পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওই মন্ত্রী অতি সম্প্রতি বক্তব্য দিয়েছেন, ‘ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে এসেছিলো, তারা আমাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলো। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অপমান করার মতো একটা অবস্থা তৈরি করেছে। এভাবে যদি তারা (ভারত) চিন্তা করে তাহলে ভুল করবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ, তারা কখনো কোনো বৈরীতা চায় না, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক চায়, বন্ধুত্ব চায়। এই সম্পর্ক পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে হতে হবে। কোনো বিশেষ দল বা কোনো ব্যক্তি বা কোনো বিশেষ সরকার ভারতের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগনের বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে পারবে না। শুধুমাত্র ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সেই সম্পর্ক বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানান তিনি। গতকাল এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন মহানগর বিএনপির উদ্যোগ দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গ্রামের আমাদের কর্মীরা নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারে না, তারা বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে। এরকম একটা অবস্থা সরকার তৈরি করেছে। রিজভী আহমেদ, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১০ হাজারের নেতা-কর্মী এখন কারাগারে। তারা অবলীলায় মানুষ হত্যা করছে, তরুনদের হত্যা করছে। আজ দেশটাকে তারা মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে, একটা কারাগারে পরিণত করেছে। এরকম ভয়ংকর একটা অবস্থা তৈরি করে, ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, গণবিচ্ছিন্ন সরকার, দমননীতির সরকার নির্যাতন করে ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের রাজনীতি, বাংলাদেশের মুক্তির রাজনীতি যখন তারেক রহমান এগিয়ে নিয়ে চলছিলেন, তখন থেকে এই আওয়ামী লীগের কুচক্রীরা তারেক ভয় পেতে শুরু করে। ১/১১ সরকার এবং এখন এই সরকার তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, একটি মামলায় নিম্ন আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ার পরও উচ্চ আদালতে সাজাও দেয়ার ব্যবস্থা করেছে অর্থাৎ সরকার তারেক রহমানকে ভয় পায়। তারেক রহমান যাতে দেশে ফিরে না আসতে পারে সেজন্য একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে সাজা প্রদান ও তার সম্পত্তি ক্রোক করার ঘটনারও সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, সরকার জনগনকে ভয় পায়, তাদের মতামতকে ভয় পায়। তারা জানে এসব নেতারা যদি রাজনীতিতে থাকতে পারে, বিএনপি যদি সক্রিয়ভাবে থাকে তাহলে তাদের (আওয়ামী লীগ) যে স্বপ্ন একদলীয় ব্যবস্থা সারা জীবন ধরে বাংলাদেশকে শাসন করবে, সেই স্বপ্ন তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এজন্য একের পর এক শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রেখে সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকল বিভেদ ভুলে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান মির্জা ফখরুল।
৯ বছর ধরে কারাগারে বন্দি দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ৯ বছর তাকে (আবদুস সালাম পিন্টু) কারাগারে অবরুদ্ধ করে রেখে। গত কয়েকদিন আগে তার বড় মেয়ে বিয়ে হলো। আমি গিয়েছিলাম, নেতারা গিয়েছিলেন। সেই এক হৃদয় বিদাড়ক দৃশ্য। যে ভাবী-বাচ্চারা বড় মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে, বাবা নেই। তাকে প্যারেলো মুক্তি দেয়ার জন্য আদালত হুকুম দিয়েছিলো, এই সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব সেই নির্দেশ তামিল করে নাই। বুঝেন, কোন জায়গায় দ্বৈত শাসন চলে এসেছে। সরকার ও রাষ্ট্র কোন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে আদালতের হুকুমের পরও তাকে সেদিন প্যারেলো মুক্তি দেয়া হয় নাই।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আহবায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার জনগনকে ভয় পায় সেজন্য তারা নির্বাচনকে ভয় পায়। নতুন নির্বাচন কমিশন করবেন, আমরা বলেছি আলোচনার কথা আর আপনারা বলবেন যে, কেনো অবস্থাতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না। কেনো? বিএনপি কী ভাইসা আসছে নাকী যে তার সাথে আলোচনা করবেন না, আলোচনা করতে বাধ্য হবেন। বিএনপি ভেসে আসা দল নয়, এই বিএনপি জিয়াউর রহমানের দল, এই বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার দল, এই বিএনপি তারেক রহমানের দল, এই বিএনপি বাংলাদেশের জনগনের দল।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া মহানগর বিএনপির কাজী আবুল বাশার, যুব দলের আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খানও বক্তব্য রাখেন।
জনস্বার্থে আপস করবে না এবং ভবিষ্যতে কাউকে করতেও দিব না :
এর আগে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (অ্যাব)। এতে প্রধান আলোচক হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি জনস্বার্থে আপস করবে না এবং ভবিষ্যতে কাউকে করতেও দিবে না। কারণ বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জনগণের পক্ষে রাজনীতি করে তাই জনবিরোধী যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিরোধ করবে দলটি।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে বিএনপির এক হাজার নেতাকর্মী নিহত, পাঁচ শতাধিক গুম ছাড়াও ৭৫ হাজার মামলায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ নেতাকর্মী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। এই সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বসে নেই বিএনপি। বরং জনমত সৃষ্টিতে জাতীয় স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান সংকট নিরসনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো আমরা।
রামপাল ইস্যুতে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তাই বলে সুন্দরবনকে ধ্বংস করে নয়। শুধু রামপাল নয়, বর্তমান অবৈধ সরকার এ পর্যন্ত যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে তার সবগুলো অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ফের তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার উদ্দেশ্যে। কিছুদিন পর পর নতুন প্রকল্প হাতে নেয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতি ও অর্থ উপার্জন করা। কারণ বিনিয়োগ নেই, উন্নয়ন হবে কি করে? বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসছে না, এমনকি বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরাও বিদেশে চলে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে অঞ্চলে রামপাল, সেই খুলনার মানুষই এখনো এটা নিয়ে সচেতন নয়, আন্দোলন করার ব্যাপারে ততটা আগ্রহী নয়। তাই রামপাল ইস্যুতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে প্রথমে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে ছোট ছোট সেমিনার, সভা এমনকি লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আজকে গোটা জাতি গভীর সংকটে। বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন, প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ বির্সজন দেয়া হচ্ছে। এমনকি ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং পুনরায় ক্ষমতায় যেতে কৌশল করছে। কৌশল হচ্ছে যারা তাদের ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করেছে তাদের স্বার্থ দেখা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিএনপিকে খুব সহজেই দোষারোপ করা হয়, সমালোচনা করা হয়। তবে সমালোচনা করলে উপকৃত হই। কিন্তু সরকারের তেমন সমালোচনা করা হয় না।
‘রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র : কারিগরি, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ত্রিমাত্রিক বিপত্তি’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিনিয়ার আ ন ম আখতার হোসেন। আলোচনাং অংশ নেন- গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, ঢাবি প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. তাজমেরি এস ইসলাম, ড. সুকোমল বড়ুয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, শিক্ষা সম্পাদক ড. এবি এম ওবায়দুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।