পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সারাবিশ্বে এখন বহুরূপে দৃশ্যমান। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের কোনো দেশে অতিবৃষ্টির ফলে দেখা দিয়েছে বন্যা, ভূমিধস। আবার বৈরি আবহাওয়ার কারণে দাবানল বা হিট ডোমে পুড়ছে কোনো কোনো দেশ। বিশ্বের উন্নত দেশ যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে গত মাসে ভারী বৃষ্টিপাতে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। মরুর দেশ সউদী আরবেও আকস্মিক অতিবৃষ্টি হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এসব দেশের অনেক রাজ্য স্মরণকালের ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে। শুধু তাই নয় একই দেশের কোনো অঞ্চলে অতিবৃষ্টিতে হচ্ছে বন্যা আবার কোনো অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে অনাবৃষ্টি। ভারত এবং চীনে এমনই দেখা যাচ্ছে।
প্রকৃতিতে আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রভাব এখন বাংলাদেশেও প্রকট। গত বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে ছিল বাংলাদেশ। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বোরো মৌসুমে হিটস্ট্রোকে, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ হাওর অঞ্চলের অনেক জমির ধান পুড়ে যায়। এবারও বর্ষার ভরা মৌসুমে উপকূলীয় অঞ্চল অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাসছে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। বৃষ্টির অভাবে কৃষক রোপা আমন চাষ করতে পারছে না। পাট জাগ দেওয়া নিয়েও তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন বৃষ্টি হচ্ছে না। আবার যখন প্রয়োজন নেই তখন হচ্ছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। জলবায়ুর পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চল মরুকরণের দিকে যাচ্ছে। এ ছাড়া হাওর অঞ্চলে অসময়ে বন্যা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে বিভিন্ন দুর্যোগ বাড়ছে। এখন দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিও বাড়াতে হবে। কোথায় কী ধরনের দুর্যোগ আসতে পারে তা চিহ্নিত করতে হবে। এবং সে আলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। উত্তরাঞ্চলে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। উপক‚লীয় অঞ্চল রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধগুলো আরো উঁচু ও টেকসই করে নির্মাণ করতে হবে। অন্যথায় ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়বে দেশ।
চলতি ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া-প্রকৃতি টালমাটাল। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড স্মরণকালের ভয়াবহ দাবানল ‘হিট ডোমে’ পুড়েছে। আবার মারাত্মক বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তুষারঝড় আঘাত হানছে। চীন, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা, ভ‚মিধস, কাদার ঢল (মাড-ফ্লো), সউদী আরবে আকস্মিক অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং মরু দেশটির অন্য প্রান্তে তুষারপাত হয়েছে। শীর্ষ জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, দ্রæতগতিতে বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত এবং আরো মারাত্মক ধরনের দাবানল ‘হিট ডোম’ ও তাপদাহ সৃষ্টি হবে। সেই সাথে বিজ্ঞানীরা সঠিক পূর্বাভাস প্রদানে ব্যর্থতা এবং প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কথাও বলছেন।
আবহাওয়া-জলবায়ু বৈরি হয়ে উঠার সাথেই বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতে অস্বাভাবিক অসঙ্গতি হচ্ছে। বিভাগ-জেলা বা অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাতে অনিয়ম ব্যাপক। পঞ্জিকার পাতায় বর্তমানে শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহ। অর্থাৎ ঋতু হিসাবে বর্ষা শেষ হতে চললো। অথচ বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ নদ-নদী, শাখানদী, উপনদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়ে পানির সমতল স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে রয়েছে। এতে করে ফল-ফসল, ক্ষেত-খামারে চাষাবাদে ভরা বর্ষাতেই পানির অভাবে টানাটানি পড়ে গেছে। ফসলের মাঠে বর্ষাকালীন মাটির ‘স্বাভাবিক’ আর্দ্রতা বা সিক্ততা কম। ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর রিচার্জ (পুনর্ভরণ) হচ্ছে না। সেচকাজে ভ‚গর্ভস্থ পানির উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে কৃষি-খামার ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে বিপদ ডেকে আনছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র মতে, রাজশাহীর উচ্চ বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সালে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট। ২০০০ সালে তা নেমে যায় ৬২ ফুটে। ২০০৭ সালে আরো নেমে গেছে ৯৩ দশমিক ৩৪ ফুটে।
রাজশাহী-রংপুর-দিনাজপুর তথা উত্তরের জনপদে আবহাওয়া-জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার কোটি কোটি মানুষ। এর প্রভাব পড়েছে পরিবেশ-প্রকৃতি, কৃষি-খামার ছাড়াও মানুষের জীবন ধারণ, জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে। কৃষি-প্রধান উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাব সারা বছরই। নদ-নদী, খাল-বিলসহ পানির উৎসগুলো প্রায় তলানিতে অথবা পানি ধারণক্ষমতার নিচে। ফল-ফসল রক্ষায় গভীর নলক‚প এবং প্রচলিত দেশীয় বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিকল্প উপায়ে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষককে। জমি ভিজিয়ে রাখতে হচ্ছে কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে। এতেকরে কৃষি-ক্ষেত খামারে আবাদ ও উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। দিশেহারা কৃষক।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। বর্ষাজুড়েই বৃষ্টিপাত অপ্রতুল। উত্তরাঞ্চলে অনাবৃষ্টিতে উঠতি, আধা-পাকা ফসল, খাদ্যশস্য, পাট, শাক-সবজি, ফলমূল বিবর্ণ হয়ে ফলন মার খাচ্ছে। শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে এসেও ভরা বর্ষার এ কোন রূপ! নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, যমুনেশ^রী, ঘাগট, করতোয়া, বাঙ্গালী নদীসমূহের পানি হ্রাসের দিকে এবং বিপদসীমার অনেক নিচে প্রবাহিত হয়।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে, ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের নদীগুলোতে এবং গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় বিভিন্ন নদীর পানি বাড়লেও এখনো বিপদসীমার যথেষ্ট নিচে রয়েছে। পাউবো আগামী দশ দিনের পূর্বাভাসে জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা উভয় নদ-নদীর অববাহিকায় আগামী ৭ দিনে পানি বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা আপাতত নেই।
অন্যদিকে অতিবৃষ্টি ও সামুদ্রিক জোয়ারের ফলে কিছুদিন যাবত ভাসছে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চল থেকে পদ্মা-মেঘনার ভাটি-মোহনা হয়ে উপক‚লভাগের বিভিন্ন এলাকা। লোনা পানিতে নিমজ্জিত ফসল শাক-সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গতমাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে বিরামহীন বৃষ্টিতে উপক‚লীয় ৭টি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। জেলাগুলো হচ্ছে- কক্সবাজার, বান্দরবান, বরগুনা, ফিরোজপুর, পটুয়াখালি, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। এসব জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। তলিয়ে যায় শত শত মাছের ঘের। এছাড়া রোপা আমনের বীজতলা ও মৌসুমী সবজি ক্ষেত তলিয়ে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও পানির স্রোতে ২০ জন মারা যান।
আমাদের সংবাদদাতারা দেশের উত্তরাঞ্চলের অনাবৃষ্টির যে খবর পাঠিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই আল্লাহ মেঘ দে-মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের হৃদয়গ্রাহী এই গানের মতো আজও বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে রংপুর অঞ্চলের সর্বত্র। বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে ডুকরে কাঁদছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। আষাঢ়-শ্রাবণের এই ভরা মওসুমের শেষ হয়ে এলেও বৃষ্টির অভাব আর প্রচন্ড তাপদাহে হাঁসফাঁস করছে কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের মানুষ। প্রকৃতির অমোঘ নিয়তির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে বৃষ্টির জন্য হা-হুতাস করছেন সব মানুষ। তবুও মিলছে না কাক্সিক্ষত সেই বৃষ্টি। বৃষ্টির অভাবে তৈরি করতে পারছেন না আমনের জমি। শুকিয়ে যাচ্ছে আমনের বীজতলা ও চারা। রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৩৩ মিলিমিটার। অথচ বৃষ্টিপাত প্রয়োজন ৪৫৩ মিলিমিটার। বৃষ্টির অভাবে এ অঞ্চলের অধিকাংশ খাল-বিলে পানি নেই। সেচ দিয়ে পানি তুলে নেয়ায় ইতিমধ্যে খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার পথে। ফলে পানির অভাবে অধিকাংশ এলাকাতেই পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। কাঁচা পাট নিয়েও এ অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
দিনাজপুর অফিস জানায়, ভরা বর্ষায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টি নেই। তারপরেও থেমে নেই কৃষকের পদচারণা। টাকা খরচ করে সেচ দিয়ে রোপা আমন চাষ চালিয়ে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে চলে যাচ্ছে আমন রোপণ মৌসুম। বেড়ে যাচ্ছে চারার বয়স। উদ্বিগ্ন কৃষকদের অনেকেই তাই সেচযন্ত্র চালু করে আমন রোপণ শুরু করেছেন। চড়া রোদের কবল থেকে চারা বাঁচাতে অনেকেই দফায় দফায় সেচ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। গত বছর জুলাই মাসে ৮৮৬ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছিল, অথচ এবছর জুলাই মাস শেষ। বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৮২ মি.মি.। বৃষ্টি না হওয়ায় একরের পর একর জমি পতিত পড়ে আছে। জন্মেছে আগাছা। তীব্র রোদে ফেটে যাচ্ছে জমি। এমন চিত্র জেলার সর্বত্র।
পঞ্চগড় থেকে মো. সম্রাট হোসাইন জানান, বর্ষা মৌসূমেও এ জেলায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা মিলছে না। একনাগাড়ে কয়েকদিন আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিগুলোতে এখনো চারা রোপণ করতে পারছে না কৃষকরা। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকালে ঠিকমতো বৃষ্টির দেখা মিলছে না। তাই সেচযন্ত্র ব্যবহার করে কৃষকদের আমন চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে মো. ফয়সাল হক জানান, চলতি রোপা আমন মৌসুম নিয়ে দুঃচিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকরা। জমিতে চারা রোপণের সময় পেরিয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেন না তারা। এদিকে চারার বয়স ক্রমশই বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন কৃষকদের অনেকেই আমন রোপণে সেচ যন্ত্র ব্যবহার করছেন। এতে বাড়তি খরচ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।