স্টাফ রিপোর্টার : উন্নতমানের স্মার্টকার্ড জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের অপব্যবহার রোধে নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব, আমাদের আরেকটি নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের মাধ্যমে এই কার্ড প্রদানের ফলে আবারও তা প্রমাণিত হলো। আমরা সবাইকে এই কার্ড দিতে পারছি। এটি জাতি হিসেবে আমাদের আরও উন্নত করবে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জাানন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত ধরনের নতুন প্রযুক্তি রয়েছে, গ্রহণ করা হবে। তবে, তার ফায়ারওয়াল থাকতে হবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করা অসম্ভব। বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এটি তৈরি হয়েছে। এই স্মার্ট কার্ড নকল করা সহজ হবে না। প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। স্মার্ট কার্ড প্রদানকারী কতৃপক্ষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ এই স্মার্ট পরিচয়পত্র রাষ্ট্রপতিকে পৌঁছে দেবেন। এরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেয়া হয়। এর আগে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চে আরোহণ করে ১০ আঙুলের ছাপ দেন এবং স্মার্টকার্ড সংগ্রহে চোখের স্ক্যানিং করান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উন্নত কার্ডই সব রকম সেবা দেবে। ঘরে বসেই এখন অনেক কিছু করা সম্ভব হবে। যার সহায়ক হবে এই স্মার্টকার্ড। আমরা সবাইকে এই কার্ড দিতে পারছি। এটি জাতি হিসেবে আমাদের আরও উন্নত করবে।
প্রধামন্ত্রী বলেন, অনেক প্রযুক্তি আছে, সেসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই কার্ডের ডাটার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কেউ যেন ডাটা ব্যবহার করে কোনো অপরাধ ঘটাতে না পারেন, সতর্ক থাকতে হবে এটি নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর প্রাথমিকভাবে পেপার- লেমিনেটেড সাধারণ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হলেও সেবা প্রাপ্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের নানাবিধ ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দিলে বাংলাদেশের প্রকৃতি, জাতীয় প্রতীক ও প্রতিকৃতিসমূহকে সন্নিবেশিত করে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে।
হাসিনা বলেন, ডাটাবেইজ ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র এখন আমাদের জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং কাজে লাগানো, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজে সময় বাঁচানো, তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয়ের তথ্যাদি যাচাই করার জন্য লিংক স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তেই তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের বিজয়ে অভিনন্দিত করেন এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত এই স্মার্টকার্ড প্রকল্পের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল, বোলিং সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, নাসির হোসেইন, ইমরুল কায়েস এবং তাজুল ইসলামরা একে একে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফ্যান। অনুষ্ঠানে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং আক্সেস টু সার্ভিস’শীর্ষক এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো.সালেহ উদ্দীন প্রকল্প সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। নিবাচন কমিশনের সচিব সিরাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এই কার্ড প্রদানের জন্য দেশের ১০ কোটি নাগরিকের তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় ২০১৭ সালের মধ্যে ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্ট জাতয়ি পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে এবং এর মাধ্যমে বিদ্যমান পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিস্থাপিত হবে। আগামীকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোারেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তরের ১নং ওয়ার্ডসহ কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ির ছিটমহলের অধিবাসীদের মধ্যে প্রথম দিনে এই কার্ড বিতরণ করা হবে।