Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাই না

প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.কে.এম ফজলুর রহমান মুন্সী
ইমাম হুসাইন (রা.) এর দূতকে হত্যার দৃঢ় সংকল্প করে যিয়াদ
কারবালা বার্ষিকীর কথা যখনই হৃদয়ের কোনে উকি মারে তখনই একটা অপচ্ছায়া মানসপটে উদীত হয়। সেই অপচ্ছায়া আর কেউ নয়, সে হলো ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদি। ইতিহাসের পাতায় সে ইবনে যিয়াদ নামে খ্যাত। সাইয়্যেদেনা ইমাম হুসাইন (রা.) এর কুফা যাত্রার পূর্বে ইবনে যিয়াদ স্বীয় ভ্রাতা ওসমানকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দান করে বসরার শানসভার তার ওপর ন্যস্ত করলো এবং নিজে কুফায় গমন করলো।
কে জানতো কুফাই হচ্ছে এজিদের ঘোরবিরোধী এলাকা। এখানে জনবল ও অস্ত্রবল প্রচুর। মক্কা ও মদিনার পরোয়া নেই। কারণ সেখানে আত্মরক্ষার উপযোগী জনবল ও অস্ত্রবল আদৌ নেই। এজন্য কুফাকে বশে আনতে পারলে উমাইয়া শাসনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সহজ হবে এবং নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভ করা যাবে। এরজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ পূর্বেই সে এজিদের কাছে থেকে পেয়েছিল। ইবনে যিয়াদ কুফায় আগমন করার পর ইমাম হুসাইন (রা.) এর দূত মুসলিম বিন আকিলকে ছলে বলে কৌশলে হত্যা করার দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করলো। সে মনে করলো মুসলিমকে হত্যা করলেই কুফার জনগণ ইমাম হুসাইন (রা.) এর প্রতি প্রদত্ত সমর্থনকে ভুলে যাবে এবং ইবনে যিয়াদের নির্দেশ পালনে বাধ্য হবে। এজন্য সে মুসলিম বিন আকিলকে গ্রেফতার করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেল। মুসলিম বিন আকিল তা অনুমান করতে পেরে ‘ইবনে হানীর’ বাড়িতে আশ্রয়গ্রহণ করলেন।
এদিকে, ইবনে যিয়াদ এক সাধারণ সভার আয়োজন করে ঘোষণা করল-হে কুফার আধিবাসীবৃন্দ! তোমরা যদি এজিদ বিন মুয়াবিয়ার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করো, কিংবা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুসলিম বিন আকিল ও ইমাম হোসাইন (রা.)কে সমর্থন করো তবে তোমাদের কারো নিস্তার মিলবে না। আমি এ ধরনের কাউকে ক্ষমা করবো না। তোমরা যদি নিজেদের সর্বনাশের প্রত্যাশী হও, তাহলে আমার আর করার কিছুই থাকবে না। জেনে রেখো, শানিত তরবারী বিদ্রোহীদের রক্তাপাতে সর্বদা উন্মুক্ত হয়ে আছে। চেয়ে দেখ, বসরার প্রতি মিসরের প্রতি সর্বত্রই এজিদের আনুগত্য বিদ্যমান। মক্কা ও মদিনার জন্য কোন পরোয়া নেই। সেখানে ভক্তি আছে কিন্তু শক্তির লেশমাত্রও নেই। এতকিছু জেনে শুনেও তোমরা কেন অকারণে মৃত্যুর দিকে নিজেদের ঠেলে দেবে? কেন রাজরোষে নিপতিত হয়ে আগুনে আত্মাহূতি দেবে? তোমরা কি কিছুই বুঝ না? ইবনে যিয়াদের ভাষণের ফলে কুফাবাসীদের এক বৃহৎ অংশ নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করে ফেললো। তারা নিমিষে হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) এর প্রতি আনুগত্য প্রদানের কথা ভুলে গেল। এভাবে নেমক-হারাম, মোনাফেক কুফীদের স্বরূপ আস্তে আস্তে প্রকাশ পেতে লাগলো।
সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাবৃন্দ! আহলে বাইতের প্রতি, ইমাম বংশের প্রতি কঠোর শত্রুতা পোষণকারী ও নিষ্ঠুর হত্যাকারী ওবায়দুল্লাহর যোগসাজশে কারবালায় যে হৃদয়বিদারক হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছিল কে এই ইবনে যিয়াদ? কেন তার এতো আকর্ষণ ছিল এজিদের প্রতি? কেন সে এজিদের স্বপক্ষে এতবড় জঘন্য অপরাধ করতে উদ্যত হয়েছিল? আসুন, আমরা তার স্বরূপ নির্ণয় করি। তার পরিচয় জেনে নেই।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, আবু সুফিয়ানের দুইপুত্র ছিল। একজন বৈধ পুত্র ‘মুয়াবিয়া’ এবং অপরজন জারজ সন্তান ‘যিয়াদ’। ইসলামে আগমনের পূর্বে আবু সুফিয়ান আরবের কোন এক লোকের ক্রীতদাসীর সাথে ব্যাভিচার করেছিল। এই ব্যাভিচারের ফলে যিয়াদের জন্ম হয়। যেহেতু ক্রীতদাসীটি অন্যের ছিল, তাই দীর্ঘকাল পর্যন্ত যিয়াদকে নিজের পুত্র বলে আবু সুফিয়ান স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু যিয়াদের বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা ও সাংগঠনিক কর্মক্ষমতা দেখে আবু সুফিয়ান তাকে পুত্র বলে গ্রহণ করে এবং নিজের ঘরে তুলে নেয়। অপরদিকে, মুয়াবিয়াও প্রথম যিয়াদকে ভাই বলে স্বীকার করতে রাজি ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য যিয়াদকে সে নিজের ভাইরূপে গ্রহণ করেছিল। মুয়াবিয়ার পুত্র এজিদ যিয়াদের ছেলে ওবায়দুল্লাহকে বসরা ও কুফার গভর্নর নিযুক্ত করেছিল। এই সেই ইবনে যিয়াদ যার আগমন ঘটেছিল অবৈধ পিতার ঔরস হতে যার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল অগণিত নিরপরাধ লোক। যার ইঙ্গিতে কারবালার হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছিল। তার এ সকল বর্বরতার জন্য চিরকাল সে মানুষের অভিশাপ কুড়াতে থাকবে এবং ধিকৃত হতে থাকবে। এতে কোনই সন্দেহ নেই ও দ্বিধা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাই না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ