পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু- (চট্টগ্রাম) থেকে : ইলিশের শেষ মৌসুমে এসে বঙ্গোপসাগরের সীতাকু--সন্দ্বীপ চ্যানেলে ধরা পড়েছে রেকর্ডসংখ্যক রুপালি ইলিশ। জেলেদের মতে, গত ১৫ বছরেও নাকি একসঙ্গে এত ইলিশ দেখা যায়নি। আর সাগর দূষণসহ নানান কারণে গত কয়েক বছরে মাছের পরিমাণ দিন দিন কমছে।
এ অবস্থায় ঘোর ইলিশ মৌসুমেও পর্যাপ্ত ইলিশের স্বপ্ন দেখেনি কোন জেলে। কিন্তু জেলেরা স্বপ্ন না দেখলেও সে অকল্পনীয় ঘটনা ঘটিয়েই গত দু’দিন এ এলাকার প্রতিটি জেলের জাল ছিলো ইলিশে পরিপূর্ণ। ফলে এদিন সাগর পাড়ে যেন ইলিশের উৎসব শুরু হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি ইলিশ মৌসুমের শুরুর দিকে বঙ্গোপসাগরের সীতাকু--সন্দ্বীপ চ্যানেলে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছিলো না। ফলে জেলে পরিবারে হতাশা বিরাজ করছিলো। কিন্তু মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে বদলে যেতে থাকে চিত্র। সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের জালে নিয়মিত কমবেশি ইলিশ ধরা পড়তে থাকে। তবে জেলেদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হয়ে আসে দু’দিন। শনিবার ও রোববার রাতে যেসব জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলো তাদের সবার নৌকা ছিলো ইলিশে পরিপূর্ণ। ফলে এ দু’দিন সকাল থেকে ইলিশ ভর্তি নৌকাগুলো ঘাটে ফিরতে শুরু করলে ইলিশের উৎসব শুরু হয়ে যায় কুমিরা ঘাটঘর সাগর উপকূলে।
সরেজমিনে কুমিরা ঘাটঘর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুমিরা-সন্দ্বীপ ঘাটঘর রোডের চারদিকে শুধু ইলিশ আর ইলিশ। সড়কের পাশে, পথচারীর ও সন্দ্বীপ যাত্রীদের হাতে, জেলেদের নৌকা ও ঝাঁকাসহ যেদিকে চোখ যায় সর্বত্র শুধু ইলিশ আর ইলিশে ছয়লাব। দেখা যায়, সাগর থেকে আসা প্রতিটি জেলে নৌকা ইলিশে পরিপূর্ণ। জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বহুকাল একসাথে এত ইলিশ ধরা পড়েনি। কুমিরা ঘাটঘর এলাকার বাসিন্দা জেলে ধ্রুব জলদাশ প্রতিবেদককে বলেন, এত ইলিশ বহুবছর দেখা যায়নি। সাগর থেকে জাল তুললে দেখা গেছে ইলিশের ভারে জাল ডুবে যাচ্ছে। ফলে সব জেলের মুখেই ছিলো হাসি। জেলে ধ্রুব আরো বলেন, জেলেরা এত বেশি মাছ পেয়েছে যে, সাগর পাড়ে আসা অনেক দর্শনার্থী জেলেদের নৌকা থেকে জাল থেকে একেবারে বিনা পয়সায়ও দু-চারটি করে মাছ খাবার জন্য নিয়ে গেছে। তবে যারা এক খাঁচা বা এক সাথে ৫/১০ কেজি মাছ কিনেছেন তারাও পেয়েছেন নামমাত্র মূল্যে। এদিকে পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বেশিরভাগই ছিলো ছোট ও মাঝারি আকারের। এসব ইলিশ প্রতি ঝাঁকা (আনুমানিক ৭ থেকে ১০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩/৫শ’ টাকায়। দেখা যায়, মাছের দাম কম শুনে চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারী বহু ব্যবসায়ী বড় কুমিরা ঘাটঘর এসে ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যান। চট্টগ্রাম থেকে আসা এক পাইকারী মাছ ব্যবসায়ী নূর আলম বলেন, ইলিশের শেষ মৌসুমের জোঁ থাকায় খুব সকালে এখানে চলে এসেছিলাম মাছ কিনতে। তবে এত মাছ ধরা পড়বে কল্পনাও করিনি। তিনি বলেন, প্রায় ৫ মণ ইলিশ মাছ তিনি কিনেছেন। বিভিন্ন দামে মাছ কিনেছেন। কেনা মাছের মধ্যে বড় আকারের ইলিশের সংখ্যা ছিলো কম। তবে মাঝারি ও ছোট মাছ বেশি। ৫ মণ মাছ কত টাকায় কিনেছেন তা বলতে না চাইলেও অন্য সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম মূল্যে কিনেছেন বলে জানান তিনি। ফলে বেশ খুশি তিনি। তবে বড়কুমিরায় পর্যাপ্ত বরফ নেই। এ কারণে এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাওয়াটা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। বরফ দিতে না পারলে মাছ পচে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে সাগর উপকূল থেকে মাছ ক্রয় করেন সন্দ্বীপের বাসিন্দা মোঃ আনোয়ার। তিনি বলেন, সন্দ্বীপ থেকে ফেরার পথে সাগর পাড়ে এত মাছ দেখে আমি বিস্মিত হয়ে যাই। পরে এক ঝাঁকা মাছ কিনে নিয়েছি ৬শ’ টাকায়। ঐ ঝাঁকাতে ১২/১৩ কেজি মাছ হতে বলে তিনি অনুমান করছেন। এ মাছ কিনে তিনি খুবই খুশি। এভাবে এদিন সাগর পাড়ে ছোট্ট শিশু, গৃহবধূ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে সব শ্রেণী পেশার মানুষকে খুশি মনে মাছ কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কুমিরা জেলে পাড়ার অপর এক জেলে গোপাল জলদাশ ইলিশের কথা বলতে গিয়ে হাসি মুখে বলেন, এত মাছ দেখে অনেকেই প্রশ্ন করছেন সাগরে ইলিশ আর আছে, না সবই একসাথে ধরা পড়ে গেছে! আসলেই আজ যত ইলিশ দেখেছি, গত ১৫ বছরেও আমরা একসাথে তত ইলিশ দেখিনি। তবে বড় মাছের সংখ্যা কম হওয়ায় বেশি মাছ ধরলেও মাছ ছিলো খুবই স্বস্তা। ফলে আশানুরুপ দাম পাওয়া যায়নি। কিন্তু এতে তারা আর আশাহত নন। জেলেরা বলেন, এত মাছ পাব এটা কল্পনা না করলেও যেমন পেয়ে গেছি তেমনি ভাগ্যে থাকলে হয়ত দামও পেয়ে যাব। আর তাই তো সেই সুদিনটা ভাগ্যের উপরই ছেড়ে দিলেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।