Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘কাশ্মীর প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সঙ্কটের সম্মুখীন’

প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ভারত সীমান্তের হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পাকিস্তানি গ্রামগুলোতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক
ইনকিলাব ডেস্ক : রাজনৈতিক নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এক প্রজন্মের মধ্যে কাশ্মীর সবচেয়ে মারাত্মক সঙ্কটের সম্মুখীন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র পর কাশ্মীরের দক্ষিণে জম্মু অঞ্চলে শনিবার সকালে সীমান্তে বারংবার গুলি বিনিময়ের প্রেক্ষিতে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়। এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতীয় কাশ্মীরের সীমান্তের গ্রামগুলো থেকে অপসারণ করা হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাচ্ছে। তবে পাকিস্তানি কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে অধিবাসীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দেখা গেছে। খবর লন্ডনের দি টেলিগ্রাফ ও এপি।
গত শনিবারের সর্বশেষ সংঘর্ষে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে পাকিস্তানের প্রতিশোধমূলক হামলার আশংকায় সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই হাজার হাজার গ্রামবাসীকে সরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডাকা ধর্মঘটের ৮২তম দিন অতিবাহিত হয়েছে। ৮ জুলাই তরুণ বিপ্লবী বুরহান ওয়ালিকে ভারতীয় সৈন্যরা হত্যা করার প্রতিবাদে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এর ফলে রাজধানী শ্রীনগর ও আশপাশের এলাকা অর্থনৈতিক ভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর গুলিতে ৮৫ জন কাশ্মীরি নিহত হয়েছে।
কাশ্মীরের বিরোধী দল ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টির নেতা নাসির সোগামি বলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং গণআন্দোলনের ফলে অবস্থার অবনতিÑ এ দু’ হুমকি কাশ্মীরের জন্য মারাত্মক দুঃস্বপ্ন সৃষ্টি করেছে।
তিনি লন্ডনের দি টেলিগ্রাফকে বলেন, আমরা ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছি। তিনি বলেন, দিল্লির ড্রয়িংরুমে বসে যুদ্ধের ব্যাপারে কথা বলা সহজ। কিন্তু যখন আপনি দেখেন যে সীমান্তের অধিবাসীরা যুদ্ধের ভীতির মধ্যে বাস করছে, তখন তা তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, আমরা ভোগান্তির মধ্যে আছি। শান্তির প্রথম সুফলভোগী আমরাই, কিন্তু যুদ্ধের প্রথম বলিও আমরাই। যুদ্ধ শুরু হলে যে কোনো স্থানই হুমকির মধ্যে পড়বে।
এদিকে পাকিস্তান যদিও কোনো ভারতীয় সৈন্যের তার সীমান্ত অতিক্রমের কথা অস্বীকার করেছে, তবে ভারতের উস্কানি ছাড়া আগ্রাসনের নিন্দা করেছে।
শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ভারত-পাকিস্তান বিরোধে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি কূটনৈতিক পন্থায় বিরোধ সমাধানের আহবান জানান এবং দু’পক্ষ চাইলে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক বিবৃতিতে দু’ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে দু’দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় কাশ্মীরে গ্রামবাসীরা যখন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে তখন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গ্রামগুলোতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে বলে দেখা গেছে।
শনিবার কয়েক ডজন সাংবাদিককে ইসলামাবাদের ১০৩ মাইল উত্তরপূর্বে পাকিস্তানি কাশ্মীরের বাগসার গ্রাম পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখা যায়, সেখানে বাজার ও স্কুল খোলা। রাখালরা ছাগল ও গরুর পাল চরাচ্ছে। দোকান থেকে ক্যান্ডি কিনছে শিশুরা।
দু’ দেশের মধ্যে রয়েছে ৭৪০ কিমি দীর্ঘ পর্বত সংকুল বন্ধুর সীমান্ত যাকে বলাা হয় নিয়ন্ত্রণ রেখা। এর মধ্যে ৫৫০ কিমি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত।
২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত ভাবে ছোটখাট সংঘর্ষ হলেও যুদ্ধবিরতি বলবত রয়েছে। সহিংসতা ঘটলে এক পক্ষ তার জন্য অপরপক্ষকে দায়ী করে এবং তারা তার পাল্টা জবাব দিয়েছে বলে দাবি করে।
পাকিস্তানি সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিম সালিম বাজওয়া পরিদর্শনকারী সাংবাদিকদের বলেন যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর ভারতীয় দাবি মিথ্যা। ভারতীয় সৈন্যরা বিনা উস্কানিতে ভোর ২টার পর ৫টি স্থানে ছোট অস্ত্র ও মর্টার ফায়ার শুরু করে। সকাল ৭টা পর্যন্ত তাদের এ হামলায় ২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা পাল্টা জবাব দিতে শুরু করলে তাদের হামলা থেমে যায়।
তিনি বলেন, এটা ছিল নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি লংঘন যার কার্যকর ও জোরালো জবাব দেয়া হয়।
ভারতীয় কাশ্মীরের সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বেসামরিক কর্মকর্তারা বলেন, সীমান্ত মূলত শান্ত রয়েছে। তারপরও তারা কোনো সুযোগ দিতে চান না। সে কারণে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার বেসামরিক লোককে অপসারণ করা হয়েছে। তারা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শনিবার তাদের দ্বিতীয় রাত অতিবাহিত করে।
খৌর গ্রামের এক ব্যক্তি মোহন লাল বলেন, প্রত্যেক বছর আমাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর কোনো সমাধান আমাদের চোখে পড়ছে না।



 

Show all comments
  • Joblu Alam ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:৪৩ এএম says : 1
    আল্লাহ আপনি আপনার কুদরতী হাতে তাদের হেফাজত করুন. আমীন.
    Total Reply(0) Reply
  • Nazim ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১:০২ পিএম says : 0
    UN er kothor hosthokhep projon
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘কাশ্মীর প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সঙ্কটের সম্মুখীন’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ