পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের গ্রীষ্মই ছিল কাশ্মীরের সবচেয়ে বেশি রক্তরঞ্জিত। উপকথার এই উপত্যকায় কোথাও কোনো উৎসব নেই, যা আছে তা হল নিষ্ঠুরতা, ন্যায়বিচারহীনতাও এক মূক, উপেক্ষিত জগতের কান্না ও আহাজারি।
কর্তৃপক্ষ ঈদুল আজহার দিনেও কারফিউ দিয়ে রেখেছিল। কাশ্মীরীরা পশু কোরবানি দিতে পারেনি, নিজেদের কোরবানি দিয়েছে, তাদের ভাষায় আজাদির জন্য। সেদিন ২ জন নিহত হয়। একজন ছিল ১১ বছর বয়স্ক নাসির শফি। তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয়। নাসিরের ক্রন্দনরত পিতার আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, কি অপরাধ ছিল আমার ছেলের?
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য যে যারা নিহত হচ্ছে তারা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী যা কিনা বাস্তবতার সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি।
কাশ্মীরে সৃষ্ট তথাকথিত হুমকি মোকাবেলায় নয়াদিল্লী সেখানে আরো সৈন্য প্রেরণ করেছে। বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ভারত সরকার কাশ্মীরের জনগণ ও সেখানে বিরাজিত বাস্তবতা থেকে দূরে রয়েছে।
বিপুল জনসংখ্যা ও শক্তিসম্পন্ন দেশ ভারত প্রত্যেকেই যা জানে সেই সত্যটি অস্বীকার করে নিজের ক্ষতি করছে। তা হচ্ছে কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রয়োজনীয়তা।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভারতীয় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই তাদের সরকারের যুক্তি সম্পর্কে সাহসের সাথে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভারতের প-িত পঙ্কজ মিশ্র ২০১০ সালে লিখেছিলেন : “অতুলনীয় সৌন্দর্যের জন্য একসময় বিখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকা এখন বিশে^র বৃহত্তম, রক্তাক্ত ও সবচেয়ে খারাপ সামরিক দখলদারির স্থান।”
কাশ্মীরে অশান্তির প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লীর জবাব নির্মম যার মধ্যে রয়েছে গণধর্ষণ ও বলপূর্বক নিখোঁজ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে গণকবরে ২৭০০ জনেরও বেশি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ভারতের কংগ্রেস দলের এক সিনিয়র নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সবাইকে বিস্মিত করে বলেছেন, কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
অন্যদিকে বুকার পুরস্কার জয়ী প্রখ্যাত ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতী রায় ২০১০ সালে বলেছিলেন, কাশ্মীর কখনোই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল না। এছাড়া শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী স্বামীনাথন আইয়ার, গৌতম নভলাখা, অঙ্গনা চ্যাটার্জি ও বীর সাংভি এবং আরো অনেকে বলছেন, এখন ভারতের সময় এসেছে কাশ্মীরে গণভোট দেয়ার।
ব্রিটিশরা ১৮৪৬ সালে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের আগেই কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবি বিদ্যমান ছিল। রাজনৈতিক চলবাজির মাধ্যমে এই আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের অনিবার্য বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে শান্ত করা বা অন্যদিকে চালিত করা হয়। তবে তা কখনোই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। কাশ্মীরের সম্মিলিত সামাজিক বোধ এ মনোভাবকে চলমান রেখেছে যদিও তার তীব্রতা কমেছে বা বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতারই প্রকাশ এবং বিস্ফোরক কাশ্মীরী প্রতিবাদ বিক্ষোভের পূর্বানুমানের ব্যর্থতা নয়াদিল্লীকে বিস্ময়বিমূঢ় করেছে।
স্বীকার করুক আর না করুক, সন্দেহ নেই যে ভারত পাথর ও শক্তমাটির মধ্যে রয়েছে। যদি সে এ সুযোগ গ্রহণ করে তাহলে সুবিধাজনক ফল পাবে যা তার স্বার্থ উদ্ধার করবে।
কাশ্মীর বিষয়ে আলোচনায় নয়াদিল্লী যদি পাকিস্তান ও সর্বদলীয় হুররিয়াত সম্মেলনকে অন্তর্ভুক্ত করে তাহলে নৈতিক উচ্চ অবস্থান নিশ্চিত করবে। অন্যথায় পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে।
ভারতের সামরিক সুবিধা ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। কাশ্মীরের হাজার হাজার গ্রামবাসী তাদের মাটি থেকে ভারত রাষ্ট্রের সকল অবশেষ বহিষ্কার করছে।
দুর্ভাগ্যক্রমে সহিংসতায় বিশ^াসী ধর্মোন্মাদদের চিৎকারের মধ্যে সুস্থবুদ্ধির মৃদু কণ্ঠ ডুবে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেন জেনেভায় বক্তৃতায় বিভক্ত কাশ্মীরে শর্তহীন প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পাকিস্তান পরে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশ করতে দিতে রাজি হলেও ভারত তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে। জেইদ বলেন, কোনো সরকার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকার করলে এবং তারপর কোনো অনাকাক্সিক্ষত প্রচারণা রোধে জনসংযোগ প্রচারণায় নিয়োজিত হলেই মানবাধিকার লংঘনের বিষয় মুছে যায় না।
কোনো কিছু না বলে কাশ্মীর বিরোধকে উপেক্ষা করায় বিপদ দেখা দিচ্ছে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান দু’বার যুদ্ধ করেছে এবং আরেকটি বিপর্যয়কর যুদ্ধ, পারমাণবিক যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
এ অঞ্চলকে গোলযোগে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহসী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। আর তা পরিচিতি সংক্রান্ত বৈপ্লবিক চিন্তার মধ্য দিয়েই শুধু সম্ভব হতে পারে।
এখন জাতিসংঘের উদ্যোগের আওতায় পাকিস্তান, ভারত ও কাশ্মীরী জনগণের বৈধ প্রতিনিধিদের গোলটেবিল আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। সূত্র আল জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।