পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর জন্য দুটি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল’এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান-এমপি বলেছেন, ভারত ও মায়ানমারের সাথে দেশের সমুদ্র সীমার স্থায়ী নিস্পত্ত্বির ফলে উপকূল রক্ষীবাহিনীর জন্য এধরনের নৌযানের গুরুত্ব অপরিসীম। কোস্ট গার্ডের বহরে এধরনের নৌযান সংযোজনকে সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী পদক্ষেপের ফলে ১৯৯৯ সালে মৃতপ্রায় এ নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটিকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আজ অমি আরো আনন্দিত যে, সেই খুলনা শিপইয়ার্ড কোস্ট গার্ডের নৌবহরে সর্ববৃহত ৩টি নৌযান নির্মাণ করতে যাচ্ছে।
এসময় তিনি বাংলা ও বাঙালী জাতীর রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের কথা স্মরনের পাশাপাশি খুলনার রূপসা নদীতে পাক হানাদারবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে শহিদ বীর শ্রেষ্ঠ রহুল আমীন-এর কথাও স্মরণ করেন। খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি, বিএন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এ্যডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং সহকরী নৌবাহিনী প্রধান ও খুলনা শিপইয়ার্ডের পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যডমিরাল এস এ এম এ আবেদিন ছাড়াও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদ সহ উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, সরকার দেশের সমুদ্র সম্পদ সহ উপকূলের মৎস সম্পদকে রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আর একারণেই কোস্ট গার্ডে উন্নয়নেও সরকার বদ্ধ পরিকর। খুলনা শিপইয়ার্ড কোস্ট গার্ডের জন্য ৩টি ইনশোর প্যট্রোল ভেসেল নির্মাণ করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে ভাল মানের ৩টি নৌযান উপকূল রক্ষীবাহিনীতে যুক্ত হবে। পাশাপাশি খুলনা শিপইয়ার্ডও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আরো দক্ষতা ও উৎকর্ষতা লাভ করবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দেড় দশক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদান করে যে দুরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিলেন, আজ দেশবাশীর কাছে তা উজ্জল নক্ষত্রের মত পরিস্কার বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী সন্তোশ প্রকাশ করে বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ডের কারণে আজ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিক্ষঞ্চলের প্রায় ১লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরক্ষোভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে। যা এঅঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থায়ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
দেশের নৌনির্মাণ শিল্পে খুলনা শিপইয়ার্ডের গুরুত্বের কথা স্মরণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটা অত্যন্ত আশার কথা যে, শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বিভিন্ন বেসরকারী নৌবাণ্যিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এখানে বড় ও মাঝারী মাপের নৌযান নির্মাণ করছে। অদুর ভবিষ্যতে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও বিভিন্ন ধরনের নৌযান রফতানী করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি কোস্ট গার্ডকে আরো আধুনিকিকরন সহ যুগপোযোগী করা হবে বলে জানিয়ে সে অগ্রযাত্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডও শরিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুলনা শিপইয়ার্ডের সব কর্মকর্তার পাশাপাশি প্রতিটি শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য গর্ব প্রকাশ করে বলেন, নিরলশ পরিশ্রম ও সততার অনন্য নিদর্শন এ প্রতিষ্ঠান। তিনি এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোন দুষ্টচক্র যেন এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে না পারে সে দিকেও সকলকে নজর রাখার আহবান জানান।
এর আগে মন্ত্রী কেক কেটে ও হাতুড়ি পিটিয়ে ৩টি নৌযানের আনুষ্ঠানিক কিলÑলেয়িং করে নির্মাণ কাজের সূচনা করেন। তিনি এসময় শিপইয়ার্ড প্রাঙ্গণে গাছের চাড়া রোপন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষনে খুলনা শিপইয়ার্ডের এমডি কমোডর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি, বিএন বলেন, দেশের নৌনির্মাণ শিল্পে প্রতিষ্ঠানটি অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। গত অর্থ বছরে খুলনা শিপইয়ার্ড ৬৪.৬২ কোটি টাকা মুনফা অর্জনের মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন মাত্রায় পৌছেছে। গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটির সর্বস্তরের কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের নিরলশ পরিশ্রমের ফলে এর বার্ষিক টার্ণ ওভার ১৬ কোটি টাকা থেকে গত অর্থ বছরে ৪৩ কোটি ৮৫ লাখে উন্নীত হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ নৌনির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের সেরা নৌ জরিপ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কাজ করছে বলে জানিয়ে এমডি বলেন, খুব শিঘ্রই খুলনা শিপইয়ার্ড নিজস্ব ডিজাইন হাউজ গড়ে তোলারও উদ্যোগ নিয়েছে ।
গতকাল নির্মাণ কাজের সূচনা করা ৫০.৪০মিটার দৈর্ঘ ও ৭.৫০মিটার প্রস্থ এসব নৌযানের গভীরতা ৪.১০ মিটার। ২হাজার ১শ’ কিলোওয়াটের ২টি করে মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এসব নৌযান ঘন্টায় ২৩ নটিক্যাল মাইল বা ৪২.৫৫ কিলোমিটার বেগে দেশের অভ্যন্তরীন ও উপকূলীয় নৌপথ অতিক্রম করতে পারবে। নৌযানগুলোতে ১শ’ কিলোওয়াটের ২টি করে জেনারেটরও স্থাপন করা হবে। ৩শ’ টন ডিসপ্লেসমেন্ট ক্ষমতার এসব নৌযানগুলোতে ৪৬জন কোস্ট গার্ড সদস্য থাকবে।
কোস্ট গার্ডের জন্য নির্মিতব্য এসব আইপিভি’র নকশা প্রনয়ণসহ পুরো নির্মাণ কাজের তদারকি করছে অন্তর্জাতিক নৌ জরিপ ও তদারকি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না ক্লাসিফেকেশন সোসাইটি’। প্রতিটি ইনশোর পেট্রোল ভেসেলে ২টি করে ৩০ মিলিমিটার সেমি অটোমেটিক গান ছাড়াও ২টি করে ১৪.৫ মিলিমিটার সেমি অটোমেটিক গান ও দুটি করে এলএমজি থাকছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এসব আইপিভি’তে ২টি করে নেভিগেশনাল রাডার, দুটি করে কমিউনিকেশন হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ারেলস ছাড়াও ১টি করে ভিএইচএফ ওয়ারলেস সেট সংযোজন করা হবে। আগামী ৩০ মাসের মধ্যে এসব নৌযানের নির্মাণ শেষে কোস্ট গার্ডের কাছে হস্তান্তর করবে খুলনা শিইয়ার্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।