পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত পর্যটন শিল্পে আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত দীর্ঘ লকডাউন বা কঠোর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর গত ১৯ আগস্ট থেকে সারাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল এবং সমুদ্র সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোও খোলা হয়েছে। করোনার বিধি নিষেধের কারণে গৃহবন্দি জীবন থেকে একটু প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে মানুষ ছুটছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ে সাথে ছুঠোছুটি করতে ছুটছে সমুদ্র সৈকতে। এতে কক্সবাজারের সৈকত এবং অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। বলা যায় কক্সবাজার পর্যটনে আবার সুদিন ফিরছে। চাঙ্গা হচ্ছে কক্সবাজারের অর্থনীতি। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার মাস পর হোটেল মোটেল আবার চালু করতে পেরে খুশি মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
করোনার ছোবলে দেশের পর্যটন শিল্পে লোকসানের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। এ অবস্থায় প্রায় সাড়ে চার মাস পর পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশার আলো দেখছেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেন কক্সবাজারে। তবে প্রথমদিন সৈকতে এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে তেমন বেশি পর্যটকদের দেখা যায়নি। এরপর গত শুক্র ও শনিবারে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে।
পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটক ছাড়াও স্থানীয় দর্শনার্থীরা লকডাউন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সাফারি পার্কে ঘুরতে যাচ্ছেন প্রতিদিন। সাগর-পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ১২০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যটকদের জন্য অবারিত করেছে মহান আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্য। এ সড়ক দিয়ে টেকনাফ পর্যন্ত হিমছড়ি, ইনানী, পাটোয়ারটেক এর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও সোনাদিয়াতেও কিছু কিছু পর্যটক যাচ্ছেন। সৌন্দর্যে ভরা মহেশখালী চ্যানেল সোনাদিয়া দ্বীপ ও আদিনাথ মন্দির ঘুরে পর্যটকরা বেশ আনন্দ পাচ্ছেন।
মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হয়। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে এবং বিনোদ কেন্দ্রগুলোতে এই শর্ত প্রতিপালনে নজরদারি করছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। তার পরেও যেন স্থানীয় জনসাধারণ এবং কিছু কিছু পর্যটকের মাস্ক পরায় এখনো অনিহা লক্ষ্য করা যায়। অনেককে মাস্ক পড়তে দেখা গেলেও অনেকের মুখে দেখা যায়নি মাস্ক। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সতর্ক করছেন সবাইকে।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন শুক্রবার ও শনিবার কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সী-ইন পয়েন্ট, ডলফিন মোড়, হিমছড়ি ও ইনানী সৈকতে সরেজমিন ঘুরে দেখা পর্যটকদের ভিড় গেছে। দীর্ঘদিন সৈকতে আসার ইচ্ছা নিয়ে অনেকে অপেক্ষায় ছিলেন। এখন সুযোগ পেয়ে সৈকতে ঘোরাফেরা করে, কেউবা সাগরের পানিতে গোসল করে সে সাধ মেটাচ্ছেন। আবার কেউ বিরূপ আবহাওয়াতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুক্র ও শনিবার বিকেলে হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে দেখা গেছে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট ও সী-ইন পয়েন্টে পর্যটক সমাগম অনেক বেড়েছে। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে সৈকতের ছাতা চেয়ার, ঘোড়া ব্যবসায়ী ও ঝিনুক ব্যবসায়ীসহ সর্বত্র ফিরে এসেছে নতুনভাবে কর্মচাঞ্চল্য।
সৈকতে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল এসপি মোহাম্মদ মুহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে।
পর্যটন উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান জানান, করোনাকালীন দীর্ঘ লকডাউনে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার হোটেল মোটেলসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত করে দেয়ায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশা সঞ্চারিত হয়েছে। কক্সবাজারে পাইওনিয়ার পর্যটন উদ্যোক্তা পাঁচ তারকা হোটেল সিগাল এর সিইও ইমরুল হাসান রুমী এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে বিনোদন কেন্দ্রগুলোসহ হোটেল মোটেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টা নজরদারিতে রাখতে হবে।
এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার বিমান বন্দরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট অপারেশন করে তারা জানিয়েছেন, হোটেল মোটেল ও সৈকতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় গত কয়দিন থেকে কক্সবাজারে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। একইভাবে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার অফিসগুলোর জানিয়েছে, তাদের যাত্রী সংখ্যাও বেড়েছে। আর হোটেল-মোটেলগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে প্রতিদিন বুকিং বাড়ছে। পর্যটন শিল্প চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের অর্থনীতি। দীর্ঘদিন ধরে হোটেল-মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় হোটেল মোটেল ও সৈকতে ছিল নীরবতা। হোটেল পর্যটন ব্যবসায়ীরা এতদিন লোকসান গুণলেও এখন তারা আশা করছেন এই লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তারা আাশা করছেন আগামী পর্যটন মৌসুমে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার হোটেল মোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পর্যটন উদ্যোক্তা আলহাজ আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে হোটেলগুলোতে পর্যটকদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবর থেকেই পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে। পর্যটক আগমনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে তারা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল এখনো শুরু হয়নি। তাই সেখানে পর্যটক যাতায়াত করতে পারছেন না। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন টেকনাফ সাগরপথে জাহাজ চলাচল শুরু হবে। জানা গেছে, বিভিন্ন জাহাজ পরিবহন সংস্থার কাছে এখন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।