পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে মানুষের আয়, কর্মসংস্থান ও মজুরি কমছে; অন্যদিকে খাদ্যমূল্যের দাম বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের তথ্য বলছে রেমিট্যান্সের পতন ঘটেছে, এতদিন রেমিট্যান্সের যে জাদু ছিল, সেটা সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। আর তাই অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাসের নিচে কালোছায়া আছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, প্রত্যাশা ছিল করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা ও অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে পরিকল্পিত বাজেট হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তেমন কিছুই রাখা হয়নি। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ বাস্তবায়ন : পিছিয়ে পড়া মানুষরা কীভাবে সুফল পাবে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ মতামত তুলে ধরা হয়।
এ সময় আলোচনায় অংশগ্রহণ করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিদায়ী অর্থবছরের তথ্যউপাত্ত এবং বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে মাত্র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত ভালো নেই। আয় ও মজুরি কমায় মানুষের ভোগ কমেছে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে আরও মানুষ যুক্ত হওয়ার চাপ বাড়ছে। নাগরিক প্লাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য, বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন কোর গ্রুপের সদস্য ও স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্যাচার্য বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের অর্থনীতির সব থেকে শক্তিশালী জায়গা ছিল বৈদেশিক খাত। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাসের উৎস বলছে এই বৈদেশিক খাতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে। আমরা দেখছি, জুলাই মাসে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ রফতানি পতন ঘটেছে। আর রেমিট্যান্স আয়ে ২৮ শতাংশ পতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একমত হবেন- রেমিট্যান্স খাতের যে জাদু সেটা সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ মানুষ গেছে কম, এসেছে আগের চেয়ে বেশি। রফতানিতে আমরা আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারব কি-না, সেটা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। তিনি বলেন, এসবের মধ্যে সরকার নতুন মুদ্রানীতি দিয়েছে। মুদ্রানীতি সঠিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সার্বিক চাহিদা বৃদ্ধি করার জন্য আরও বেশি তারল্য অর্থনীতিতে দেয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের সুদের হার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সঠিক বলে আমি মনে করি। মুদ্রানীতির দুর্বলতা হিসেবে তিনি বলেন, মুদ্রানীতির সব থেকে বড় দুর্বলতা মুদ্রানীতিতে ব্যক্তিখাতের ঋণের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে, তার কাছে যেতে পারছে না। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীসহ অনেকে বলেছিলেন- সুদের হার কমিয়ে দিলে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে। এই তত্ত্ব যে সঠিক ছিল না, এটা আজকে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। স্প্রেড চার শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এরপরও ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিলের রেট বাড়িয়ে এই তারল্য তুলে নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এটা রোগের সমাধান না, রোগের যে উপসর্গ আছে তা আপনি দেখাশোনা করছেন। চেষ্টাটা হতে হবে তারল্যকে অর্থনীতিতে সঞ্চালন করা।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে সা¤প্রতিককালে অর্থনীতির উচ্ছ্বাসের নিচে যে কালোছায়া আছে, সেটা হলে আমাদের ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কোনোভাবেই আমরা বাড়াতে পারছি না। এ বছর যে হিসাবটি প্রাথমিকভাবে এসেছে, সেটা গত বছরের থেকে আরও ২-৩ শতাংশ কমে গেছে। অর্থাৎ ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ নেমে গেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন হার। ড. ভট্টাচার্য বলেন, ২০২০-২১ হিসাব বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, যা পরবর্তীতে সংশোধন করে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে এই ৫ দশমিক ২০ শতাংশ কোনো অবস্থায়ই টিকবে না। আমরা আগেই সমালোচনা করেছিলাম প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিসংখ্যানটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা কিছু পুনরুদ্ধার দেখছিলাম। কিন্তু শেষ তিন মাসে এসে আমরা দ্বিতীয় ধাক্কায় পড়েছি। গত তিন মাসের যে পরিস্থিতি, লকডাউন, যে স্থবিরতা ও মৃত্যুর প্রতিফল কিন্তু নেই (প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাতে)। সুতরাং ৫ দশমিক ২০ অবশ্যই কমবে। এ সময় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রশংসা করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখন পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তত্ত¡ দিয়েছে, তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে সুস্থতা ফিরে এসেছে। বিবিএস’র বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব একমাত্র বিবিএস’র করা উচিত, তা পুনঃস্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, স¤প্রতি ১৬০০ পরিবারের ওপর আমরা জরিপ চালিয়েছি, তাতে পরিষ্কার আমরা দেখতে পারছি- ৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ খাদ্যের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। ঋণ নিচ্ছে ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ। ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ প্রোটিন খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তারা আর মাছ-গোশত খাচ্ছে না। কেউ কেউ তিন বেলার বদলে একবেলা বা দুই বেলা খাচ্ছেন। ১০ শতাংশ মানুষ শিশুখাদ্যও কমিয়ে দিয়েছে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এদেরকে যদি প্রত্যক্ষভাবে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা না দেয়, তাহলে এই মানুষগুলো শুধু দারিদ্র্য ও বৈষম্যের শিকার হবে না, পরবর্তী প্রজন্ম আরও বেশি পুষ্টিহীনতাসহ শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বড় হবে। এটা জাতীয় একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। সুতরাং সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সরকার এ পর্যন্ত ৩০টি বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা তৎপরতা করেছে। এর পরিমাণ ১ লাখ ২৮ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আর্থিক সহায়তা ও খাদ্য সহায়তা খুবই কম। ৩০টির মধ্যে ১৩টি আর্থিক সহায়তা নিয়ে কথা বলে এবং ৪টি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি। এই ১৩টা ও ৪টি যোগ দিলে দেখা যাবে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৯৪ কোটি টাকার যে হিসাব দেয়া হচ্ছে তার মাত্র ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাকি প্রায় ৮০ শতাংশই হাইব্রিড অর্থাৎ সুদ ভিত্তিতে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার সা¤প্রতিককালে বিশেষ করে ২০২০-২১ সালে প্রণোদনার যে বড় হিসাবটা ঢুকিয়েছে, তার ভেতরে এমন সব প্রকল্প আছে যেগুলো আদৌ প্রণোদনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য না। সরকার একটা বড় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প করেছে। এটাকে প্রণোদনা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমি এটা মেনে নিতে রাজি না। এটা সরকারের সাধারণ উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ। সরকার যে ধান-চাল সংগ্রহ করে, সেটাকে প্রণোদনা হিসেবে দেখাতে চায়, আমি এটা গ্রহণ করতে রাজি না। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে সরকার এই মুহূর্তে ঘর নির্মাণ করছে, এটাকে প্রণোদনার মধ্যে ঢোকানো হচ্ছে, এটা আদৌ কোভিড প্রণোদনার অংশ হতে পারে কি-না, আমার সন্দেহ আছে।
নাগরিক প্লাটফর্মের কোর গ্রæপের সদস্য সুলতানা কামাল বলেন, আশা করেছিলাম এবার পুনরুদ্ধারের বাজেট হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তেমন কিছু নেই।
কোভিড পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজাতে একটি স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন নাগরিক প্লাটফর্মের কোর গ্রæপের সদস্য ও স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ মুশতাক রাজা চৌধুরী।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষকদের টিকার আওতার আনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কত শতাংশ শিক্ষক টিকা পেলেন, তা তদারকিতে আনতে হবে। কারণ, সব শিক্ষককে টিকার আওতায় আনতে না পারলে কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলি।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাজেটের অর্ধেক বরাদ্দ হলো সরকারি কেনাকাটা। সরকারি ক্রয় খাত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তিনি বলেন, এবারে বাজেটে পিছিয়ে পড়া গরিব ও অসহায় মানুষদের বাইরে রাখা হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দের কথা বলা হলেও কীভাবে তা ব্যয় হবে, সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটুকু থাকবে, সে বিষয়টি দেখা যায়নি। এছাড়া দুর্নীতির প্রতিরোধে বাজেটে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আমি মনে করি এ বছর বিব্রতকর, দুর্নীতিবান্ধব, বৈষম্যমূলক ও কালো টাকা সহায়ক বাজেট হয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া মানুষকে কীভাবে সহায়তা করবে বাজেটে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেখতে পাই না।
করোনার কারণে গরিব পরিবারের আয় কমেছে, তারা আরও গরিব হয়েছে বলে মনে করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, প্রবৃদ্ধির ধরন দেখলে বোঝা যায় বৈষম্য বাড়ছে। প্রবৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষের অংশগ্রহণ কমেছে। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ছোট ও মাঝারি শিল্প মাসের পর মাস পরিচালনায় নেই, যা কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।