পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইডেন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী হাবিবা কুমকুম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর আগে গত ৭ জুলাই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সাঈদা নাসরিন বাবলি মারা যান। গত ১৩ জুলাই রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রথম আলোর সম্পাদনা সহকারি আবুল কালাম আজাদ বিপ্লব। গত ৪ আগস্ট স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এটিএন নিউজের সাংবাদিক সারওয়ার হোসেনের ছেলে শাবাব সারোয়ার। চিকিৎসক এবং স্বজনরা বলছেন, তাদের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে।
বেসরকারি হিসাবে প্রায় ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘোষণা আসেনি। যা নিয়ে জনমনে তো বটেই, বিশেষজ্ঞ মহলেও প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তুলনায় মৃতের সংখ্যা বেশি এটা উদ্বেগ ও শঙ্কার কারণ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা ডেঙ্গুতে সর্বমোট ২৬টি মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড করেছি। ছয় হাজার ৪৫০ জন রোগীর বিপরীতে এতো মানুষের মৃত্যু, এটি অত্যন্ত শঙ্কার কারণ। প্রশ্ন হচ্ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিয়ে সরকার এতো লুকোচুরি করছে কেন?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২২টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে। তবে আইইডিসিআর এখনো পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর পর্যালোচনা সমাপ্ত করেনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু সন্দেহে যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে কাগজপত্র আইইডিসিআরে দেয়া হয়। তারা কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর নিশ্চিত করে। এ কারণে একটু সময় লাগে। এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না। কারণ ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের অন্য অনেক রোগও থাকতে পারে। তাই আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখি, আসলেই কোন রোগে তার মৃত্যু হয়েছে। এই কারণে একটু সময় লাগে।
দেশের সার্বিক করোনা এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বুধবার নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে এই বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৪৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্ষাকাল এলে আমরা দেখি যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রূপ নেয়। গত ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মহামারি লেগেছিল। ২০২১ সালে এসেও একই রকম একটি পরিস্থিতির মুখে আমরা দাঁড়িয়েছি। তবে আমরা মনে করি দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সেটি মোকাবিলা করতে পারব।
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু রোধে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যেভাবে করছে, সে কাজের আরেকটু গতি বাড়িয়ে দিলে খুব সহজেই ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব। বাড়িতে ফুলের টবসহ বাসার ভেতরে-বাইরে জমে থাকা যেসব পানি আছে, সেগুলো অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। তিন দিনের বেশি সময় বাসার বাইরে যদি কেউ অবস্থান করেন, তাহলে বাথরুমের কমোড, প্যান ইত্যাদি ঢেকে রাখতে হবে। পানির পাত্র পরিষ্কার করে উল্টে রাখতে হবে।
রাজধানীতে দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে শরীর ঢেকে রাখে এমন কাপড় পরিধান করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। করোনা পরিস্থিতিতে কারো শরীরে জ্বর এলেই কেবল করোনা মনে করতে হবে তা নয়। পাশাপাশি কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের যে পরীক্ষাটি আছে, এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষাটি করতে হবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১১৪ জনে। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৪৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৬ জন।
এদিকে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে কিনা তা বুঝতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইইডিসিআরের কাছে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে ৬ থেকে ৭ জন অধ্যাপক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ (ডেথ রিভিউ কমিটি) সেই তথ্য নিয়ে মৃত্যুর কারণ যাচাই করার পর ডেঙ্গুর ব্যাপারে নিশ্চিত হলে কেবল তখনই তা তালিকাভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ৩ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। প্রথমত মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র এবং দ্বিতীয়ত তার রক্তের নমুনা হাসপাতালে থাকলে তা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া রোগীর ইতিহাস বা বিস্তারিত তথ্য অনেক সময় থাকে না। সেই রোগীর একাধিক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নেয়া হয়। এই ৩ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করার পরই ডেথ রিভিউ কমিটি সেগুলো বিশ্লেষণ করেন। এরপরই তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, মৃত্যুটা ডেঙ্গুর কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর বলেন, মৃত্যুর তথ্য নিয়ে এখানে এলে লুকোচুরি করার কিছু নেই। ২০১৯ সালে যখন ডেঙ্গুর ব্যাপকতা দেখা দিয়েছিল; তখন আইইডিসিআরে ৬/৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে ডেথ রিভিউ কমিটি নামে একটি কমিটি করা হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরীক্ষার সুবিধা এখন অনেক হাসপাতালেই আছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা এন্টিজেন পরীক্ষা করে যখন রোগীর দেহে ডেঙ্গুর উপস্থিতি নিশ্চিত হতে পারছেন তখন সেই তথ্য আইইডিসিআরে পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা একজন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক যখন পরীক্ষায় নিশ্চিত হচ্ছেন এবং ঘোষণা দিচ্ছেন- রোগীর মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে; তখন সেই তথ্যটিই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে।
উল্লেখ. বাংলাদেশে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু জ¦র দেখা দেয়। সে সময় ৯৩ জন মারা গেছে ডেঙ্গুতে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ২০১৫ সাল থেকে আবার ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে। ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। এ রোগে ২০১৭ সালে ৮ জন, ২০১৮ সালে ২৬ জন মারা যায়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে চলে যায়। ওই বছর ডেঙ্গুতে মারা যায় ১৫৬ জন। ২০২০ সালে ডেঙ্গুর বিস্তার কম ছিল, মারা যায় ৭ জন। চলতি বছর করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, অনেক আগেই ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। সম্প্রতি দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়ররা এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধান করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নাগরিকের সাজা ও জরিমানা করছেন। কিন্তু জরিমানার পর তারা এসিড মশার লার্ভার জন্মস্থান জমে থাকা পানি পরিস্কার করছেন না।
হাসপাতালে ভর্তি ৩০৬ ডেঙ্গু রোগী
২০২১ সালের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে চলতি আগস্ট মাসে। আগস্টের ১৮ দিনে ৪ হাজার ২৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এটি এখন পর্যন্ত এ বছরের সর্বোচ্চ শনাক্ত। এছাড়া এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ৩০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগের দিন জানানো হয়েছিল ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৬ জন। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৩০৬ জন। এদের মধ্যে ২৭৩ জনই ঢাকার, আর ঢাকার বাইরে ৩৩ জন। সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ১৯৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছেন এক হাজার ১১০ জন, আর বাকি ৮৩ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৫৬ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৩৩ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।