পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন শিশুই যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ১৬ কোটি মানুষের খাবার আমরা নিশ্চিত করছি সেখানে আমার শিশুরা কেন না খেতে পেয়ে কষ্ট পাবে? আমরা প্রত্যেকটা মানুষেরই খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই।
বেড়ে ওঠার পথে শিশুদের যাতে বৈষম্যের শিকার হতে না হয়, সেভাবেই সমাজকে গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন আমরা চাই, আমাদের দেশে ধনী, দরিদ্র, প্রতিবন্ধীÑ যে শিশুই হোক, সকলের যেন সমান অধিকার থাকে। কোনো বৈষম্য যেন না থাকে।
গতকাল সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘থাকবে শিশু সবার মাঝে ভালো, দেশ-সমাজ, পরিবারে জ্বলবে আশার আলো’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৬ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমাদের শিশুরাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ, তাদেরকে আমাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। পারিবারিক, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই তাদের যে মেধা তা বিকাশের যেন সুযোগ থাকে, সেই সুযোগটা আমাদের সৃষ্টি করতে হবে।
আপনাদের আশপাশে যারা দরিদ্র শিশু; সেই শিশুটি কেমন আছে, সে লেখাপড়া করতে পারছে কি না, পোশাক আছে কি না বা পেট ভরে খেতে পারছে কি না- যারা বিত্তবান তারা দয়া করে এই শিশুদের দিকে নজর দেবেন, সেটাই আমি আহ্বান জানাব।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ দরিদ্র হয়ে জন্মায় না। ‘ভাগ্যচক্রে’ কারও দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলে তাকে দারিদ্র্য মোকাবিলা করতে হয়; ধনীর ঘরে জন্মালে তা হয় না।কাজেই এই ব্যবধানটা যেন শিশুদের মধ্যে কোনোমতে না দেখা দেয়। প্রতিটা শিশু তার অধিকার যেন নিশ্চিতভাবে পায়- সেটা সকলে দেখবেন, এটা আমি আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চাইতেন এদেশের কোন মানুষ আর দরিদ্র থাকবে না। কোন শিশুই মায়ের কোলে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে না। প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবনের অধিকার পাবে। কাজেই তাঁর সেই আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চাইতেন এদেশের কোন মানুষ আর আর দরিদ্র থাকবে না। কোন শিশুই মায়ের কোলে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে না। প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবনের অধিকার পাবে। কাজেই তাঁর সেই আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে আমরা আরো সুন্দর করে গড়ে তুলবো। আমাদের বর্তমানকে আমরা উৎসর্গ করবো আমাদের শিশুদের সুন্দর আগামীর জন্য। নিরাপদ ও সুন্দর জীবন যেন তারা পায়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এডুয়ার্ড বেইগবেডার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম।কোমলমতি শিশুদের পক্ষে শিশু বিকাশ কেন্দ্র গাজীপুর এবং আজিমপুরের দুই শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার মীম ও মুজিবুর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিশুরা জাতি গঠনের মূল ভিত্তি, তারাই আগামীর ভবিষ্যত। সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিবে আজকের শিশুরা। বিশ্ব পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। তাই শিশুদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলা; পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমান অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বৈষম্যহীন শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুর খুব অল্প সময় মাত্র সাড়ে তিন বছরে আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেও শিশুদের বিষয়টি বাদ পড়েনি। তিনি শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে শিশু আইন করেন। তখনও জাতিসংঘ শিশু অধিকার আইন করেনি, তারা করেছে ১৯৮৯ সালে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের জন্য রাষ্ট্রকে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। সংবিধান, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং জাতির পিতা প্রণীত শিশু আইন অনুযায়ী শিশুদের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের শিশুরা যেনো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বইয়ের বোঝা বইতে যেন না হয় সে জন্য আমরা ই-বুক করে দেব। বাচ্চারা ট্যাব নিয়ে স্কুলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। কোনো ছেলে-মেয়ে যেনো স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমাদের সরকার বই কেনার ঝামেলা নিয়ে নিয়েছে, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছে। হাওর এলাকা, পাহাড়ি এলাকায় শিশুদের দূর থেকে স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। তাই আবাসিক স্কুল করে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে শিশুদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা, প্রতিটি বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন ও শ্রমজীবী কিশোর-কিশোরী , অনগ্রসর পরিবারের শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব শিখন কেন্দ্র চালু করা, শিশুদের প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে ২০১২ সাল থেকে ভাষা ও সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ- এই চার বিভাগে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ কার্যক্রম পরিচালিত করা, প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন সহ পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ও বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের কল্যাণে আর্থিক সহায়তা দেয়ার সরকারি উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শিশুদের গভীরভাবে ভালোবাসতেন। এ কারণে তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে আমরা ‘জাতীয় শিশুদিবস’ ঘোষণা করেছি। তিনি বলেন, জাতির পিতা ছাত্রজীবন থেকেই দরিদ্র্য-অসহায় সহপাঠীদের সাহায্য করতেন। তাদেরকে আপন করে নিতেন। আমি চাই তোমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে সবসময়ই দরিদ্র, অসহায় ও প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়াবে।
এ সময় ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নিহত বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র এবং তার ছোট ভাই শেখ রাসেলের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের মতো আমারও একটি ছোট্ট ভাই ছিল। আমি তোমাদের মাঝে আমার সেই ছোটভাই রাসেলকে খুঁজে ফিরি।
তিনি শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের জন্য জাতির পিতা এই সুন্দর দেশ দিয়ে গেছেন। আমার প্রত্যাশা, তোমরা বড় হয়ে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে তাঁর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ আসনে তুলে ধরবে।
তিনি বলেন,‘শিশুরা কুঁড়ির মতো। ওদের ফুল হয়ে ফুটতে দিতে হবে। তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন মমতা, ভালবাসা অর্থাৎ শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যা। শিশুরা সবসময় বন্ধুর মতো আচরণ প্রত্যাশা করে। তাই শিশুদেরকে শারীরিক শাস্তি প্রদানের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রশিক্ষণার্থী শিশুদের পরিবেশনায় ‘সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাও বাংলাদেশ’ শীর্ষক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিশু একাডেমীতে শিশুদের জন্য একটি ডিজিটাল লাইব্রেরিরও উদ্বোধন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।