পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধ হলে আমাদের অগ্রগতিতেও বাধা সৃষ্টি হবে। এটি কাম্য নয়। এ অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক, এটিই আমরা চাই। আমরা চাই দুই দেশ নিজেরাই তাদের সমস্যার সমাধান করুক। পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রসঙ্গে গতকাল রোববার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর সম্পর্কে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের বিরূপ মন্তব্যের পরও দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে। তিনি বলেছেন, দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চলবে, ঝগড়াঝাটিও চলবে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত শক্তি। তাদের পছন্দের লোকেদের বিচার হচ্ছে। তাই তারা তো কাঁদবেই।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান, কানাডা সফর, দু’টি পুরস্কার গ্রহণ, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, বিভিন্ন সেমিনারে বক্তব্য দেয়াসহ ১৭ দিনের সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি এই সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মন্তব্য করেন।
লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম প্রশ্ন ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের নানা মন্তব্যের পর দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা হবে কি না? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দু’টি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে। মতভিন্নতাও থাকতে পারে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান শক্তি, তাই তারা তাদের পেয়ারা বান্দাদের জন্য কাঁদছে। কিন্তু আমরা তো বিচার বন্ধ করিনি। বিচার চলছে। পাকিস্তান মন্তব্য করছে, আমরা এর জবাব দিচ্ছি। দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চলবে, ঝগড়াঝাটিও চলবে।
তিনি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেশের ভেতরের একটি দল এ ধরনের লোকদের মন্ত্রী বানিয়েছে। দেশের ভেতরে বসে দালালি করেছে। আগে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্তের আগে যারা এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা বন্ধ করেছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর সেনা শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমানের সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেয়া এবং পরে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০০১-০৬ মেয়াদে চারদলীয় জোট সরকারে যুদ্ধাপরাধী দুই জামায়াত নেতাকে মন্ত্রিত্ব দেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ‘তাদের’ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের সাথে আপনারা সম্পর্ক ছিন্ন করবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত আগে দেশের ভেতরে নেন, এটাই আমি বলতে চাই।
সার্ক যেহেতু দ্বিপাক্ষিক কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে নাÑ এর প্রয়োজনীয়তা আছে কি? এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সার্ক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাতে সময়ও লেগেছে। এ পর্যায়ে সার্ক থাকবে কি থাকবে না আমি তা এককভাবে বলতে পারি না। বলা ঠিকও হবে না। সার্কভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, এ সিদ্ধান্ত আমার একার নয়। আমি এককভাবে কোনো মত দিতে পারি না। তবে আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সার্কের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরনের যৌথ একটা কিছু থাকা উচিত। এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমস্যাগুলো মোটামুটি একই রকমের। তাই এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় আমরা একসঙ্গে কিভাবে কাজ করতে পারি তা ভেবে দেখা দরকার। তবে এটাও ঠিক, আমাদের সমস্যাগুলো সার্কের মাধ্যমে সমাধান করা যাচ্ছে না। সার্ক সনদে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমস্যা সমাধানের কোনো সুযোগও নেই। তাই সমস্যাগুলো সমাধান করা যাচ্ছে না। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হলেও সেগুলো কার্পেটের নিচে রেখে দেয়া হচ্ছে।
সার্কের কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে তার এককভাবে বলার কিছু নেই, সেটা উচিতও হবে না। সার্কের চেয়ারপারসন এখন নেপাল। বাংলাদেশ চেয়ারপারসন বাংলাদেশ নয়। এই সিদ্ধান্তই সবাই মিলে নিতে হবেÑ সার্কের কি হবে? সদস্য দেশগুলো মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবে, বাংলাদেশ সেভাবেই এগোবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি ভূমিকা রাখতে চায়, আলোচনা চায়। বিএনপির এই আগ্রহের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কি ধরনের নির্বাচন কমিশন চায়। তারা কি এমন কমিশন চায় যারা এক কোটি ৩১ লাখেরও বেশি ভুয়া ভোটার তালিকায় আনবে। বর্তমান কমিশন তো এটা করেনি। তাদের (বিএনপি) পরামর্শ নিলে তো ভুয়া ভোটার তালিকা করে দেবে এমন কমিশন করতে হবে।
নূর চৌধুরীকে ফেরানোর পথ খুঁজতে কানাডা রাজি
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ‘সুরাহা করতে’ বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে কানাডা রাজি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে তিনি নূর চৌধুরীকে ‘যথাশীঘ্র’ দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেই নূর চৌধুরীর বিচার হবে।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ১৫ আগস্টের সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তিনি সেদেশের কিছু আইনি বাধার কথা উল্লেখ করেন। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতপূর্বক কিভাবে এই স্পর্শকাতর বিষয়টির সুরাহা করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করার জন্য উভয় দেশের উপযুক্ত প্রতিনিধির মধ্যে বিষয়টি আলোচনা শুরু করার পক্ষে তিনি মত দেন, বলেন শেখ হাসিনা। সরকারিভাবে একটি খেলার চ্যানেল করা যায় কি না এমন প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী নাকচ করে দেন। তবে সংসদ টেলিভিশনের সময় থেকে কয়েক ঘণ্টা খেলার জন্য বরাদ্দ দেয়া যায় কি না সেটা দেখা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দল অবসরের সুযোগ দিলে বেশি খুশি হবো
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার দলের আসন্ন সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হলে এবং এর ফলে তিনি সভাপতির পদ থেকে অবসরের সুযোগ পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির সংস্কার বা নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই সব হবে। আমার তো ৩৫ বছর হয়ে গেছে। আমাকে যদি রিটায়ার করার সুযোগ দেয়, তাহলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো। তবে অবশ্যই আমি থাকব। দল ছেড়ে তো আমি যাচ্ছি না। যদি নতুন নেতা নির্বাচিত করা হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হবো। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা ‘না’ ‘না’ বলে আওয়াজ তোলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ সফরের ফাঁকে ৫ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, গত ৩৫ বছরে এই প্রথম ব্যক্তিগত ছুটিতে টানা পাঁচ দিন কাটালাম। সফরে গিয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর পাঁচ দিন ওয়াশিংটনে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসায় কাটান প্রধানমন্ত্রী। এই সময়টিকেই তিনি তার ব্যক্তিগত ছুটির সময় বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার কাটানো অবসর প্রসঙ্গে বলেন, এই সময়ে যদিও আমি ৫১টি ফাইল স্বাক্ষর করেছি, কিন্তু তাতেও সময়টিকে আমি আমার ছুটি হিসেবেই ধরতে চাই।
ছেলের জন্য আমি গর্বিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, আর সে জন্য তিনি গর্বিত।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এই ছেলে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জন্মগ্রহণ করে। তখন আমাদের বড় দুঃখের সময়। একটি একতলা বাড়িতে আমাদের বন্দী করে রাখা হয়েছিল, তারই একটি দিনে ওর জন্ম। তারপর আল্লাহ তাকে এত বড় করেছে। বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে নিতে পারছে, এটাই অনেক বড় কথা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করায় মা হিসেবে এটি আমার জন্য অনেক গর্বের। জয় তথ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় তার বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ যে এত দ্রুত ডিজিটাল হতে পেরেছে এ জন্য তার অবদান অনেক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।