়েছে। ভাই টাকা দাও, শহরে গিয়ে কিছু খাবার নিয়ে আসি। টাকা দিয়ে তারা বললেন, সাবধানে যেও। বাদশাহর লোকের শকুনের চোখ। দেখলেই ধরে নিয়ে যাবে। তখন হয় ধর্ম যাবে, নয় প্রাণ।
বন্ধুগণ! তারপর কি হয়েছে জানো! খাবার কিনে লোকটা যখন টাকা দিচ্ছেন, তখন দোকানদার বলল, তুমি এই টাকা কোথায় পেয়েছ? এ টাকায় তো বাদশা দাকিয়ানুসের নাম খোদাই আছে, নিশ্চয়ই তুমি কোন গুপ্তধন পেয়েছো। একথা বলে দোকানদার তাকে বাদশাহর দরবারে নিয়ে গেল। তখন আগের অত্যাচারী বাদশাহ নেই।রাজ্য পরিচালনার ন্যায়পরায়ন বাদশাহ। ওই বাদশাহ বায়দরুস তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে? আর এই টাকা কোথায় পেয়েছেন? তখন লোকটি বাদশাহর নিকট সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। বললেন, আজই আমাদের ঘুম ভেঙ্গেছে। আমার বাকি ছয় সঙ্গী গুহায় আছে। চলুন! তাদের সাক্ষাৎ করে দিই। ওই গুহার নিকট গেলেন এবং সকলে আলিঙ্গন করলেন। তারা বললেন, আমরা আপনাকে আল্লাহর কাছে সোর্পদ করলাম, আল্লাহ আপনাকে ও আপনার রাজ্যকে রক্ষা করুন। আর জ্বিন ও মানব জাতির অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন।”বাদশাহ দন্ডায়মান রইলেন আর এ ৭ জন আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাদের নিদ্রাস্থলে ফিরে গেলেন এবং পুনরায় নিদ্রায় নগ্ন হলেন। এই অবস্থায় আল্লাহ তাঁদের ওফাত দিলেন। বাদশাহ তখন সেখানে তাঁদের সাতজনের চারদিকে গিরে স্মৃতি সৌধ তৈরি করে দিলেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন। আরেকটি খুশির দিন নির্ধারণ করলেন, যেন প্রত্যেকে সেদিন সেখানে উপস্থিত হয়। বন্ধুরা! এরা কারা জান? এদেরকে বলা হয় আসহাবে কাহাফ”। [তথ্যসূত্র: সূরা কাহাফ,আয়াত:৯-২৬;তাফসীরে ইবনে কাসীর;তাবারী]
উত্তর দিচ্ছেন : প্রভাষক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম আরবি প্রভাষক,রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা,রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।