পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নানান প্রস্তাব নিয়ে ঢাকা সফরে আসছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে এক নম্বর হতে চায় চীন। অন্যদিকে বাংলাদেশ চায় চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য। আর এ লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতেই নিরলস পরিশ্রম করছে দু’দেশের সরকার সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন চীনা প্রেসিডেন্টের আসন্ন বাংলাদেশ সফর দু’দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।
চীনের সাথে সম্পর্ককে বাংলাদেশ বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। আর এজন্যই চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের পুর্বে গত এক বছর যাবত দু’দেশের মাঝে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর সফর বিনিময় হয়েছে। এমনকি চলতি বছরের প্রথমার্ধে তাইওয়ানের ত্রাণও ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।
জানা গেছে, গত এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড তাইওয়ানিজ চেম্বার অব কমার্স প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের জন্য ত্রাণ হিসেবে ১০০ মেট্রিক টন চাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে ত্রাণবাহী ওই জাহাজকে বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়নি।
কারণ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ‘ওয়ান চায়না’ নীতিতে বিশ্বাস করে এবং ভবিষ্যতেও এই নীতি অনুসরণ করা হবে। এছাড়া চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। সরকার সামরিক সরঞ্জামের একটি বড় অংশ চীন থেকে সংগ্রহ করে। এছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় প্রকল্প যেমন পদ্মা ব্রিজ এবং চার-লেন চিটাগাং হাইওয়ে চীনের সহায়তায় তৈরি হচ্ছে। কর্ণফুলি টানেল ও চীনের শিল্প জোনের কাজ চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে হচ্ছে এবং সামনে কৃষি ও অবকাঠামো খাতে আরও সহযোগিতা বাড়বে।
শুধু তাই নয়, প্রাচীন সিল্ক রুট পুনরুত্থানের জন্য চীনের প্রস্তাবিত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগ অভিনব ও বাস্তবসম্মত এবং বাংলাদেশ এর থেকে অনেক উপকৃত হবে।
প্রসঙ্গত, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড হচ্ছে চীনের একটি বৃহৎ উদ্যোগ যার মাধ্যমে সড়ক ও সমুদ্রপথে গোটা এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে।
গত রোববার বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে কৌশলগত অগ্রাধিকার ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সময়ও চীনের বিষয়টি উঠে আসে। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীন ও দক্ষিণ চীন সমুদ্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বাংলাদেশকে জানানো হয় এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশও জানায় এ বিষয়ে ঢাকার সুস্পষ্ট অবস্থান আছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগী দেশ এবং দক্ষিণ চীন সমুদ্র বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে, ঢাকা এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।
চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর নিয়ে দুদেশের মাঝে উচ্চ পর্যায়ের বেশ কিছু সফরও বিনিময় হয়। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুসহ একাধিক উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী চীন সফর করেন। তেমনি চীনের পক্ষ থেকেও ঢাকায় সফর বিনিময় হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম বলেন, চীন বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ মনে করে। চীন বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বেশি সাহায্য করেছে। যে কোনও ব্যবসার ভালো খারাপ দুটি দিক আছে। তবে চীনের সঙ্গে ভালোর পরিমান বেশি। তারা বাংলাদেশে অনেক অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ করছে। আমরা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের গর্বিত উদ্যোক্তা অংশীদার। চীন ওয়ান বেল্ট উদ্যোগ নিয়েছে, যখন এটা আরও পরিষ্কার হবে তখন বাংলাদেশ এ থেকে সুবিধা পেতে নিজস্ব অবস্থান নেবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংচিয়াং বলেছেন, চীন বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহী। এমনকি বাংলাদেশের পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে তাদের কোনও আপত্তি নেই। তিনি আরো বলেন, সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে দুটি চীনা কোম্পানি আগ্রহ দেখালেও পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে চীনের কয়েকটি কোম্পানির আগ্রহ রয়েছে।
এর আগে সরকার আগে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করলেও এখন পটুয়াখালীর পায়রাতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে চীনের অর্থায়নে ৭টি মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আর অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণে বাংলাদেশকে প্রায় পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা/৩শ’ মিলিয়ন আরএমবি ইউয়ান) সহায়তা দেবে চীন। এ সেতুটি বরিশাল-ঝালকাঠী-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা সড়কে কঁচা নদীর চরখালী ফেরিঘাটে নির্মাণ করা হবে। এক হাজার চারশ’ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি হবে। এটি বরিশালের সাথে পিরোজপুর, বরগুনা, খুলনা অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করবে। এছাড়া এ সেতু মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে বরিশালের যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে যা এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও দেশের তিন জেলায় আরো তিনটি সেতু নির্মাণ হবে চীন সরকারের অনুদানে। জেলাগুলো হলো- পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও খুলনা। স্বাক্ষরিত এমওএম অনুযায়ী সেতু ৩টি নির্মিত হবে পটুয়াখালী জেলার দুমকি ও বাউফল উপজেলার লোহালিয়া নদীর ওপর ‘বগা সেতু’ বা নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মংলা নদীর ওপর ‘মংলা সেতু’ বা দশম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু এবং খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার ঝপঝপিয়া নদীর ওপর ‘ঝপঝপিয়া সেতু’ বা এগারতম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। ২০১৬ সালে সেতু তিনটির কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালে শেষ হবে। সেতু তিনটি নির্মিত হবে চীন সরকারের অনুদানে।
তবে চীনের বাজারে পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। কারণ চীনের সাথে বাংলাদেশের বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এফবিসিসিআই সুত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চীনে ৭৯১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে চীন থেকে ৮ হাজার ২২৩ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়।
এ হিসাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। আর তাই বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিপুল অংকের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি চীনের প্রস্তাব এবং দুই দেশের মধ্যে যে বাণিজ্য বৈষম্য রয়েছে তার মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য তারা এ প্রস্তাব করেছে।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বলেন, কৌশলগত কারণে চীনের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। চীনের প্রেসিডেন্টের আসন্ন সফরের মাধ্যমে দু’দেশের নেতৃত্ব আরও ঘনিষ্ঠ হবে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।
সাবেক এই কূটনীতিকের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনের অবদানের কারণে ঢাকার কাছে বেইজিং গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, চীনের সক্ষমতা ও আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার।
উল্লেখ্য, শি জিনপিং হচ্ছেন চীনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, যিনি বাংলাদেশ সফর করছেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে চীনের আরেক রাষ্ট্রপতি লি শিয়ানিয়ান ঢাকা সফর করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।