Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগে সুবাতাস

প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৩ পিএম, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের ও সোহাগ খান : সুবাতাস বইছে দেশের বিনিয়োগে। সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-ে বিপুল বিনিয়োগের পাশাপাশি সমান তালে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের বেসরকারি খাতও। বর্তমান সময়কে বিনিয়োগের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বিবেচনা করেই মাঠে নেমে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত কয়েক বছর যারা বিনিয়োগে আসতে সাহস পাননি তারাও কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছেন। বর্তমানে একদিকে সুদের হার কম, এর উপর ব্যাংকগুলোর হাতে রয়েছে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ। অন্যদিকে চাইলেই শিল্পে পাওয়া যাচ্ছে নতুন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। পাশাপাশি শিল্পে সরকারের নানা প্রণোদনা তো রয়েছেই। এসব কারণে বর্তমান সময়কে নতুন বিনিয়োগের জন্য গত প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করেছেন উদ্যোক্তারা। এই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিয়ে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার আশা করছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
বর্তমানে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেছেন, দেশে বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট নেই। অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এতে উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। যার ইতিবাচক প্রভাব বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধিতে পড়তে শুরু করেছে।
পরিসংখ্যানও বলছে, দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ভালো গতি এসেছে। সেপ্টেম্বর শেষে দেশে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। অথচ গতবছর এই হার ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশের আশোপাশে। এ বছরের জুনেও এই হার ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অবশ্য তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে বর্তমানে ঋণ প্রদান বন্ধ থাকায় এই হার আশানুরূপ বাড়েনি। জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপির ভারে ন্যুব্জ সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক শুধু ঋণের অর্থ আদায় করবে। আগামী জানুয়ারি থেকে আবার ঋণ দেয়া শুরু করবে ব্যাংকগুলো। তখন বেসরকারি বিনিয়োগে আরও গতি আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হিসাবেও দেশের সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতির ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশে মোট বেসরকারি বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ২০ ভাগ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশা জাগিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। এই খাতে প্রস্তাব বেশি এসেছে সাড়ে ৪ গুণ।
বিদেশি বিনিয়োগের এই গতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এফডিআই বাড়ার মূল কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে কোনো হরতাল-অবরোধ নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহেরও উন্নতি হয়েছে। রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। এছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তুলেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমান বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুবিধা মরিয়া হয়ে গ্রহণ করছেন উদ্যোক্তারা। যারা এতদিন নতুন বিনিয়োগ থেকে হাত গুটিয়ে ছিলেন তারাও শিল্পের নতুন নতুন ইউনিট করছেন।
নারায়ণগঞ্জের অবন্তী কালার টেক্সটাইল লিমিটেড গত ছয় মাসে ব্যাংক এবং নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৩০ কোটি টাকা নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন। যার ফলে নারায়নগঞ্জের বিসিকে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২শ’ লোকের। নতুন অর্থায়নে সম্পূর্ণ পরিবেশ-বান্ধব কারখানা করেছেন তিনি।
নরসিংদীর জজ ভূঞা গ্রুপ ২০১৬ সালে এ পর্যন্ত নিজস্ব তহবিল থেকে নতুন বিনিয়োগ করেছে ১০০ কোটি টাকা। যার ফলে তার গ্রুপে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় দেড় হাজার লোকের। আগামী তিন মাসে নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ১শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে বৃহৎ এই শিল্প গ্রুপটির। এছাড়াও গ্রুপটি একটি পরিবেশ বান্ধব ইটিপি কারাখানা বসিয়েছে। যার শোধন ক্ষমতা ঘণ্টায় ৩৫ হাজার ঘন মিটার। যা দেশের মাঝে সর্ববৃহৎ ইটিপি বলে জানা গেছে।
মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে অবস্থিত ডলি গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন জানান, গত ছয় মাসে তিনি নিটিং, ডায়িং এবং অটোব্রিকসÑ এই তিন খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ করেছেন যাতে প্রায় ২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের জন্য এখনই সর্বোৎকৃষ্ট সময়। জমির দাম কম, খুব সহজে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মোট কথা বর্তমান সরকার একটি বিনিয়োগ-বান্ধব সরকার।
এদিকে ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবছর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় আকারের বিনিয়োগ করেছে।
রূপালী ব্যাংকের অর্থায়নে গাজীপুরে চালু হয়েছে হাজী পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ, যাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ ৪৫ কোটি এবং উদ্যোক্তার বিনিয়োগ ৫৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিকের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। গত ছয় মাসে অগ্রণী ব্যাংকের অর্থায়নে রূপা গ্রুপ বিনিয়োগ করেছে ৫৫০ কোটি টাকা যাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে দেড় হাজার লোকের। জনতা ব্যাংকের অর্থায়নে থার্মেক্স গ্রুপ বিনিয়োগ বাড়িয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা যাতেও কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় হাজার প্রান্তিক জনগণের। কয়েকটি ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে (৩শ’ কোটি টাকা) হবিগঞ্জে স্থাপিত হয়েছে স্টার সিরামিকস নামক একটি বৃহৎ শিল্প কারখানা যা ঐ অঞ্চলের লোকদের জীবনযাত্রার মানই পাল্টে দিয়েছে।
নতুন বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জজ ভূঞা গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফয়জুর রহমান ভূঞা (জুয়েল) বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে আমরা ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি সুখে আছি। যদিও মাঝখানে বিএনপি-জামাতের আগুনের খেলায় বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্থবির হয়েছিল। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার শক্ত অবস্থানের কারণে পূর্বের সকল সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ অতিমাত্রায় ভাল। যার ফলে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। হরতাল-অবরোধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে বিনিয়োগ করতে ব্যবসায়ীরা ভয় পান না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Jahid ৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:১৯ এএম says : 0
    it is a very good news for us
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগে সুবাতাস

৪ অক্টোবর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ