পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে আজ। কাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন সংখ্যার সমান যাত্রী নিয়ে চলবে সব ধরনের গণপরিবহন। সড়কপথে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক গাড়ি চলতে পারবে। খুলবে দোকান-শপিংমল ও খাবারের দোকান। এদিকে, টানা কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে শ্রাবণের বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, জুরাইন, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, ভাটারা, জুরাইন, শ্যামপুরসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার করুণ দশা। একই অবস্থা দেশের মহাসড়কগুলোতেও। অথচ কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলে বিধিনিষেধের মধ্যে এসব সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার করতে পারতো।
শুধু বৃষ্টি নয়, রাজধানীর রামপুরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, মিরপুর, কাফরুলসহ বেশ কিছু এলাকায় ড্রেনেজের কাজ চলছে। সেগুলোও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বন্ধ ছিল। কাল থেকে সব কিছু খুলছে। তখন মানুষের চলাচল বাড়বে। রাস্তায় নামবে হাজার হাজার যানবাহন। এতে করে নতুন করে ভোগান্তির দেখা পাবে রাজধানীবাসী।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তখন ২৩টি শর্ত দেয়া হয়। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হয়। পরে কিছুটা শিথিলতা এনে বিধিনিষেধের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সে হিসাবে আজ টানা ১৯ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯ দিন ধরে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে কিছুটা হলেও ফল মিলেছে। সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে বা বেড়েছে কঠোর বিধিনিষেধ না দিলে তার চেয়েও বেশি হতো। তবে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে গত মাসে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এই সুযোগে ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছে মানুষ। প্রাইভেট কার, মাইক্রো, বাসে, লঞ্চে কিংবা ফেরিতে গাদাগাদি করে গ্রামে গেছেন ঈদ উদযাপন করতে। আবার ঈদের পরের কয়েকদিনে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই একইভাবে ঢাকায় ফিরেছে মানুষ। এতে করে সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কোরবানির পশুর হাটেও পশু কিনতে মানুষ ভিড় করেছে। মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।
সে সময় কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল ঘোষণার পরেই কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বলেছিলেন, শিথিলতার এ নির্দেশনায় তাদের ‘সায়’ ছিল না। তারা জানান, সরকারের শিথিল বিধিনিষেধের এ ঘোষণা তাদের পরামর্শের উল্টো চিত্র। এ সময় এ ধরনের শিথিলতা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ারই শামিল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর যেখানে বারবার ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলছে, সেখানে সংক্রমণের ‘পিক টাইম’-এ এ ধরনের ঘোষণা আমাদের আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে। সে আশঙ্কাকে সত্যি করে দেশে ঈদের পর থেকে দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর একের পর এক রেকর্ড দেখতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
এদিকে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ১ আগস্ট রোববার থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঈদের পরও যেসব পোশাক কর্মী গ্রামে অবস্থান করছিলেন এমন খবরে তারা দলে দলে ঢাকায় আসতে শুরু করেন। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পিকআপ, ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও রিকশায় রওনা করে ভোগান্তি নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে ছুটছেন গন্তব্যের পথে। আবার অনেকে গাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করেছেনন দীর্ঘক্ষণ। এ অবস্থা অনুধাবন করে পরদিন অবশ্য অর্ধদিবসের জন্য লঞ্চ ও দূরপাল্লার বাস চালু করা হয়।
এদিকে, টানা ১৯ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে প্রথম ৫ দিন গেছে সত্যি সত্যিই কঠোর। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ছিল কঠোর। চেকপোস্টগুলোতে কড়াকড়ির কারণে উপযুক্ত কারণ দর্শানো ছাড়া কেউই ছাড় পাননি। রাজধানীতে গাড়ি চলাচল করেছে খুবই কম। কিন্তু ৬ষ্ঠ দিন থেকে চেকপোস্টগুলোতে ঢিলেঢালা ভাব থাকায় ক্রমেই বাড়তে থাকে যানবাহন। যানবাহনের ভিড়ে রাজধানীতে দেখা দেয় যানজট। তবে এবারের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রাজধানীর মার্কেট, শপিংমলগুলো একেবারেই বন্ধ ছিল। পাড়া মহল্লাগুলোতে দোকান খুললেও নিয়ম মেনে বিকাল ৩টার পর সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। হোটেলগুলো খোলা থাকলেও মানুষ বসে খাবার খাওয়ার সুযোগ পায় নি। রাত ৯টার পর পাড়া মহল্লাগুলোর রাস্তায় বাতি জ্বলতেও দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ যদি সঠিকভাবে পালন হয়, তাহলে হয়তো একটা ভালো সুফল আগস্টের শেষের দিকে আমরা পাবো।
এ প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, যেভাবেই হোক লকডাউন বা বিধিনিষেধ পালিত হয়েছে। এর একটা সুফল অবশ্যই আমরা পাচ্ছি। তবে ঈদের সময় এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন তুলে নেয়াটা ঠিক ছিল না। সে সময় লকডাউন না তুললে পরিস্থিতি হয়তো আরও ভিন্ন হতে পারতো।
এদিকে, বিধিনিষেধের গত ১৯দিনে রাজধানীতে প্রায়ই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে অনেক এলাকায় পানি জমে রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো কোনো রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বিধিনিষেধের কারণে সেদিকে নজর দেয়া হয়নি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তাগুলো নষ্ট হওয়ার পর কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। তবে শাখা রাস্তাগুলো আগের মতোই বেহাল। রামপুরা এলাকায় ড্রেনেজ ও বিদ্যুতের লাইনের কাজে জন্য রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। বিধিনিষেধের মধ্যে সেগুলো মেরামত করা যেতো অনায়াসে। এদিকে,ঢাকা দক্ষিণ সিটির নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টির পানি জমে কোনো কোনো রাস্তা খালে পরিণত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় যে কয়টি ইউনিয়ন নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে তার মধ্যে উত্তরখান, দক্ষিণখান নিয়ে গঠিত ৮টি ওয়ার্ডের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এই নতুন ওয়ার্ডগুলোর রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আঙ্গুল তুলে কথা বলে। সড়কগুলো দিয়ে চলতে গেলে মনে হয় এগুলো সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা নয়। সড়কগুলো যেন মরণফাঁদ, মানুষ মরার গ্যাঁড়াকল। স্থানীয়দের অভিযোগ, উত্তরখান ও দক্ষিণখান ঢাকা ১৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত হলেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি এখানে। অসুস্থ রোগীকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেলে রোগী মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে যায়। গর্ভবতী মায়েরা এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হয়। এরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এবারের শ্রাবণের বৃষ্টিতে মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। স্থানীয়দে অভিযোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন না করায় পানি দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে। এই নতুন ওয়ার্ডগুলোর অধিকাংশ রাস্তা মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে, কোথাও কাঁচা রাস্তায় ইটের সলিং ভেঙ্গে বিরাট বিরাট গর্তে পরিণত হয়েছে। এ সমস্যাগুলোর মধ্যেই প্রতিদিন পথ চলতে হচ্ছে উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার ৮টি ওয়ার্ডের লাখো জনগণের। পুলিশ ফাঁড়ি থেকে জয়নাল মার্কেট। গণকবরস্থান থেকে চৈতি গার্মেন্টস এর সড়ক, দক্ষিণখানের হলান অটোস্ট্যান্ড থেকে উত্তরা টেম্পোস্ট্যান্ড, হলান অটো স্ট্যান্ড থেকে আশকোনা প্রাইমারি স্কুল, উচ্চারটেক মেডিকেল রোড, দক্ষিণখান থেকে কসাইবাড়ি রোড, পন্ডিতপাড়া থেকে শোনার খোলা সিটি কমপ্লেক্স রোড, দক্ষিণখান থেকে মাজার রোড, উত্তরখান চাঁনপাড়া থেকে মাস্টারপাড় রোড, চাঁনপাড়া থেকে আটিপাড়া রোড, বড়বাগ থেকে কুড়িপাড়া মেইন রোডে, মাস্টারপাড়া হতে শাহী মসজিদ, চামুরখান থেকে মাজার রোড, দোবাইদা থেকে সাইনবোর্ড, আটপাড়া থেকে রাজাবাড়ী, কাচকুরা বাজার থেকে বাওথার পর্যন্ত সড়কগুলোর একেবারেই বেহাল দশা। অল্প বৃষ্টিতেই ঘরবন্দি হয়ে যায় লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া অভ্যন্তরীণ চলাচলের রাস্তাগুলোর আরোও খারাপ অবস্থা এ রাস্তাগুলোতে হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী। এলাকার একাধিক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের এই ইউনিয়ন দুটি সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নেওয়ায় আমাদের নিয়মিত ট্যাক্স বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেগুলো পরিশোধ করছি কিন্তু আমাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। ফায়দাবাদ এলাকায় বসবাসকারী খবির উদ্দিন বলেন, লকডাউনের মধ্যে সব কিছু বন্ধ ছিল। তখন ইচ্ছা করলেই সিটি করোপোরেশন এসব রাস্তা মেরামত করতে পারতো। এ এলাকার সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় কোমর পানি হওয়ায় আমাদের চলাচলে অত্যধিক কষ্ট হয়। এলাকা রাস্তাঘাটগুলো উন্নয়নের দিকে সরকারের নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
অনেকরই অভিযোগ, দায়িত্ব নিয়ে এলাকার অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি এলাকার কাউন্সিলররা। অকপটে স্বীকার করে তারা বলেন, এলাকার উন্নয়নে কোনো বাজেট পাননি তারা। সিটি করপোরেশন বলছে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে মহাপরিকল্পনা আছে। এবছরই শুরু হবে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ১৮টি ওয়ার্ডকে আমরা সত্যিকার অর্থেই মেইন স্টিমিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে উন্নয়ন করতে চাই। এই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এখানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজটি বাস্তবায়ন হবে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইউনিয়নগুলোকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সময়সাপেক্ষ। তবে মহাপরিকল্পনার আওতায় সড়কের আয়তন নির্ধারণ, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ, পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ শুরু হলে এলাকার বাসিন্দারা সুফল পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।