পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত মাসের মধ্যে মহররম মাস অন্যতম। মুমিনের দায়িত্ব এ মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ"। রাসুল (সা.) বলেন, "আমি আশাবাদী যে আশুরার রোযার কারণে আল্লাহ তা'য়ালা অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। আজ বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। জুমার বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা মহররম মাসের তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
অধিকাংশ মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মুসল্লিদের রাস্তার উপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশ জাতির উন্নতি সুখ-শান্তি এবং মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি কল্যাণ কামনা করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে আশুরার উপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন পেশ ইমাম। পরে কারবালার শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এসানুল হক জিলানী আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত মাসের মধ্যে মহররম মাস অন্যতম। এ মাসের রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ"। এরমধ্যেই ইয়াওমে আশুরা,যার ফজিলত আরো বেশি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন," আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) রমযান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা’ দেখিনি। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জনৈক সাহাবীকে বলেন, রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস, এ মাসে এমন একটি দিন আছে যে দিনে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "আমি আশাবাদী যে আশুরার রোযার কারণে আল্লাহ তা'য়ালা অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন"। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, "তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ।" অতএব আমরা এই আশুরার দিনে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা-ইস্তিগফার করব এবং তার প্রত্যেকটা নেয়ামতের শুকরিয়া যথাযথভাবে আদায় করব এটাই হলো আশুরা দিনের শিক্ষা। এই দিনে হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর কারবালার ময়দানে শাহাদত বরণ করা মুসলিম উম্মার হৃদয়ে আজ পর্যন্ত সেই বেদনাদায়ক হৃদয়বিদারক ঘটনাটি শোকাহত করে। তবে যারা এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অবশ্যই আল্লাহ পাকের নিকট অভিশপ্ত । যার বাস্তব প্রমাণ আমরা দেখতে পাই কোন মুসলমান তার সন্তানের নাম ইয়াজিদ, সীমার রাখেনা। কারণ এগুলো অভিশপ্ত নাম। আশুরার এই দিনকে কেন্দ্র করে মিছিল ও র্যালি বের করা,তাজিয়া, শোক প্রকাশার্থে দেহ রক্তাক্ত করা ইত্যাদি গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।
ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো.মনিরুল ইসলাম আজ জুমার বয়ানে বলেন, আশুরার এ দিনে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। মহান আল্লাহপাক মহররম মাসে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও ঘটাবেন। খতিব বলেন, ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে হৃদয়বিদারক কারবালার ঘটনা সম্পর্কে কেউ কেউ না বুঝেই বলেন হযরত হুসাইন রাদি. সেখানে কেনই গেলেন। তিনি সেখানে না যেতেই পারতেন। অথচ তারা জানেন না হযরত হুসাইন রাদি. আল্লাহর হুকুমেই স্বপরিবারে কারবালায় গিয়েছিলেন। তিন কারবালায় গমন উপলক্ষে রাসুল (সা.)কে স্বপ্নে দিদার লাভ করেছিলেন। খতিব বলেন, ত্যাগ-তিতিক্ষা , সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক কারবালার শিক্ষাকে আমাদের ধারণ করতে হবে। হযরত হুসাইন রাদি. ছিলেন মজলুম। আর ইয়াজিদ ও সীমারের গোষ্ঠীরা ছিল অত্যাচারী জুলুমবাজ। অত্যাচারী ও জুলামবাদের আচরণ থেকে দূরে থাকতে হবে। তা’হলেই মহররম মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন। ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব আলহাজ মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা আশুরার দিবসে খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র জুমার দিনকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আকাশের নিচে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন বলে অভিহিত করেছেন। এর সাথে আজ যুক্ত হয়েছে ১০ মহররম আশুরার দিবস। যে আশুরার দিবসে আল্লাহ তায়ালা আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন সৌভাগ্যক্রমে সে দিবসটি আজ জুমার দিনে হওয়ায় আজকের দিবসের মর্যাদা অপরিসীম।
সৃষ্টির শুরু থেকে মহররম মাসসহ সম্মানিত মাস সমূহের প্রতি সকল নবী-রাসুলের উম্মাতগণ সম্মান প্রদর্শন করে আসছেন। কিন্ত সন্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে যুগে যুগে কিছু মানুষ অনেক সীমালঙ্ঘন করেছে। উম্মতে মুহম্মদীর মধ্যেও ৭৩ ফেরকা হবে বলে রাসুল (সা.) সতর্ক করেছেন।
তাদের মধ্যে মাত্র একদল জান্নাতী হবে বাকি ৭২ দল হবে জাহান্নামী। আজ তাই বাতিল ফিরকার সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, জান্নাতী দলটি হবে তারা, যারা আমার ও আমার সাহবীদের আদর্শের উপর দায়েম-কায়েম থাকবে। মহররম ও আশুরার মহান শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়ে আজ কেউ কেউ সরাসরি শিরকের মধ্যে লিপ্ত হয়ে আশুরা পালন করছে। আবার কেউ কেউ কথা ও কাজের দ্বারা বিদআতী কার্যক্রমের প্রচলন ঘটাচ্ছে। মহররম মাস ও আশুরার দিবসের মর্যাদার ব্যাপারে হাদীসে ও পবিত্র কোরআনে বর্ণিত বিষয় গুলোর উপর আমল করা খুবই সহজ।
সেগুলো হচ্ছে, মহররম মাস একটি সন্মানীত মাস হিসেবে এ মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তোমরা সম্মানীয় মাসের অসম্মান করে তথা নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে নিজেদের প্রতি অবিচার করো না। অর্থাৎ নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করো না। তাই মুমিনের দায়িত্ব এ মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
আশুরার দিনে অতীতে অনেক মানুষের তওবা আল্লাহ কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এ দিবসটিতে বেশি বেশি তওবা করা জরুরি। রমযানের রোযার পরে মহররমের রোযার ফজিলত বেশি। রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোযা ফরজ ছিল। রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোযা নফল হয়ে গেলেও তার ফজিলত কমেনি। রাসুল (সা.) আশুরার রোযা রাখলে বিগত এক বছরের গুণাহ মাফ হয়ে যাওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে তিনি এও বলেছেন তোমরা আশুরার রোযা দুই দিন রাখ। আমাদের অনেকেই আশুরার দিবসকে বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম দ্বারা অতীব মর্যাদার দিবসটিকে কলুষিত করছে। এজন্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন কোন প্রকার মন্দ কাজ দ্বারা আমরা অসম্মান না করি। আসুন আশুরার শিক্ষায় আমাদের জীবন গড়ি এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠার শপথ নেই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল-মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম বলেন, আজ বরকতময় শুক্রবার ১৪৪৩ হিজরি সনের ১০ মহাররম। সহীহ্ মুসলিম হাদিসে এসেছে নবী (সা.) বলেন আশুরার রোযার বদৌলতে আমি আশা করি আল্লাহ তায়ালা পেছনের এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। এভাবে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার, প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩.১৪.১৫ তারিখ, শবেবরাত ও জিলহজের নফল রোযাগুলো রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নবী কারীম (সা.) সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনে এ রোযাগুলোর যথেষ্ট গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। এতে দুনিয়া ও আখেরাতের বহু মাত্রিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আমাদের প্রতিটি সকালই নতুন জীবনের সূচনা। আমাদের লাইফ স্টাইল হতে হবে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক। নবী কারীম (সা.) ২৪ ঘন্টার একটি আখেরাত মুখি রুটিন সাহাবিদের সামনে পেশ এবং সে ভাবেই তাদেরকে প্রস্তুত করেছেন । তাহাজ্জুদের জন্য শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠতে হবে,ফজর জোহর আসর মাগরিব ও এশা ওয়াক্তমত আদায় করতে হবে। এশার পর যথাসম্ভব দ্রুত বিছানায় চল যেতে হবে। নিজের ও পরিবারের জীবিকার তাগিদে হালাল রিজিক অন্বেষণ করতে হবে। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিতে হবে। প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর স্মরণে জিকির- আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া- কালাম, কোরআন তেলাওয়াত ও দরুদ শরীফ দ্বারা নিজ জিহ্বাকে সিক্ত রাখতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।