পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : আর মাত্র কয়েকদিন এরপর কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে ইলিশ ধরা। তাই এখন থেকে ইলিশ মজুদের জন্য উৎসবমুখর মীরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইলিশঘাট। আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কিন্তু তবুও দাদন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে চড়াদামের দাপটে আসেনি সাধারণ দরিদ্র ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে ।
সে দিন দুপুরে সবার চোখ নদীর দিকে কখন আসবে ট্রলার। কারণ সাগর থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে বিকেল ৩টায় ঘাটে ফিরবে জেলেরা। তারপর সেখান থেকে পছন্দ করে মাছ কিনবেন তারা। অপেক্ষার পালা শেষ একে একে ঘাটে ভিড়লো ২৭টি ইঞ্জিন চালিত বোট। সকল জেলের মুখে সাফল্যের হাসি। কারণ বিগত কয়েক বছরের তারা এমন ইলিশ সাগরে পায়নি। বোট থেকে মাছ বেড়িবাঁধের উপরে নিয়ে আসার পর মাছের ডাক হাঁকেন জেলেরা।
ডাকে যে বেশি দাম বলবে তার কাছে ইলিশ মাছ বিক্রি করবেন জেলেরা। এমন দৃশ্য এখন নিয়মিত চোখে পড়ে মীরসরাই উপজেলার উপকূলীয় সাহেরখালী, ডোমখালী ও বগাচতর ঘাটে।
মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট, সীতাকুÐের আড়তদার ছাড়াও শত শত মানুষ ঘাট থেকে ইলিশ কেনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। সাহেরখালী ঘাটে ইলিশ ক্রয় করতে বারইয়ারহাট বাজার থেকে ছুটে আসেন ব্যবসায়ী শাহদাত হোসেন সাদেক। তিনি প্রায় ২০ কেজী ইলিশ ক্রয় করেছেন। সাদেক বলেন, আড়তে মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু ঘাট থেকে তরতাজা মাছ কেনার মজাই আলাদা। শুধু সাদেক নয় প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসে মাছ কিনে নিচ্ছেন শত শত মানুষ। দাম কিন্তু কম নয় একটু বড় সাইজ হলেই কেজিতে ৫০০ থেকে হাজার টাকার কম নয়।
তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাসি ফুটেছে উপকূলীয় জেলেদের মুখে। সাগরে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে জেলে পরিবারে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়তদারসহ মৎস্য ব্যবসায়ীরা। ২৪ ঘণ্টাই বেচাকেনা চলছে ইলিশের। জেলেদের মুখে হাসি এলেও দাম কম না হওয়ায় সাধারণ দরিদ্র ক্রেতাদের মুখে অনাবিল হাসি এখনো দেখা যাচ্ছে না। প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক প্রিয়তোষ চক্রবর্তী বলেন, আমিও মাছ কিনতে এসেছিলাম। ভেবেছি সস্তায় পাবো। কিন্তু কই অন্তত: কয়েক হাজার টাকা না হলে মন ভরে কয়েকটা বড় ইলিশ তো জুটবে না।
আড়তদার নুরুল আবছার বাবুল জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশের আকারও বেশ বড়। এখন পাঁচশ’ গ্রাম সাইজের প্রতি হালি (৪টি) ইলিশের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, এক কেজি সাইজের প্রতি হালি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর মাত্র কয়েকদিন, এর পরই বন্ধ থাকবে ইলিশ ধরা। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ এরপর আর কয়েক দিন গেলেই ২৪ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। তাই এ সুযোগে যে যা পারছে ইলিশ কিনে মজুদ করছে। দাম নাগালে থাকায় ইলিশ কিনে খুশি সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকার জেলেরা এখন ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। কিছুদিন আগে নদীতে ইলিশের আকাল থাকলেও বর্তমানে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় তারা ভীষণ খুশি। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত সন্ধীপ চ্যানেল ও বঙ্গোপসাগর উপকূলের জেলে পরিবারগুলো এবং ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত।
সাহেরখালী ঘাটে কথা হয় নবারুন জলদাশ, জদু জলদাশ ও পলব জলদাশের সাথে। তারা বলেন, বিগত ৫ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ পেয়েছি। ভালো দাম পাওয়ায় তারা খুশি। প্রতিবছর এই মৌসুমে এমন মাছ পেলে আমাদের ভালোই দিন চলে যেতো।
এখানকার আড়তদার রফিকুল ইসলাম জানান, এবার জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় আনন্দের কমতি নেই। এভাবে চলতে থাকলে সবার ভাগ্য বদলে যাবে। বর্তমানে মাছের দর উঠা-নামা করছে। ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে এক পন (৮০টা) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার টাকা করে। মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের আশা, নদীতে এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে গত কয়েক বছরের দেনা পরিশোধ করে লাভের মুখ দেখতে পারবেন তারা। তিনি আরো বলেন, এখন প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।
একাধিক জেলে অভিযোগ করেন, সাগরে মাছ পেলেও সড়কের বেহাল দশার কারণে সময়মতো আড়তে পৌঁছা সম্ভব হয় না। সাহেরখালী ঘাট থেকে আড়তে যাওয়ার পথ নিজামপুর-সাহেরখালী বেড়িবাঁধ সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। তারা দ্রæত সড়ক সংস্কারের জোর দাবি জানান।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জাটকা নিধন প্রতিরোধের কারণে এবার মাছের আকার বড় হয়েছে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ ও জেলেদের পুনর্বাসনসহ মৎস্য অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ইলিশের উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাটকা আহরণ পুরোপুরি বন্ধ করা গেলে ইলিশের সেই সোনালী দিন আবার ফিরে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।