Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা জোগাতে শিশু অপহরণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীর খিলগাঁও নন্দীপাড়া থেকে জিসানুল ইসলাম আকাইদ (৫) নামে এক শিশুর গলাকাটা গলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তির নাম মো. সেলিম। তিনি ঝালকাঠি সদরের লেসপ্রতাপ বয়াতিবাড়ির মো. এনায়েত বয়াতির ছেলে। পেশায় রিকশাচালক সেলিম সবুজবাগ থানার মাদারটেক শান্তিপাড়ার এ/পি-বাসা নং-৯১/১১/ডি বাসায় থাকতেন।

পুলিশের দাবি, কিডনি ও টিউমারে আক্রান্ত স্ত্রীকে বাঁচাতে সেলিমের প্রয়োজন ছিল বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা। সে টাকা জোগাড় করতে না পেরেই শিশু জিসানকে অপহরণ ও হত্যা করে বাসার মালিককে বিপাকে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন সেলিম।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ বলেন, শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদ গত শুক্রবার বিকেলে বাসার সামনে ৫-৬ জন বাচ্চার সঙ্গে খেলতে যায়। অন্য বাচ্চারা খেলা শেষে বাসায় ফিরে গেলেও জিসান বাসায় ফেরেনি। পরে ছেলেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন বাবা আব্দুল মালেক। ছেলের সন্ধান না পেয়ে খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (জিডি নং ৩৯৬)।

জিডির পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক টিম গঠন করে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। স্থানীয় এবং আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে জানা যায়, শিশু জিসানকে অজ্ঞাত রিকশাচালক রিকশাযোগে নুর মসজিদের দিকে নিয়ে যায়। পরে জিসানের বাবা অপহরণের অভিযোগে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-১১।

ডিসি আব্দুল আহাদ বলেন, মামলার পর একাধিক টিম গঠন করে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অপহৃত শিশুকে উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ভিডিওগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অজ্ঞাত রিকশাচালক অপহৃত শিশুটিকে রিকশাযোগে নিয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি খিলগাঁও থানা ও আশপাশের থানা এলাকার রিকশার গ্যারেজগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এর আগে গত সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে খিলগাঁও থানার মধ্য নন্দীপাড়া নূর মসজিদ গলির ৫ম তলা ভবনের ২য় তলা থেকে একটি বাচ্চার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট নমুনা সংগ্রহ করে। খবর পেয়ে বাবা-মা এসে শনাক্ত করেন লাশটি অপহৃত শিশু জিসানের। পরে ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে খিলগাঁও থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিকশা, অপহরণের সময় অপহরণকারীর পরিহিত টিশার্ট ও লুঙ্গি, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃতক্ষুর জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সেলিম পেশায় রিকশাচালক। দীর্ঘদিন যাবত কিডনি রোগে আক্রান্ত তার স্ত্রী নুপুর আক্তার, পেটেও রয়েছে টিউমার। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক টাকা। সে টাকার জোগান না পেয়ে বাড়ির মালিক বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা ধার চান। না পেয়ে পরিকল্পনা করেন বিপদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেবেন। এজন্য তিনি গত ৪ আগস্টক্ষুর কেনেন। ৬ আগস্ট তিনি মধ্য নন্দীপাড়া ২নং রোডে রিকশা নিয়ে যান এবং সেখানেই শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদকে (৫) ফুসলিয়ে তুলে নিয়ে গলাকেটে হত্যার পর বাসার মালিকের দ্বিতীয় তলায় রেখে যান। সেলিমের পরিকল্পনা ছিল বাসার মালিক বাবুলকে বাসা পরিষ্কার করতে হবে। লাশ দেখতে পেলে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে লাশটি বাড়ি থেকে সরানোর চিন্তা করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ