Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা

পাহাড়-ঝর্নার মায়াবি রূপের আঁধার খাগড়াছড়ি

মো: ইব্রাহিম শেখ খাগড়াছড়ি থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

অসংখ্য ঝর্না আর বুনো পাহাড় মিলিয়ে এক জানা-অজানা রহস্যের নাম খাগড়াছড়ি। পার্বত্য এ জেলাকে প্রকৃতি অকৃপণভাবে সাজিয়েছে। এখানে রয়েছে আকাশ-পাহাড়ের মিতালী, চেঙ্গী ও মাইনী উপত্যকার বিস্তীর্ণ সমতল ভ‚ভাগ ও উপজাতীয় সংস্কৃতি বৈচিত্র্যপূর্ণ নানন্দনিকতা। মহালছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড়, লক্ষীছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা যেদিকেই চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্না, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝর্না, বিডিআর স্মৃতিসৌধ, মায়াবিনী লেক, জেলা পরিষদ পার্ক ও শান্তিপুর অরণ্য কুঠির। এ ছাড়া রাঙামাটি জেলার সাজেকেও খাগড়াছড়ি-দিঘিনালা হয়ে সহজে যাওয়া যায়।

দীর্ঘ সাড়ে চার মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগস্ট থেকে খুলেছে খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্র। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাহাড়ি এ জনপদে আসতে শুরু করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে পর্যটন মৌসুম না হওয়ায় এখন পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা কম। ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশাবাদী পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে যেন মায়াবী হাতছানি। পর্যটন মৌসুম ছাড়াও এ এলাকায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ঘুরে বেড়ান সারা বছর। পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্না, লেক, নদী আর পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে আনন্দের পাশাপাশি অপরূপ প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করে পর্যটকরা মুগ্ধ।
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্না, হর্টিকালচার সেন্টার ও মায়াবিনী লেকসহ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র সরকারি ঘোষণার পরপরই প্রস্তুতিসম্পন্ন করে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধের পর পর্যটকবাহী পরিবহনগুলোর চালক-শ্রমিকদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়।
ঢাকা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, করোনার কারণে আমরা দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ছিলাম। পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে এখানে চলে এলাম। আলুটিলার সুরঙ্গ দেখে উচ্ছ্বাসিত এ পর্যটক বলেন, অনেকদিন পরে হলেও ঘর থেকে বের হয়ে স্বস্তি পেলাম। আর খাগড়া ছড়ির অপরূপ সৌন্দর্য সত্যি মুগ্ধ করে। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে।
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের কফি হাউস ও জুস কর্নারের ব্যবস্থাপক মো. সাদেকুর রহমান বলেন, পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার পর প্রথম দিনে পর্যটকদের উপস্থিতি কম ছিল। তবে ধীরে ধীরে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়ছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় আমরা খুশি।
খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে তত্ত্বাবধায়ক চন্দ্রকিরণ ত্রিপুরা জানান, করোনার প্রভাবে হোঁচট খায় পাহাড়ের পর্যটন শিল্প। এতে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এ খাত। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার পরও এখন পর্যটকদের উপস্থিতি কম। কারণ এখন বর্ষা-বাদল চলছে। আশা করছি ধীরে ধীরে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে এবং কিছুদিন পর মৌসুম শুরু হলে পর্যটকদের আগমনে খাগড়াছড়ি মুখর হয়ে উঠবে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, খাগড়াছড়ির পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় এ খাতের উপর নির্ভরশীল হাজারও মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের পদচারণা না থাকায় প্রকৃতি তার রূপের পসরা সাজিয়ে রেখেছে। এবার ভ্রমণপিপাসুরা খাগড়াছড়ি ভ্রমণ করে প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, এই ঈদে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের ব্যবসা ভালো হওয়ার একটা আশা ছিল। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেলগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। তাদের আশা এবার পর্যটকদের আগমনে খাগড়াছড়ি আবার মুখর হয়ে উঠবে।
খাগড়াছড়িতে পর্যটক কম হলেও কমতি নেই নিরাপত্তায়। পর্যটকদের সুবিধার্থে সবধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটন স্পটগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে, পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মাস্ক না পরলে কাউকে পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্রমণপিপাসু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ