পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতি বৃষ্টিতে উজানের নদ-নদী অববাহিকা দিয়ে ভারতের ঢলের পানি হু হু করে আসছে। এরসঙ্গে বাঁধ-ব্যারেজগুলো একযোগে খুলে ভারত পানি ছেড়ে দিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরেও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে বিভিন্ন নদ-নদী এলাকায়। এ অবস্থায় দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর, মধ্য থেকে দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত ফুলে-ফুঁসে উঠেছে নদ-নদী, শাখা-প্রশাখা, উপনদীসমূহ। এরফলে নদীভাঙন দিন দিন হচ্ছে তীব্র। উত্তর থেকে দক্ষিণে বন্যার বিস্তার ও অবনতি ঘটছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পদ্মা, যমুনা, ধলেশ^রী, আত্রাই ও গড়াই এই পাঁচটি নদ-নদী ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সকালের দিকে ভাটিতে চাঁদপুরে মেঘনাসহ ৬টি নদ-নদী ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।
উজানে ভারত থেকে আসা অব্যাহত ঢলের তোড়ে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল হয়ে দক্ষিণে ভাটি ও মোহনায় ভোলা-চাঁদপুর-নোয়াখালী-লক্ষীপুর পর্যন্ত প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধির দিকে। বন্যা ও নদীভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো। ফল-ফসলি জমি, বসতঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার্ত, পানিবন্দী ও নদীভাঙন কবলিত লাখো মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বাড়ছেই।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, সিকিম, হিমালয় পাদদেশীয় ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি হচ্ছে। আরও তিন দিন বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস উল্লেখ করে গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে এ সময়ে উক্ত অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র এবং আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে এবং সুরমা নদী কানাইঘাটে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৮টিতে হ্রাস ও ৩টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত ছিল। এরমধ্যে ৫টি নদ-নদী ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সোমবার নদ-নদীর ৫৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪৭টিতে হ্রাস, ৬টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং এরমধ্যে ৫টি নদ-নদী ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। রোববার ৫৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪৫টিতে হ্রাস, ৬টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং এরমধ্যে ৫টি নদ-নদী ৭টি স্থানে বিপদসীমার উর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। শনিবার ৬৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪২টিতে হ্রাস, দু’টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত ও ৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে গতকাল পাউবো জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি এবং যমুনায় পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে, পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রধান নদ-নদীর প্রবাহের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গতকাল বিকাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, যমুনা নদে পানি আরও কিছুটা হ্রাস পেয়ে মথুরা পয়েন্টে বিপদসীমার দুই ও আরিচা পয়েন্টে ৭ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তর-মধ্যাঞ্চলে আত্রাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বাঘাবাড়ীতে বিপদসীমার ২৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলেশ^রী নদীর পানি কিছুটা বেড়ে এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার ১৬ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।
পদ্মা নদীর পানি বিকাল পর্যন্ত শুধু একটি পয়েন্টে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে বিপদসীমার ৫৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকালের দিকে পদ্মা নদী সুরেশ্বর ও ভাগ্যকুল পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ২৮ ও ৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকাল নাগাদ বিপদসীমার নিচে নেমেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়াই নদী মাগুরা জেলার কামারখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বেতনা নদী বিপদসীমার ১৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্য-দক্ষিণের ভাটি ও মোহনায় মেঘনা নদী চাঁদপুরে বিপদসীমার ১৯ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। তবে বিকাল নাগাদ পানির প্রবাহ বিপদসীমার নিচে নেমেছে।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি, ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে চেরাপুঞ্জিতে ১৯৮ মিলিমিটার, গ্যাংটকে ৮০ মি.মি.সহ বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি, ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে শেওলায় ১২২ মি.মি., জকিগঞ্জে ১০৮, লরেরগড়ে ১০৫, কানাইঘাটে ১০৩, ছাতকে একশ’, লালাখালে ৯৫, সিলেটে ৮৪, সুনামগঞ্জে ৭৫, কুড়িগ্রামে ৬৭, জাফলংয়ে ৫৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।
ডি এম রেজা সোহাগ খুলনা থেকে জানান, খুলনার দাকোপের পানখালী ইউনিয়নের খোনা গ্রামের ঢাকী নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নং পোল্ডারের কয়েক হাজার বিঘা জমির আমন ধান, মৎস্য খামার ও বসতভিটা প্লাবিত হওয়ার চরম আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সোমবার দিবাগত রাতে পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে পানখালী ইউনিয়নের খোনা মোল্লা বাড়ীর সামনে ঢাকী নদী তীরের ওয়াপদা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। মূহুর্তের মধ্যে মূল বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট এলাকার ৮০ শতাংশ ঢাকী নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের ভয়াবহতায় এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়েছেন। আমন মৌসুমে ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে এবং বাড়ী ঘর রক্ষায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় জনগণ।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে উজানের ঢলে বাড়ছে গঙ্গাধর নদীর পানি। পানি বাড়ার সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ঘর-বাড়ী, ফসলি জমি, বাগান, পাকা স্থাপনা।
খরস্রোতা গঙ্গাধর সারা বছরই কম-বেশি তান্ডব চালায় বল্লভেরখাস ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে। পানি বৃদ্ধি বা কমে গেলে এর ভয়াবহতা বাড়ে দ্বিগুণ। গত কয়েক বছর থেকে তা অগ্রাসন চালাচ্ছে ওই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে। এবার তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে কৃষ্ণপুর জেলেপাড়া, রামদত্ত ও রঘুরভিটা এই তিন গ্রাম । এবছর ওই তিন গ্রামে ভেঙেছে প্রায় অর্ধশত ঘর-বাড়ী।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক মো. মোক্তার হোসেন জানান, রঘুরভিটা থেকে কৃষ্ণপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ কি.মি এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাঙন চালাচ্ছে গঙ্গাধর নদী। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এই নদীর ভাঙন রোধে গত ২ বছর আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এটি পাশ হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি আরোও জানান, যেহেতু ব্যাপক এলাকা জুড়ে ভাঙন চলমান, তাই আপদকালীন কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।