Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অক্টোবরের মাঝামাঝি ঘোষণা দাম বাড়বে গ্যাসের, কমবে তেলের

প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩০ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : অক্টোবরের মাঝামাঝি জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করবে সরকার। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় দ্বিতীয়বারের মতো দাম সমন্বয়ের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে মোতাবেক আরও একদফা ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম কমানো হবে। তবে বাড়বে গ্যাসের দাম। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
জ্বালানি তেলের দাম কমা এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তবে কী হারে তেলের দাম কমানো হবে এবং গ্যাসের দাম বাড়বেÑ সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। শুধু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কানাডা ও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে গতকাল (শুক্রবার) তিনি দেশে ফিরেছেন। দুই সপ্তাহের সফরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গত দুই বছর ধরেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়তির দিকে। গত তিন মাসে দাম কিছুটা বাড়লেও অশোধিত তেলের দাম এখনও ব্যারেল প্রতি ৫০ ডলারের নিচে। আগামী দুই বছরে তেলের দাম খুব বেশি বাড়বে না বলেও পূর্বাভাস মিলেছে।
তেলের দাম কমায় দুই বছর ধরেই সরকারের ব্যাপক লাভ হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন দুই বছরে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি লাভ হয়েছে। তবে বিপিসির পুঞ্জীভূত লোকসান এখনও রয়ে গেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।


বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় বাংলাদেশেও মূল্য সমন্বয়ের দাবি জানিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত এপ্রিলে ধাপে ধাপে তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। সেদিন পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটারে ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরসিনের দাম কমানো হয় ৩ টাকা।
সে সময় তেলের দাম কমিয়ে এর প্রভাব পর্যালোচনা করে দাম কমানোর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছিল সরকার। তবে এই তেলের দাম কমানোর সুফল পায়নি সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লার বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা করে কমানোর সিদ্ধান্ত হলেও ভাড়া কমানো হয়নি। ফলে ভাড়া যা ছিল তা দিয়েই সাধারণ মানুষ বাসে যাতায়াত করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিবহন মালিকদের বলবো, তেলের দাম কমানো হলে তারা যেন ভাড়াটাও সমন্বয় করেন। আমরা তেলের দামের অ্যাডজাসমেন্টে যাব, কিন্তু সাধারণ মানুষ তার সুফল পাবে নাÑ এটা মেনে নেয়া যায় না।
এদিকে, সরকার সব ধরনের গ্যাসের দাম আবারও বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়বে আবাসিক খাতের গ্যাসের দাম। আবাসিক খাতে দুই চুলার ক্ষেত্রে দাম বাড়বে সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ পর্যন্ত এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে।
দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার দায়িত্ব¡শীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রস্তাব ইতিমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছে। এখন তারা ওই প্রস্তাব এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা দেবে। এরপর কমিশন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবে।
উল্লেখ্য, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম রেগুলেটরি কমিশন বাড়ানোর ঘোষণা দেবে না। এটা সরকার নির্বাহী আদেশে বাড়াবে। এ জন্য কেবল কমিশনের মতামত নেবে। তবে তা আগে জানানো হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের জন্য বর্তমান দাম ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হচ্ছে। বৃদ্ধির হার ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর এক চুলার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর হার ১১২ দশমিক ৫০ শূন্য শতাংশ।
আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম বর্তমানে ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে এটা ২৩৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
আবাসিক খাতের পরেই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য মালিকদের নিজস্ব উৎপাদিত) উৎপাদনে। বর্তমানে ১ হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
সিএনজির দাম বাড়বে ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে সিএনজির প্রতি ১ হাজার ঘনফুটের দাম ৮৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা করা হচ্ছে ১ হাজার ১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা।
শিল্পে বর্তমানে প্রতি ১ হাজার ঘনফুটের দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ২২০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ২৬৮ টাকা ৯ পয়সা, এটা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সিএনজি খাতে গ্যাসের দাম এখন ৬৫১ টাকা ২৯ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ৯০৫ টাকা ৯২ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ। চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের বর্তমান দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা করা হচ্ছে ২০০ টাকা। বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাস দেয়া হয় বর্তমানে সে রকম প্রতি ১ হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা। এটা হচ্ছে ৮৪ টাকা, বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
সার উৎপাদনে বর্তমানে প্রতি ১ ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭২ দশমিক ৯২ টাকা। এটা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৮০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, এবারই প্রথম দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্পদ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা ধার্য করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছেন। এর ফলে বাপেক্সসহ বিভিন্ন গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি যে গ্যাস উত্তোলন করে, তার ওপর এই দাম ধার্য হবে। এখন পর্যন্ত উত্তোলনকারী কোম্পানিকে উত্তোলিত গ্যাসের জন্য কোনো দাম দিতে হয় না। এই অর্থ রাষ্ট্র পাবে।
এর আগে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে সরকার সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল। আর গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের ১ আগস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অক্টোবরের মাঝামাঝি ঘোষণা দাম বাড়বে গ্যাসের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ