এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীরাও
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি
খন্দকার মর্জিনা সাঈদ
পত্রিকার পাতা খুললে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন উপায় নেপথ্যের করুণ বৃত্তান্ত অবলম্বন করে নারী সত্তাদের অপমৃত্যু আত্মহত্যার বিস্তারিত চোখে পড়ে। এ বিষয়টি নিয়ে এর আগেও লিখেছি। অনেকবার ভেবেছি পুনরায় লিখব না। কিন্তু বিবেকের দংশনেই প্রতিবাদের একমাত্র অবলম্বনস্বরূপ কলমের অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের সবারই জানা, সেই সৃষ্টির শুরু থেকে নারীরা পুরুষদের তুলনায় শারীরিক শক্তিবলে কিছুটা দুর্বল এবং এদেরকে আরো দুর্বল করেছে পরনির্ভরতা ও আর্থিক দৈন্যতা। খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এর জন্য পারিবারিক-সামাজিক নীতিনির্ধারকরাই অনেকাংশে দায়ী। যদিও ধর্মীয় অনুশাসন মতে, পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়ে-স্ত্রীর যথার্থ অধিকার আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই প্রাপ্যতা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং এ বঞ্চনার সুযোগ নিচ্ছে নিকটজনরাই। তারা কেউ কাউকে পর্যাপ্ত সময় তো দিচ্ছেই না, প্রকৃতভাবে বুঝে নেয়া, ভালোবাসার গভীরতা দিন দিন সর্বগ্রাসী প্রয়োজনে বন্ধু থেকে বন্ধুকে, প্রেমিক থেকে প্রেমিকাকে, স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে দূর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। যা তাদের মানসিক দৈনতাকে পুঁজি করে কোনো একটি নির্ভরযোগ্য আশ্রয়নির্ভরতা না থাকায় বাধ্য করছে অপমৃত্যু-আত্মহত্যার পথে অগ্রসর হতে। আমরা অবশ্য ঘটনাটি ঘটে যাবার পরই বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পরিকল্পিত এ সাংঘাতিক অধ্যায়টি আমরা কেন প্রস্তুতির পূর্বে জানতে পারি না। এর কারণ হিসেবে অনেক কিছুই চিহ্নিত করা যায়। যেমন লোকলজ্জা, আত্মসম্মান হারানোর ভয় বা যে বা যাদের বিরুদ্ধে নালিশ জানাবে অন্তরালে তাদের শাসিত রক্ত চোখ কিংবা নালিশ জানানোর মতোন আশ্বস্তপূর্ণ সম্পর্ক না থাকা। প্রথমত বিস্তারিত আলোচনা প্রসঙ্গে বলতে হয়, ইভটিজিংয়ের বেলায় আমরা কী দেখছি? সচরাচর যা ঘটছে এর পরিপ্রেক্ষিতে দেখছি, মেয়েটি পথ চলতে শারীরিক-মানসিকভাবে উত্ত্যক্ত হচ্ছে। স্বজনদের কাছে নালিশ জানিয়ে যখন ধিকৃত হচ্ছে, পরিবার বা সামাজিক পারিপার্শ্বিকতার কাছ থেকে যখন সমর্থন আদায় করা থেকে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের তীর্যক দৃষ্টি, সন্দেহ বাতিকতার আড়ালে নষ্টা-ভ্রষ্টা ধিক্কার চলতে ফিরতে তীরবিদ্ধ করছে, তখনই সে বা তারা জীবনের প্রতি সব আগ্রহ হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সে প্রেমিক অবুঝ মেয়েটি, যে জীবনের যা কিছু অবশিষ্ট ছিল সবটুকু নিসঙ্কচে বিসর্জন দিয়ে আনমনে স্বপ্ন দেখছিল যে মানুষটিকে ঘিরে, সে চিরচেনা মানুষটি যদি মুহূর্তের মধ্যে পর হয়ে যায়, এক কথায় তাকে তার ভালোবাসাকে অস্বীকার করেÑ সেই তাৎক্ষণিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মেয়েটি এতটা নির্ভরতাশূন্য হয়ে পড়ে যে, তখন সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এর প্রমাণ অগণিত। আবার দেখা যায়, যেখানে জন্ম বেড়ে ওঠা, সে জন্মস্থান চিরচেনা স্বজনদের ছেড়ে শুধুমাত্র ধর্মীয় সামাজিকতার প্রেক্ষিতে স্বামীর পরিচয়ে একজন অচেনা মানুষকে আপন ভেবে তার জীবনে জড়ায়। আর সেই মানুষটি যদি বন্ধন বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে চ-ালের রূপ ধারণ করে, করে ঘর সম্বল ছাড়া, তখন স্ত্রীর পরিচয়ে সে নারীটি যদি পিত্রালয়েও আশ্রয় যথার্থ প্রতিশ্রুতি না জোটে বা তেমন কোনো একটি সম্বল স্বজন না থাকে তখন দিগি¦দিক শূন্য হয়ে সে হয় আত্মঘাতী। যা আমরা প্রিন্ট ইলেট্রনিক মিডিয়ার সহায়তায় জেনেছি দেখেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই আত্মঘাতী বা অপমৃত্যুগুলো কোনো একটি সঠিক সমাধান কী দিচ্ছে! বা এই প্রতিবাদের কারণে কোনো একটি প্রতিকার হচ্ছে! ইভটিজিংয়ের কারণে যে মেয়েটি আত্মহত্যা করছে এর জন্য সমাজের কিছু অংশ সাময়িকভাবে প্রতিবাদ জানালেও সময়ের ধারায় তা এক সময় মলিন হয়ে যায়। কেবলমাত্র এই মেয়েটির পরিবার জীবনভর সন্তান হারানোর ব্যথা অনুভব বহন করবে।
সেই মেয়েটি জীবনের চেয়েও যাকে বেশি ভালোবেসেছিল সেই মানুষটির দেয়া আঘাতের প্রতিবাদে জীবন উৎস্বর্গ করেছিল, সেই প্রতারক প্রেমিক হয়তো হাতেগোনা ক’দিন অনুতপ্ত হলেও তার জীবন জীবনের নিয়মেই অগ্রসর হবে। একদিন সংসার সাজাবে, সন্তানের বাবা হবে। যে স্ত্রীরা স্বামীর প্রবঞ্চনার প্রতিবাদে নিজ সন্তানসহ নিজেদেরকে অবহেলায় বলি দিচ্ছেন সেই প্রবঞ্চক স্বামী সমাজ-সংসারের কাছে দোষারোপিত হলেও আইনের বিচারে সাজা ভোগ করলেও তাও কিন্তু এক সময় সময়ের অবধারিত ধারায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই বাস্তব প্রেক্ষাপটে বিবেচনা সাপেক্ষে বলতে হচ্ছে, কত কি ব্যথায় জীবন ব্যথিত হবে। কোনো কোনো আপনজন, বন্ধুরা দেবে বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয়। তাই বলে দমে গেলে কী চলবে। আমরা জানি আত্মঘাতী হওয়া জঘন্য পাপ। আমরা বেশ জেনে বুঝে এ পাপের পথে পতিত হব! হ্যাঁ, অবশ্যই বলব সময় থাকতেই আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর নেপথ্যের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে মৌখিক প্রতিবাদ করুন। এতে কাজ না হলে সমাজের সহায়তায় প্রতিরোধ করুন। আর এরপরও যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হন তাহলে বাধ্যতামূলকভাবে আইনের আশ্রয় নিন। মনে রাখতে হবে, লোকলজ্জা, পাছে লোকে কিছু বলার চেয়ে আত্মরক্ষা, জীবনে নিরাপদ নিশ্চিত করা সকল মানুষের দায়িত্ব অন্যতম অধিকার। ফরজও বটে। তাই আর নয় নেপথ্যে নিজের সাথে যুদ্ধে ভালো থাকার অভিনয়, কৃত্রিম বাহাবা অর্জনে ফানুসসম কৃতিত্ব। বরং যা কিছু বৈষম্যদায়ক এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, পুষে রাখা ক্ষোভ একে একে পাহাড়সম করে মৃত্যুর দিকে পতিত হওয়া, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব মানুষের কাছে অন্তত আশা করা বোকামি অন্যায়সূচক।
তাই আসুন, অসমুচিত এ অধ্যায়ের আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করি। বেঁচে থাকি নব নব প্রাণসঞ্চানে সঞ্চিত করে, প্রকৃতির প্রামাণিক ধারায় এ দেহে যতক্ষণ থাকে প্রাণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।