Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাবিবুর রহমান : জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা ১৪ বছরেও বাস্তবায়ন না হলেও এবার নতুন করে ভারতের লোকসভা মিউজিয়ামের আদলে জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ভারতে লোকসভা লাইব্রেরি ঘুরে এসে সংসদীয় প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনে জমা দিয়েছে। জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপন করে সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সংসদে দেওয়া ভাষণের পাশাপাশি বাইরের আলোচিত ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ করা হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি কমিটির বৈঠকে ভারতের লোকসভা মিউজিয়ামের আদলে জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ লাইব্রেরির কর্মকর্তারা জানান, লোকসভা লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদলটির জমা দেয়া সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনটি নিয়ে পরে লাইব্রেরি কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে লোকসভা মিউজিয়ামের আদলে জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। লোকসভার মিউজিয়ামে মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুসহ জাতীয় নেতাদের ভাষণ ও অন্যান্য স্মৃতি সংরক্ষণ করা আছে। সেই আদলে সংসদ জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ওই জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু কর্নার নামে একটি কর্নার থাকবে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সংসদে দেয়া সব ভাষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় সংসদের বাইরে দেওয়া আলোচিত ভাষণগুলোও থাকবে। জাতির জনকের বিভিন্ন সময়ের ছবিগুলোও সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ধারাবাহিক ইতিহাসও সংরক্ষণ করা হবে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সম্মতি দেয়ার পরে লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত বছর ভারতের লোকসভা লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদলে সংসদ সদস্য ছাড়াও স্থাপত্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও সংসদ লাইব্রেরির কর্মকর্তারা ঘুরে এসছেন।
এ বিষয়ে লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, বিলম্বে হলেও জাতীয় সংসদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি আলাদাভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংসদ জাদুঘর স্থাপনের মাধ্যমে আমরা সেই কাজটি করতে চাই। লোকসভা লাইব্রেরি ও জাদুঘর পরিদর্শন করে লব্ধ জ্ঞান ও আলোকে কাজও শুরু হয়েছে। এটা স্বীকার করতে হবে যে লোকসভা লাইব্রেরি অনেক উন্নত এবং সেখানে শিক্ষণীয় নানা বিষয় আছে। তারা জাদুঘরকে দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আমরাও সেটা করতে চাই।
জানা গেছে, লোকসভা লাইব্রেরি ও জাদুঘর এক সময় পার্লামেন্টের ভেতরে ছিল। ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে আলাদাভাবে একটি চারতলা ভবন লাইব্রেরি ও জাদুঘরের জন্য নির্মাণ করা হয়। এতে কার পার্কিংসহ প্রায় ৬০ হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে লোকসভার লাইব্রেরি, মিউজিয়াম, কমিটি রুম ও অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে লাইব্রেরির জন্যই রয়েছে ১০ হাজার বর্গমিটার জায়গা, যেখানে ২০০ সংসদ সদস্যের একসঙ্গে পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। লাইব্রেরিটিতে প্রায় ১.৩৫ মিলিয়ন পুস্তক, রিপোর্ট, জার্নাল ও বাইন্ডিং পেপার রয়েছে। জনবলসংখ্যা প্রায় ৩০০।
ভারতের লোকসভা মিউজিয়ামের আদলে জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শুধু স্থাপত্যকলার আভিজাত্য ও নান্দনিকতায় নয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে রয়েছে গর্ব করার মতো এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি। মধ্যে রয়েছে ১৮০৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের বিতর্ক, ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির বিতর্ক, ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ইস্ট পাকিস্তান লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি, পাকিস্তান লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির বিতর্কসহ ঢাকা গেজেট, পাকিস্তান গেজেট। যে কোনো গবেষক ও অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য এ সংগ্রহ অত্যন্ত লোভনীয় ও আগ্রহোদ্দীপক।
লোকসভা লাইব্রেরি ঘুরে এসে সংসদীয় প্রতিনিধিদলের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভা লাইব্রেরিতে ভারতের জাতীয় নেতাদের নামে বিভিন্ন কর্নার রয়েছে। যেমন, গান্ধীজী কর্নার ও নেহরু কর্নার। এ ছাড়া লেটেস্ট বুক কর্নার, শিশু কর্নারসহ সুসজ্জিত ও নয়নাভিরাম নানা কর্নার রয়েছে। ওই লাইব্রেরি পুরোপুরি অটোমেশন করা হয়েছে। লাইব্রেরির নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি কর্তৃক ডিজিটালাইজ ডকুমেন্টস, ই-বুক, ই-নিউজ ক্লিপিংসহ পার্লামেন্টের নিজস্ব প্রকাশনা প্রকাশ করা হয়। লোকসভা লাইব্রেরির অনুমোদিত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ পাবলিশার্সদের কাছ থেকে সরাসরি পুস্তুক ও অন্যান্য প্রকাশনা ক্রয় করে। পরবর্তী সময়ে লাইব্রেরি কমিটি তা অনুমোদন করে। এ ছাড়া প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অব বুক অ্যাক্ট-১৮৬৭-এর আওতায় প্রকাশক প্রতিটি বইয়ের কপি লোকসভা লাইব্রেরিতে জমা দেন। লোকসভা লাইব্রেরিতে রেফারেন্স, গবেষণা বিভাগসহ মোট সাতটি বিভাগ রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের মাত্র চারটি কক্ষ ও সংসদ সদস্যদের পড়ার ঘর নিয়ে গ্রন্থাগার ও গবেষণা অধিশাখা গড়ে উঠেছে। সংসদ লাইব্রেরিতে প্রায় ৯০ হাজার পুস্তক, রিপোর্ট, জার্নাল ও বাইন্ডিং পেপার রয়েছে। আর কলেবরও তুলনামূলক বেশ ছোট। এখানে মাত্র ৫০ জন সংসদ সদস্য একসঙ্গে বসতে পারেন। লাইব্রেরির অটোমেশন কাজটি প্রক্রিয়াধীন। স্বল্প পরিসরে সংসদ বিতর্কগুলো ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে। আর নিয়ম মাফিক ই-নিউজ ক্লিপিংয়ের কাজ চলছে। জাতীয় সংসদ লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগার ও গবেষণা অধিশাখায় গ্রন্থাগার শাখা, গবেষণা ও শিক্ষা শাখা এবং টেকনিক্যাল শাখা নামে তিনটি শাখা আছে। এ অবস্থায় লাইব্রেরি ও জাদুঘরের জন্য আলাদা ভবন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে টিআইবির এক জরিপে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের ৯৩.৯০ শতাংশ সংসদ সদস্য লাইব্রেরি ব্যবহার করেন না। আর যখন অধিবেশন থাকে না, তখন অবস্থা আরও খারাপ। জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালে শতকরা হিসাবে লাইব্রেরি ব্যবহার করেন মোট সংসদ সদস্যের মাত্র ৭.১০ ভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ