Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে সেনা ক্যাম্পে ফের হামলা

প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৪৭ এএম, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

২ জঙ্গি নিহত : কয়েক জন বিএসএফ সদস্য আহত : পাকিস্তানের আকাশসীমায় যুদ্ধপ্রস্তুতি : ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রস্তত থাকার নির্দেশ

ইনকিলাব ডেস্ক
জম্মু কাশ্মিরে ফের জঙ্গি হামলা হয়েছে। গতরাতে বারামুল্লায় বিএসএফ ক্যাম্পে জঙ্গি হামলা হয়। জি নিউজ গ্রুপ জানায়, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ প্রথমে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। পরে গুলি চালায়। সূত্রের খবর, চার পাঁচজন জঙ্গি ঢুকে পড়ে সেনা ক্যাম্পে। গভীর রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনা-জঙ্গি লড়াই চলছিল।
দু’জন হামলাকারী নিহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন বিএসএফ সদস্য আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের অভিযোগ, আখনুর সেক্টরে পাকবাহিনী অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে রাতে গুলি চালিয়েছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনারাও। উল্লেখ্য, মাত্র কিছু দিন আগে উরিতে সেনা ক্যাম্পে হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। যার জেরে এখনও পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অন্যদিকে সীমান্ত এলাকা সফর করে ভারতীয় সেনাপ্রধান দলবীর সিং তার বাহিনীকে যে কোনো প্ররিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্র্রধানমন্ত্রী মোদি গতকাল এক ভাষণে অপেক্ষাকৃত নরম ভাষায় বলেছেন, ভারত কখনো অন্য দেশে হামলা করেনি, এবং এখনো হামলা করার কোনো চিন্তা করছে না।
পাকিস্তানের আকাশসীমায় যুদ্ধপ্রস্তুতির খবর ভারতীয় মিডিয়ায়
পাকিস্তানের বিমান সংস্থা নিজেদের আকাশসীমায় মহড়া দিয়ে প্রাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, করাচি ও লাহোরের আকাশসীমায় বিদেশি বিমানগুলোর চলাচলের জন্য উচ্চতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, করাচিতে ৩৩ হাজার ফুটের নিচ দিয়ে এবং লাহোরে ২৯ হাজার ফুটের নিচ দিয়ে বিদেশি বিমানের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতের বিমান চলাচলবিষয়ক কর্মকর্তারা মনে করছেন ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে প্রাকিস্তান এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।  
গতকাল টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার করাচির আকাশসীমায় বিদেশি বিমান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করার পর এবার লাহোরের আকাশসীমায়ও নিচু দিয়ে বিদেশি বিমান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমে করাচিতে ৩৩ হাজার ফুটের নিচ দিয়ে ওড়া বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এরপর লাহোরে ২৯ হাজার ফুটের নিচে উড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর প্রায় গোটা দেশের আকাশসীমায়ই বিধি-নিষেধের আওতায় রয়েছে। করাচির বিধিনিষেধ এক সপ্তাহের জন্য জারি করা হলেও লাহোরে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। প্রাকিস্তানের বিমান কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে এ বিধি নিষেধের জন্য ‘পরিচালনাসংক্রান্ত কারণ’-এর উল্লেখ করেছে বলে জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভারতের একটি বিমান সংস্থার কমান্ডার সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেন, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই কারণেই নিচ দিয়ে বিমান উড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারতকে লক্ষ্য করেই এমন কৌশল নেয়া হয়েছে। কেননা, করাচি থেকে রাজস্থান ও গুজরাট সীমান্ত বেশি দূরে নয়। আর জম্মু-কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবের কাছে লাহোর অবস্থিত।’
ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
এদিকে যে কোনো বিরোধে (এনি ইভেনচুয়ালিটি) সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনাকর সময়ে গতকাল শনিবার সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি দেখতে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর পরিদর্শন করেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিং। এ সময় সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা রক্ষা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শ্রীনগর থেকে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শনিবার দলবীর সিং ওই অঞ্চলে গিয়ে বৈঠক করেন নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুদার সঙ্গে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীনগরভিত্তিক করপোরাল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সতীশ দুয়া, রাজ্যের মুখ্য সচিব বিআর শর্মা ও ডিজিপি কে রাজেন্দ্র কুমার। বৈঠকে নিয়ন্ত্রণ রেখার পরিস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, ওই বৈঠকে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা রক্ষা ও নজরদারির পরামর্শ দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুদা। একই সঙ্গে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তাদেরকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এ সময় আর্মি কমান্ডারের সঙ্গে পুরো সেনাপ্রস্তুতি প্রর্যালোচনা করেন ছিনার করপোরাল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সতীশ দুয়া। তিনি নিয়ন্ত্রণ রেখা ও সংশ্লিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা দেন।
ভারত কখনো কোনো দেশে আক্রমণ করেনি : মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তার দেশ কখনো অন্য দেশের ওপর আক্রমণ করেনি এবং বর্তমানেও এই ধরনের কোনো ইচ্ছা তার দেশের নেই। গতকাল ভারতের প্রবাসী ভারতীয় কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন মোদি। তিনি আরো বলেন, অন্যদেশে হামলা করার বদলে অন্যের জন্য আমাদের দেশের সৈন্য হাজারে হাজারে প্রাণ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ দেন তিনি।
যুদ্ধের বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলছে ভারত : পাক সেনাবাহিনী
যুদ্ধের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে। যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এটা কারো স্বার্থে নয়। এমন মন্তব্য করেছে প্রাকিস্তানের সেনাবাহিনী। গতকাল অনলাইন ডন এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উত্তেজনা ও উস্কানি কারো স্বার্থেই দেয়া হচ্ছে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনসের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অসীম বাজওয়া নিয়ন্ত্রণ রেখার একটি কমান্ড পোস্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, উত্তেজনা ও যুদ্ধের প্রচার কারো জন্য সুখকর নয়। আমরা উত্তেজনা সৃষ্টি করি না। সৃষ্টি করতেও চাই না। যুদ্ধের যে বাগাড়ম্বরতা চালানো হচ্ছে তার সবই ভারত থেকে হচ্ছে।
সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল নিয়ে গেল পাকিস্তান
সম্প্রতি ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র দাবি নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দুই বাহিনীই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে। এর উপর ভিত্তি করে নিজেদের দাবির সত্যতা প্রমাণের জন্য গতকাল ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের নিয়ে গেল পাকিস্তানি বাহিনী। পাকিস্তানের ভেতরে ভিমবার থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাঘশিরের লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের নিয়ে যায় পাকবাহিনী। আশপাশের পরিস্থিতি দেখানোই তাদের উদ্দেশ্য।
ভারতের পাকিস্তানবিরোধী উদ্যোগে আবারও চীনের বাধা
চীনের প্রচেষ্টায় আবারও ভারতের এক পাকিস্তানবিরোধী উদ্যোগ থমকে গেছে। ভারতের পাঠানকোট হামলার সন্দেহভাজন হোতা মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘ থেকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়ার জন্য ভারতীয় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নিজেদের আপত্তি ও বিবেচনার মেয়াদ বাড়িয়েছে সংস্থাটির নিরাপত্তা প্ররিষদের স্থায়ী সদস্য চীন। এর মধ্য দিয়ে আজহারকে সন্ত্রাসী ঘোষণার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে আরও ছয় মাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভারতকে। কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা চলছে, ঠিক সে সময় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালো চীন।
উল্লেখ্য, মাসুদ আজহার এবং তার সংগঠন জয়েশ ই মুহাম্মদ প্রাকিস্তানের মদদে পরিচালিত হয় বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ার প্রচেষ্টায় চীনের বাধা দেয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রতি বেইজিংয়ের পক্ষপাতের বিষয়টিই আবারও সামনে চলে এসেছে। এর ক’দিন আগে চীনের তরফ থেকে ভারতের নামোল্লেখ না করে হুঁশিয়ার করা হয়, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বে কেউ আঘাত করলে চীন সামরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবে।



 

Show all comments
  • ইয়াকিদ ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:২০ পিএম says : 0
    ভারত জন্য সব সময়ই বড় বাধা চীন
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:২১ পিএম says : 0
    কী যে শুরু করলো দেশ দুইটা ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতে সেনা ক্যাম্পে ফের হামলা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ