পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শুরু করেন শামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমণি। নিয়মিত মাদক সেবনের অভ্যাস থেকেই বাসায় গড়ে তুলেন মিনিবার। তার বাসায় মাদক সেবনের একটি লাইসেন্সের কপি পাওয়া গেলেও সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ। পরীমণির ফ্ল্যাটে নিয়মিত আয়োজন করা হতো ঘরোয়া পার্টির। সেখানে মদের সাপ্লাই করতেন নজরুল ইসলাম রাজ। প্রভাবশালী অনেকে তার বাসায় মাদকসেবন ও পার্টিতে অংশ নিতেন। রাজের মদেই ডুবে থাকতেন পরীমণি। গ্রেফতারকৃত পরীমণি ও রাজসহ ৪জনকে গতকাল গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। ওই থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল রাতে পরীমণি রাজসহ চারজনকে আদালতে হাজির করে পৃথক মামলায় ৭দিনের রিমান্ডের আবেদন করে গুলশান থানা পুলিশ। এসময় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে পরীমণি ও রাজসহ ৪ জনের পৃথক মামলায় ৪দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গুলশান থানা পুলিশ জানায়, পরীমণি ও আশরাফুল ইসলাম ওরফে দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮- এর ৩৬ (১) এর সারণি ২৪(খ)/৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক)/৪২(১)/৪১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম ওরফে রাজ ও মো. সবুজ আলীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮- এর ৩৬(১) এর সারণি ২৪(খ)/৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক)/৪১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমণি ২০১৬ সাল থেকে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। পরীমনি ও রাজসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মাদক ও পর্ণোগ্রাফী আইনে মামলা করা হয়েছে। চাহিদা মেটাতেই বাসায় মিনি বার স্থাপন করেন তিনি। বিভিন্ন সময় তার বাসায় ডিজে পার্টি আয়োজন করতেন। এই মিনি বারে অ্যালকোহল সরবরাহ করতো নজরুল ইসলাম রাজ।
তিনি আরো বলেন, তিনি ২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও ৫/৭টি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। তাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকার সিনেমা জগতে আনেন আটক হওয়া প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। ২০১৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে তিনি বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেছেন। মিনি বার থাকায় তার বাসায় পার্টির আয়োজন করা হতো। সেই পার্টিতে বিভিন্ন প্রকার মাদক সরবরাহ করতেন রাজ। গ্রেপ্তার হওয়া রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করতেন এবং পার্টিতে অংশ নিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন পরীমণি ও তার সহযোগী। যারা বায় আসা যাওয়া করতেন তাদের বিষয়ে খোজ নেয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। পরীর বাসা থেকে জব্দ করা হয়েছে ৮বোতল প্লাটিনাম লেভেল, তিনটি বø্যাক লেভেল, ২টি সিভাস সিগ্যাল, ২টি ফক্স গ্রোভ, একটি বøæ লেভেল, ২টি গø্যানলিভেট, একটি গø্যানফিডিচ বোতল। তাছাড়া ৪ গ্রাম আইস ও এক ¯øট ভয়ংকর মাদক এলএসডি, একটি বং পাইপও।
তিনি আরো বলেন, চলচ্ছিত্র প্রযোজক ও পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজের অফিস থেকে সাত বোতল গø্যানলিভেট, ২টি গø্যানফিডিচ, চারটি ফক্স গ্রোভ, একটি প্লাটিনাম লেভেল, সীসায় ব্যবহৃত চার কোলের একটি প্যাকেট, দুই সেট সীসার সরঞ্জাম, দুই ধরনের সীসা তামাক, সীসা সেবনের জন্য ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের একটি রোল, ৯৭০ পিস ইয়াবা, যৌনাচারের জন্য ব্যবহৃত ১৪টি বেআইনি সরঞ্জাম, একটি সাউন্ড বক্স ও দুটি মোবাইল ফোন সেট এবং একটি মেমোরি কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য প্রদান করে। ফলশ্রæতিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে ৪ আগস্ট বনানী এলাকায় বিকাল হতে রাত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা পরীমনিসহ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাজ জানান, ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদরাসা হতে দাখিল পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন বলে দাবী করেন। পরে সে বিভিন্ন ব্যবসা ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা/নাটকে তিনি নানান চরিত্রে অভিনয়ের সাথে সাথে নামে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টি মিডিয়া নামেও তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন। উক্ত সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। উক্ত পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের নিকট হতে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমান অর্থ পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরণের পার্টির আয়োজন করা হত। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে আগত ব্যক্তিদের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি সমূহ আয়োজন করত। গ্রেফতারকৃত রাজ এর সিন্ডিকেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহার করতেন। সুদর প্রসারী পরিকল্পনায় তারা অগ্রসর হতেন ও স্বার্থ চরিতার্থ করতেন। গ্রেফতারকৃত রাজ তার “রাজ মাল্টিমিডিয়া” কার্যালয়টি অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হত।
ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজ আরো জানিয়েছে, এ জাতীয় অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার বালু ভরাট ও ঠিকাদারী ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করেতেন। বর্ণিত ব্যবসায় বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন।
রাজের বাসায় গোপন কক্ষ: অভিনেতা ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের প্রযোজক রাজের বাসার ভেতরে একটি গোপন কক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহৃত অনেক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এই কক্ষটিতে পর্নোগ্রাফি তৈরি করা হতো বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় কাঁদলেন পরীমণি: বুধবার সন্ধ্যায় বনানীর বাসা থেকে আটকের পর পরীমণিকে নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে। এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছেন তিনি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিজের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত এই চিত্রনায়িকা কান্নাকাটিও করেছেন। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, আটকের পর পরীমণিকে সোজা উত্তরার র্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা তাকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তার সঙ্গে উচ্চবিত্ত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কার কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে- তা অকপটে বলতে শুরু করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কর্মকর্তারা তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন, বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস এবং কিছুদিন আগে বোট ক্লাবে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়। কোনও কোনও প্রশ্নের জবাবে নিশ্চুপ ছিলেন পরী। তবে বেশিরভাগ সময়ই কান্নাকাটি করেন।
রাজের মোবাইল ফোনে অসংখ্য তরুণীর পর্নো ভিডিও: র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, চলচিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ওরফে রাজকে গ্রেফতারের পর তার মোবাইল ফোনে অসংখ্য তরুণীর পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে। র্যাব বলছে, পরীর গডফাদার হিসাবে পরিচিত নজরুল রাজ একেক সময় একেক পরিচয়ে চলাফেরা করেন। কখনও চিত্রপরিচালক, কখনও ব্যবসায়ী আবার কখনও রাজনীতিবিদ। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন। পরীকে গø্যামার জগতে নিয়ে আসেন কথিত সিনে প্রযোজক নজরুল ওরফে রাজ নামের এক ব্যবসায়ী। সিনেমায় নাম লেখানোর আগে দীর্ঘদিন তার কাছেই থাকতেন পরী। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নজরুল নিজের জেলার পরিচয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
নিজের জেলায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। শহরের নতুন রেলস্টেশনের পাশে তার ৫ তলা আবাসিক হোটেলের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে তার। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ করছেন তিনি। তবে যথাযথভাবে ড্রেজিং না করেই ইতোমধ্যে তিনি প্রায় সমুদয় বিল তুলে নিয়েছেন। নজরুলের বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪টি হিসাবে ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে র্যাব। অবশ্য ব্যাংকের বাইরেও তার হাতে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা রয়েছে।
নজরুল তার প্রতারণা ও পর্নো ব্যবসায় দুই তরুণীকে ব্যবহার করে আসছেন। এদের একজনের ডাক নাম সেমি এবং অপরজন কাঁকন। দুজনই তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এ দুই তরুণীকে দিয়ে তিনি বø্যাকমেইলিংয়ের কাজ করতেন। পাশ্চাত্য পোশাকে অভ্যস্ত সেমি এবং কাঁকনকে নিয়ে হাজির হতেন সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাটে অথবা বাসায়। একপর্যায়ে অনেকেই তাদের প্রেমে পড়ে যেতেন। যে কোনো মূল্যে তাদের সান্নিধ্য পেতে চাইতেন। এমন দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারি কাজ বা তদবিরের টোপ ফেলতেন নজরুল। কোটি টাকা ঘুসের চেয়ে দ্রæততার সঙ্গে তার কাজ হয়ে যেত। এছাড়া এ দুই তরুণীকে ব্যবহার করে তিনি ক্যাসিনো স¤্রাট ইসমাইল চৌধুরীর কাছাকাছি পৌঁছে যান। ঠিকাদারি কাজের ডন হিসাবে পরিচিত জিকে শামীমের সঙ্গেও তার সখ্য গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তিনি জিকে শামীমকে কারাগারে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে তদবির করছিলেন। শামীমের বোন সুবর্ণা মোস্তাফার সঙ্গে তিনি প্রতি সপ্তাহে নানা বিষয়ে শলা-পরামর্শ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।