পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : কথায় বলে, যত গর্জে তত বর্ষে না। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে বাক যুদ্ধ শুরু হয় সেখানে এমন প্রচন্ড উত্তাপের সৃষ্টি হয় যে এক পর্যায়ে দেশী এবং বিদেশী পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করেছিলেন যে অতি সহসা দুইটি দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ লেগে যাবে। আর সত্যিই যদি তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ লেগে যায় তাহলে সেই যুদ্ধ পারমাণবিক যুদ্ধে পর্যবসিত হবে। আর যদি পরমাণু যুুদ্ধ লেগে যায় তাহলে সেটি বিশ্ব যুদ্ধে রুপান্তরিত হবে। কিন্তু দৈনিক ইনকিলাব এ ব্যাপারে তার বিশেষ রাজনৈতিক ভাষ্যে বলে আসছে যে দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা এই মুহুর্তে অনেক কম। সর্বশেষ পরিস্থিতি দৃষ্টে বলা যায় যে যুদ্ধের আশঙ্কা অনেক কমে গেছে। এখন সেই আশঙ্কা তিরোহিত হওয়ার পথে। গত সোমবার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি গুরুত্বপূর্ন বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।
রোববার গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভারত কখনো কোনো দেশকে আক্রমণ করবে না বা কোনো লোভনীয় অঞ্চলের দিকে হাত বাড়াবে না। অপর এক খবরে প্রকাশ, চীনের প্রচেষ্টায় আবারো ভারতের পাকিস্তানবিরোধী উদ্যোগ থমকে গেছে। ভারতের পাঠানকোট হামলার সন্দেহভাজন হোতা মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘ থেকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ার জন্য ভারতীয় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নিজেদের আপত্তি ও বিবেচনার মেয়াদ বাড়িয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন।
ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিটি আমেরিকাও বাতিল করেছে। দাবি অনুযায়ী কাশ্মীর সীমান্তে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘ভারতের এমন দাবি আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।’ গত শনিবার ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক সম্মলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মার্ক টোনার একথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চরম উত্তেজনা সত্ত্বেও পাক-ভারত সামরিক বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমরা দু’দেশের শান্তি বজায় এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঠিক রাখতে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব করছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর সত্যতা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।
এর ক’দিন আগে চীনের তরফ থেকে ভারতের নামোল্লেখ না করে হুঁশিয়ার করা হয়, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বে কেউ আঘাত করলে চীন সামরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবে।
শুক্রবার রাতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছেÑ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাক-ভারত উত্তেজনা উদ্বেগজনক। দুই দেশের মতবিরোধ দূর করতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান খোঁজা উচিত।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, পাক-ভারত যুদ্ধ উত্তেজনা এই অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর। তেহরান থেকে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, এতে করে ওই অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা উপকৃত হচ্ছে। তারা উভয় দেশের নিরাপত্তা ধ্বংস করতে চায়। তাই, দ্রুত এর সমাধান হওয়া উচিত।
ভারতীয় সূত্র জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের স্থিতাবস্থা ধরে রাখাটা এখন একটা চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশটিকে ইতিমধ্যে এ শংকার কথা জানানো হয়েছে। ভারত অথবা পাকিস্তানের মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়েছে তাদের। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নতি ঘটছে রাশিয়ার। তথ্যপ্রযুক্তি বিনিময়ের মতো স্পর্শকাতর সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে তাদের।
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বৃদ্ধির কারণেই রাশিয়া এ উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে সরাসরি চীনের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে রাশিয়া। এখানে যৌথ সামরিক মহড়ায়ও চীনের সঙ্গে অংশ নেয় তারা। এখন চীনের মিত্র পাকিস্তানের প্রতি হৃদ্যতার হাত বাড়াচ্ছে রাশিয়া।
পাকিস্তান ও ভারত যখন যুদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছে তখন বিশ্ব রাজনীতির সমীকরন অনেক বদলে গেছে। একটি সময় ছিল যখন পৃথিবীর মানচিত্র থেকে পাকিস্তান মুছে গেলেও রাশিয়ার কোন আফসোস ছিল না। ভারতের সব রকম জুলুম ও অন্যায়কেও রাশিয়া অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে গেছে। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের সাথে সামরিক চুক্তি থাকা সত্বেও আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষে দৃঢ় ভাবে দাঁড়ায়নি। আমেরিকা পাকিস্তানকে শুধুমাত্র লিপ সার্ভিস দিয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতকেও সেভাবে বিরোধিতা করেনি। আমেরিকা সব সময়ই পাকিস্তান ও ভারত উভয়কেই খুশি রাখতে চেয়েছে। যার ফলে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি কাউকেই খুশি করতে পারেনি। ফলে ভারত একদিকে পেয়েছে রাশিয়ার শর্তহীন সমর্থন, অন্যদিকে আমেরিকার তরফ থেকে তার কোন বিপদ দেখতে পায়নি। এসব কারনে আজ থেকে দুবছর আগেও ভারত ছিল আপার হ্যান্ডে।
কিন্তু বিগত দুই বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। ভারত যতই আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ততই রাশিয়া ভারত সম্পর্কের ভিত নড়ে যাচ্ছে। এর অর্থ এই নয় যে রাশিয়া ভারত থেকে দূরে সরে গেছে। কিন্তু হাতের পাঁচ রাখার জন্য তারা এবার পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে। ঐদিকে মুসলিম দেশ তুরস্ক এবং ইরানের সাথেও রাশিয়ার বন্ধুত্ব হচ্ছে। এই দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ পাক-ভারত বিরোধে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। এছাড়া সমগ্র ওআইসি পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। এখন পর্যন্ত ভারতকে যারা সমর্থন করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ভুটান ও বাংলাদেশ।
যুদ্ধে শুধু সামরিক শক্তিই নয়, নৈতিক সমর্থনেরও বিরাট মূল্য রয়েছে। এই কারনে আমেরিকাও প্রকাশ্যে ভারতকে সমর্থন করতে পারছে না। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে এবার ভারত কূটনৈতিক ফ্রন্টে কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে আনবিক হামলার প্রশ্ন। ভারত যদি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে তাহলে পাকিস্তান যে আনবিক বোমা মারবে সে ব্যাপারে কারো মনে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই। আমেরিকা এবং রাশিয়া কেউই আনবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নয়।
এসব কারণে ভারতও সর্বাত্মক যুদ্ধে এই মুহুর্তে জড়িত হতে চাচ্ছে না। তাই পাক-ভারত যুদ্ধের আশঙ্কা ধীরে ধীরে তিরোহিত হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।