Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার সংগ্রামী মানুষগুলোকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল

হান্নান শাহর স্মরণে বিএনপির সভা

প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ যারাই গণতন্ত্রের কথা বলছে, তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসছে। এই সরকার নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী মানুষগুলোকে এক এক করে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। তারই জ্বলন্ত প্রমাণ আ স ম হান্নান শাহের চলে যাওয়া। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক শোকসভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি এই শোকসভার আয়োজন করে। শোকসভায় নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে র‌্যাফেলস হার্ট সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তিনি (হান্নান শাহ) সরকারের নির্যাতনের একটি মিথ্যা মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য আদালতে যাওয়ার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তিনি বিদেশ থেকে লাশ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।
হান্নান শাহের বর্ণাঢ্য জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা এই মানুষটি সোজাসাপটা কথা বলতেন। সম্ভবত সৈনিকদের বৈশিষ্ট্য যে তারা আমাদের রাজনীতিবিদদের মতো এত ঘুরিয়েফিরিয়ে কথা বলেন না। যা মনে করে, যা বলতে চান, তা সোজাভাবে বলেন, সেটাই জনগণের কাছে সরাসরি চলে যায়।
তার চলে যাওয়ায় বিএনপি, দেশপ্রেমিক মানুষ এবং দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হান্নান শাহকে আমরা ফিরে পাব না। তবে তার আদর্শ, তার প্রদর্শিত পথ, সেই পথে যদি আমরা চলতে পারি, তাহলে তার যে লক্ষ্য ছিল দেশে গণতন্ত্রকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা, অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্ত করা ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়াÑ সেই কাজগুলো তিনি শেষ করতে পারেননি, সে কাজগুলো আমরা শেষ করতে পারব। তাহলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, হান্নান শাহ তার রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যে কিছু মৌলিক কাজ করে গেছেন। তিনি বাউল দল গঠন করেছিলেন। এই বাউলরা গ্রামে-গঞ্জে গান গায়, বিভিন্ন কথা বলে। বিভিন্ন কথার মধ্যে তারা ভগবানের কথা বলে, ঈশ্বরের কথা বলে, আল্লাহর কথা বলে এবং বিভিন্ন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একটা তারা ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে যায়। আরেকটি কাজ তিনি করেছেন, বাংলাদেশে যে ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠী আছে, গারো, শাওতাল, ওরাও, মারমা ইত্যাদি ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। এদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংগঠন আছে, সংগঠিত হচ্ছে। পেশাদার এই সামরিক কর্মকর্তা প্রাক্তন সৈনিক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার কথাও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
পঞ্চগড়ের সাবেক এমপি মোজাহার হোসেনের ইন্তেকালেও গভীর শোক প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মরহুম নেতা হান্নান শাহর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি (হান্নান শাহ) আপাদমস্তক একশ ভাগ দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন। আমরা জাতীয়তাবাদী একটি স্তম্ভ¢কে হারিয়েছি, একজন জাতীয়তাবাদী নেতাকে হারিয়েছি। তার ইন্তেকালে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, এ ক্ষতি পোষানো অত্যন্ত কঠিন।
১/১১-এর সময়ের হান্নান শাহের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই সময়ে সারাদেশে মানুষ তার সাহসী ভূমিকা সম্পর্কে অবগত আছেন। তৎকালীন ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনি সাহসের সাথে কথা বলেছিলেন। এজন্য বারবার তিনি কারাগারে গেছেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে কথা বলেছেন, আবার কারাগারে গেছেন। দলের দুঃসময়ে তার কণ্ঠকে কেউ বন্ধ করে রাখতে পারেনি।
কেবল তাই নয়, একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারী বিনাভোটের সরকারের বিরুদ্ধেও হান্নান শাহ সোচ্চার ছিলেন। তিনি অনেক অপ্রিয় সত্য কথা সাহসের সাথে বলেছেন। আমরা তাকে হারিয়ে মনে করছি, বিএনপি এমন একজন নেতাকে হারালো, তার স্থান পূরণ করা কঠিন হবে।
স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আ স ম হান্নান শাহ সময়ের সাহসী পুরুষ। তিনি শুধু সৈনিক ছিলেন না, তিনি বিএনপির সেনাপতি ছিলেন। কখনো নিজের জীবনের পরোয়া করেননি, বরং দেশপ্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এমনকি বিএনপির ক্রান্তিকালে সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিএনপির আদর্শ প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার পাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। যেটা সত্য, সঠিক বলে মনে করতেন, সেটাই সবার সামনে প্রকাশ করতেন।
তিনি বলেন, বিএনপির এই কঠিন সময়ে হান্নান শাহর উপস্থিতি বড় প্রয়োজন ছিল। হান্নান শাহর ইন্তেকালে দল ও জাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়।
দলের নীতিনির্ধারকদের অন্যতম নজরুল ইসলাম খান বলেন, হান্নান শাহর ইন্তেকালে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বলতে শুনেছি তারা তাদের প্রিয় মানুষটাকে হারালেন। আওয়ামী লীগের লোক এমনকি প্রশাসনের লোকেরাও এসেছেন হান্নান শাহর নামাজে জানাজায়।
তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহে নয়, দলের দুঃসময়ে তিনি এগিয়ে এসেছেন নির্ভয়ে। বড় দুঃসময়ে চলে গেলেন লড়াকু এই নেতা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে খালেদা জিয়ার পাশে তার থাকার প্রয়োজন ছিল।
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ১/১১ সরকারের সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে মরহুম বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ বলেছিলেন, ‘আমরা আছি, বিএনপি আছে এবং থাকবে।’ কারণ তিনি (হান্নান শাহ) কারো কাছে মাথা নত করার লোক ছিলেন না। তাই মরহুম নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে দেশে একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি স্বাধীন-সার্বভৌম নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে বিজয় অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, হান্নান শাহ আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠা এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশ খুঁজে বের করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আনোয়ার হোসেইন, আব্দুস সালাম আজাদ, মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতানা আহমেদ, রাজীব আহসান, রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ। শোকসভাটি সঞ্চালনা করেন দলের সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম আলীম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার সংগ্রামী মানুষগুলোকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ