Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিম্নাঞ্চলে বন্যার অবনতি

উজান থেকে নামছে ভারতের ঢল : খুলে দিয়েছে গজলডোবা বাঁধ প্রধান নদ-নদীসমূহে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত : তিস্তা ও সুরমা বিপদসীমার ঊর্ধ্বে উত্তর-পশ্চিম উত্তর-মধ্যাঞ্চলে পানির অভাবে সেচ দিতে হচ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

অতি বর্ষণের সাথে উজান থেকে আসছে ভারতের ঢল-বান। উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অববাহিকায় নদ-নদীসমূহের উৎসস্থলে ঢল-বন্যার কারণে ভাটিতে দেশে প্রায় সব প্রধান নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার তিস্তা ও সুরমা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কয়েকটি স্থানে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি এসেছে। তাছাড়া উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি পর্যন্ত আরও বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উত্তাল হয়ে উঠেছে। নি¤œাঞ্চলে বন্যার অবনতি ঘটছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল পূর্বাভাসে জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার এবং মধ্যাঞ্চল হয়ে পদ্মা-মেঘনার ভাটি ও মোহনায় রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। পানিবৃদ্ধির সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃত হচ্ছে নদীভাঙন। বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দেয় ভারত। এ কারণে তিস্তাপাড়ের বিস্তীর্ণ উত্তর জনপদ বার বার বন্যা ও পানিবদ্ধতার কবলে পড়ছে। ভারত থেকে উজানের পাহাড়ি ঢলে ফুলে-ফুঁসে উঠেছে সুরমা নদী। এতে করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, জনবসতি, রাস্তাঘাট ডুবে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফল-ফসল, খামার, সবজিক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক। বন্যা পরিস্থিতি কোথাও কোথাও অবনতির আভাস রয়েছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া জানান, গতকাল প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৩টিতে হ্রাস পায়। ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। দু’টি পয়েন্টে তিস্তা ও সুরমা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার প্রধান নদ-নদীসমূহের ৭৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ২৮টিতে হ্রাস পায়। একটিতে (সুরমা) বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার ৭৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩০টিতে হ্রাস পায়। বৃহস্পতিবার ৫৮ স্থানে পানি বৃদ্ধি ও ৪৯টিতে হ্রাস পায়।

এখনো প্রধান নদ-নদীর বেশিরভাগ পর্যবেক্ষণ স্টেশনে পানি বৃদ্ধির দিকে। এরফলে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্য, উত্তর-পূর্ব, মধ্যাঞ্চল থেকে পদ্মা-মেঘনার ভাটি এলাকা হয়ে চাঁদপুর-নোয়াখালী মোহনা পর্যন্ত নদ-নদী, শাখানদী, উপনদী, খাল-খাঁড়িগুলোতে পানির চাপ বেড়ে গেছে।
অনাবৃষ্টিতে জমিতে দিতে হচ্ছে সেচ
অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘোর বর্ষাকালেই অনাবৃষ্টির কারণে পানির অভাব বিরাজ করছে। ফসল ও সবজির জমিতে সেচযন্ত্র দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে কৃষকদের পানির ঘাটতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গতকালও আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জেলা-উপজেলায় তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। কোথাও কোথাও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। এরফলে জমি শুকিয়ে গেছে। খাল-বিলেও কমে গেছে পানি।

নদ-নদী পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পাউবো গতকাল জানায়, দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলসমূহের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

নদ-নদী প্রবাহ পরিস্থিতি
পাউবোর নদ-নদী প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী গতকাল বিকাল পর্যন্ত উত্তর জনপদে তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুধকুমার নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৬৪ সে.মি. নিচে অবস্থান করছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অধিকাংশ স্থানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে কানাইঘাটে বিপদসীমার ১৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে মাত্র দুই সে.মি. এবং সিলেটে ৩৬ সে.মি. নিচে রয়েছে।

গঙ্গা-পদ্মায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাউবোর ৮টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পদ্মার উজানভাগে পাংখায় ৬৬ এবং রাজশাহীতে ১০৮, গোয়ালন্দে ১৯ সে.মি. নীচে রয়েছে।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় নদ-নদীসমূহের উজান অববাহিকায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে- চেরাপুঞ্জিতে ১০২, পাসিঘাটে ৬১ মিলিমিটার। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তওে শেওলায় ১৩০, সুনামগঞ্জে ১২৫, সিলেটে ৯৮, লরেরগড়ে ৯৫, লালাখালে ৮৬, দুর্গাপুরে ৭৪, কানাইঘাটে ৬৩, ছাতকে ৫৫, জাফলংয়ে ৫৩ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিম্নাঞ্চলে বন্যার অবনতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ