পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তির রাজধানী খ্যাত ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর সান্তা ক্লারার শহরের মেয়র লিসা এম গিলমোর বলেছেন, ‘রোড শো’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে দু’দেশের প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার অনেক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। লিসা এম গিলমোর বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল যোগাযোগ দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। পাশপাশি দেশটির সামাজিক সম্প্রীতি অর্জিত হয়েছে। এ রোড শোর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে সহায়তা করবে।
গত সোমবার সান ফ্রান্সিসকোর হায়াত রিজেন্সি সান্তা ক্লারা হোটেলের বল রুমে রোড শো’র শুভেচ্ছা বক্তব্যে সান্তা ক্লারার শহরের মেয়র এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সান্তা ক্লারার শহরের কাউন্সিল মেম্বার ক্যাফি ওফানাবি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ‘দি রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়ালস অব ট্রেড এবং ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’- শীর্ষক চতুর্থ ও শেষ পর্বের এ রোড শোতে সান ফ্রান্সিসকোর বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেক হোল্ডাররা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারের গৃহীত বিনিয়োগবান্ধব নীতি আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন।
লিসা এম গিলমোর বলেন, রোড শো’র এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি আনন্দিত। সান্তা ক্লারার মেয়র হিসেবে আমি এ অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই শহর আপনাদের অতিথি হিসেবে পেয়ে সত্যিকার অর্থেই গর্বিত। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছরের মতো সময় ধরে এখানে সব কিছু বন্ধ ছিল। অনেকদিন পর আমি কনভেনশন সেন্টার এলাকায় প্রথম অনুষ্ঠান করতে এসেছি। আমি এখানে এসে খুব খুশি হয়েছি। এ ইভেন্টটি করতে আমাদের শহরকে বেছে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এ জন্য আমি সত্যিই খুব সন্তুষ্ট। এই শুভ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ রোড শো’তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটবে। সিলিকন ভ্যালিতে আমাদের কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশের মতো উদীয়মান দেশের ব্যবসায় সম্প্রসারণে সম্ভাবনা রয়েছে।
সান্তা ক্লারার মেয়র বলেন, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বছরব্যাপী উদযাপনের সময়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। আজকের অনিশ্চিত চ্যালেঞ্জিং সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের কল্পনা বাস্তবায়নের ধারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল এবং এর বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক অর্জন করেছেন।
তিনি বলেন, গত এক দশক ধরে তার (শেখ হাসিনা) ভিশন এবং দিক নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কয়েক ধাপ এগিয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে দেশটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আর এটি বোঝা যাচ্ছে- দেশটির সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নতি দেখে। যা সারা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুসরণ করতে পারে। উপরন্তু, দেশটির জনগনের আয়ু উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি শিশু ও মাতৃমৃত্যু দ্রæত হ্রাস পেয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের বেসরকারি খাত দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির প্রতিটা খাত নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসরকারি খাত। বর্তমান সরকার দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উচ্চ হারে রিটার্নের নিশ্চয়তা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
বিএসইসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে ব্যবসার সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের জন্য অপেক্ষা করছে। আসুন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। এখানে বিনিয়োগ করে উচ্চ হারে রিটার্নের নিশ্চয়তা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত শ্রমশক্তি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে, গতিশীল অর্থনীতি, বিশেষ করে শেয়ারবাজার গতিশীল। তাছাড়া বাংলাদেশে দিন দিন রিজার্ভে রেকর্ড গড়ছে। যা দিয়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে শক্তিশালী গভর্নেন্স রয়েছে। বিশেষ করে শেয়ার মার্কেটে শক্তিশালী গভর্নেন্স পরিপালন করা হয়। শেয়ার মার্কেটের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। তাদের পারফর্মেন্সের খোঁজখবর নিয়মিত রাখা হয়। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের বেশ সুরক্ষা দেওয়া হয়। নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই খুব সহজে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের অর্থ ও লভ্যাংশ ফেরত আনতে পারে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বিডা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন। বেপজা বিনিয়োগকারীদের জন্য প্লট ও অন্যান্য বিষয়ে তদারকি করেন। সুতরাং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে বিগত দিনে বেশ সংস্কার করা হয়েছে। ফলে দিন দিন শেয়ার মার্কেট নতুন উচ্চতার দিকে যাচ্ছে। সূচক, লেনদেন, বাজার মূলধনে নতুন রেকর্ড গড়ছে। ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে উচ্চ হারে রিটার্নের নিশ্চয়তা রয়েছে।
প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, হংকং ভিত্তিক এশিয়ান ফন্ট্রিয়ার ক্যাপিটাল ফান্ডের মতে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার করোনাকালে ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এশিয়ার মধ্যে সেরা পারফর্ম করেছে। ঢাকার স্টক এক্সচেঞ্জে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। লেনদেন, সূচক এবং বাজার মূলধন বেড়ে দিন দিন রেকর্ড গড়ছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট আধুনিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্মল ক্যাপ বোর্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট বোর্ড, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, স্টার্ট আপ কোম্পানির জন্য তহবিল সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। গেøাবাল র্যাংকিংয়ে ৬-এ অবস্থান করছে বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট।
রোড শোর শুরুতে সান্তা ক্লারার মেয়র লিসা এম গিলমোর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে মেয়রাল সার্টিফিকেট প্রদান করেন (মেয়রের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি সনদ)। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও মেয়রকে নকশি কাঁথা উপহার দেয়া হয়। পাশাপাশি মেয়র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট দেন। ক্রেস্টটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের হাতে তুলে দেন তিনি।
সান ফ্রান্সিসকোর রোড শোতে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলামসহ সরকারি বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি ও লস অ্যাঞ্জেলসে সাফল্যের পর এবার বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তির রাজধানী খ্যাত ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যতম বড় শহর সান ফ্রান্সিসকোর সিলিকন ভ্যালিতে সোমবার ছিল রোড শো’র চতুর্থ ও শেষ পর্ব। সপ্তাহজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে বিএসইসির উদ্যোগে আয়োজিত এই রোড শো’র অন্যতম সহযোগী হিসেবে ছিলো- ওয়ালটন, ইস্টার্ন ব্যাংক, নগদ এবং অ্যামচাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।