পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এর আগেও প্রশ্নপত্রে ভুলের কারণে ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষা দুইবার হয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভুলে কেন মেধাবীদের স্বপ্ন নষ্ট হবে -অভিভাবক
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : স্কুল পর্যায়ের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হতো ছেলেটি। মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় এ প্লাস নিয়ে পাস করে। কলেজেও কখনো দ্বিতীয় হয়নি ছেলেটি। স্বপ্ন একটাইÑ উচ্চ মাধ্যমিকে (এইচএসসি) ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষার্থী হবে। উচ্চ মাধ্যমিকেও এ প্লাস পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্যও যথেষ্ট লেখাপড়া করেছে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে ছেলেটির স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
গতকাল বিকালে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন পাওয়া শিক্ষার্থী লাইফের (ছদ্মনাম) বাবার সাথে। এ সময় অভিযোগ আকারে তার বাবা আরো বলেন, পরীক্ষার পর থেকে আমার ছেলে ঠিকমতো কথা বলছে না। ছেলেটি যদি কোনোভাবে নিজেকে ক্ষতি করে ফেলে এর দায় কে নেবে? ভুল প্রশ্নপত্র পেয়েছে এমন আরো ১০ জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললে তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভুলে কেন মেধাবীদের স্বপ্নগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। একই সাথে পরীক্ষা বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
এ বছরের মতো প্রশ্নপত্রে ভুলের কারণে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন নষ্ট হয়েছিল। ওই শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই বছর ‘গ’ ইউনিটের অন্তত ৮টি প্রশ্নে ভুল ছিল। এই ভুলের কারণে একই পরীক্ষার ফল দুইবার প্রকাশ করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছিল।
লাইফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার সিট পড়ে। পরীক্ষার প্রথম বিশ মিনিট চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারি আমার সেটে ৯৯টি প্রশ্ন আছে। স্যারদের জানানোর পর তখন আবার নতুন করে আর একটি উত্তরপত্র দেয়। এ সময় আর কত ভালো করেই পরীক্ষা দেয়া যায়। তার মতো হাজারো শিক্ষার্থী ভুলে ভরা প্রশ্নপত্র পেয়েছিল। তাদের অবস্থা ভালো হওয়ার কথা নয়।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীর সেটে ৯৯টি প্রশ্ন ছিল, তাদের বেশিরভাগের উত্তরপত্রে ভুল হতে পারে। কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছেন, প্রথম ৬টি প্রশ্নের উত্তর ঠিক থাকলেও ৮ থেকে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রে মিল না থাকায় পরেরগুলো ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এদিকে পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি পরীক্ষকদের জানালে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ৭ নম্বর প্রশ্নের ঘর ফাঁকা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক।
গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায়ে শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে একাধিক ভুল পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্রের ১টি সেটেই অন্তত ১৪টি ভুল পাওয়া গেছে। অন্য সেটে ১০০টি প্রশ্নের জায়গায় ৯৯টি প্রশ্ন দেয়া হয়েছে। এতে চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। একটি প্রশ্নের ২ নম্বর পৃষ্ঠায় ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- ৬ থেকে ১২ নং প্রশ্নের শূন্যস্থান পূরণের জন্য। অথচ সেখানে প্রশ্ন দেয়া হয়েছে ৬ থেকে ১১ পর্যন্ত। একইভাবে ৩ নং পৃষ্ঠায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ১৩ থেকে ১৭ নং প্রশ্নের শূন্যস্থানে সঠিক ‘প্রিপজিশন’ বসাতে। অথচ সেখানে প্রশ্ন রয়েছে ১২ থেকে ১৮ পর্যন্ত। তার ঠিক পরেই ২২ থেকে ২৩ নম্বর প্রশ্ন থেকে সঠিক বাক্য নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে। অথচ ইংরেজি বিষয়ে সর্বমোট প্রশ্ন আছে ২০টি।
অ্যাকাউন্টিং অংশের ১৮ নম্বর প্রশ্নের সঠিক উত্তর বাছাইয়ে মোট পাঁচটি অপশন দেয়া হয়। প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হবে ‘ডি’ অপশন। প্রশ্নপত্রে এই অপশনটি বাংলায় লেখা হয় ‘৫:৯:৫’ এবং ইংরেজিতে লেখা হয় ‘৬:৯:৫’। ফলে শিক্ষার্থীরা বাংলা নাকি ইংরেজিকে সঠিক অপশন হিসেবে ধরবে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। প্রশ্নপত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল হয়েছে মার্কেটিং বিষয়ে। এ বিষয়টিতে বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই প্রশ্ন করা হয়। বাংলা মাধ্যমের প্রশ্নের বানানে অন্তত ৯টি ভুল পাওয়া গেছে। ভুল থাকা প্রশ্নের নম্বরগুলো হলো : ১, ৪, ৭, ৯, ১২, ১৩, ১৭ ও ১৮। এর মধ্যে ৭ নং প্রশ্নেই দু’টি বানান ভুল করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভুলই হয়েছে ‘ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান’-এর ভুল। এ ছাড়া প্রশ্নপত্রের অন্য একটি সেটে সিরিয়াল নম্বর ঠিক রাখা হয়নি। একটি সেটের ফিন্যান্স অংশে ৬ নম্বর প্রশ্নের পরে ৭ নম্বর প্রশ্ন না দিয়ে ৮ নম্বর প্রশ্ন দেয়া হয়েছে। ফলে এই সেটটিতে এক প্রশ্ন কম দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ঝিনাইদহ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় এক ঘণ্টার মধ্যে প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়া কঠিন। তার মধ্যে আবার ভুলে ভরা প্রশ্ন। আশা যা ছিল পরীক্ষার হলে শেষ হয়ে গেছে। কয়েকজন অভিভাবক বলেছেন, দায়সারা কাজের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের সন্তানদের। কর্তৃপক্ষ যদি একটু যতœবান হতেন তাহলে এমন হতো না। এখন আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ কি হবে?
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বাণিজ্য অনুষদের প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষায় সব ধরনের অপকর্মমূলক কাজ প্রতিরোধ করতে আমরা শতভাগ সফল। এই সফলতা অর্জন করতে আমাদের নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। প্রশ্নের অনেকগুলো সেট তৈরি করি। এ ক্ষেত্রে একটি সেটে একটি প্রশ্ন কম হয়েছে। আর বাকি ভুলগুলো হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন আমাদের কাছে আসে। হয়তো কোনো কারণে ভুল হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, একটি প্রশ্ন কম থাকা প্রশ্নে যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ওএমআর শিট পূরণ করেছেন ও যারা ওএমআর শিটে ওই প্রশ্নের উত্তর পূরণ করেননি উভয়েই নম্বর পাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের অধীনে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের ৫৫টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ‘গ’ ইউনিটে ১ হাজার ২৫০টি আসনের জন্য মোট ৪২ হাজার ১৪৭ জন ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।