পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশ। অচেনা এ মহামারী সামাল দিতে জীবন বাঁচাতে একের পর এক হাসপাতালে ছুটছেন মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ২৪৬ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ২১ হাজার ১৬২ জন মারা গেছেন। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৯৮৯ জনের। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩১৭ জন। রোগীর চাপ বাড়ায় হাসপাতালেও ঠাঁই নেই। পাশাপাশি ঘরে ঘরে খাবার নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। সারাদেশের কঠোর লকডাউনে রাজধানী ঢাকার জীবনব্যবস্থা প্রায় থমকে যাবার মতো অবস্থা। এরই মাঝে এখন দরজায় কড়া নাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। একদিকে করোনার প্রকোপ, অন্যদিকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে হাসপাতালে ভর্তির নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আরও ২৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ২৭৯ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৮ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে গতকাল (২ আগস্ট) পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১৮২ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ২০০ জন। বর্তমানে ৯৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ৩৮ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন আছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানিয়েছে।
দিনের পর দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বাঁড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সিটি করপোরেশনগুলোর অবিরাম চেষ্টার পরও সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতার অভাবে এখন পর্যন্ত সফলতা আসেনি। তাই প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। এর ফলে ডেঙ্গু এখন জনমনে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। এর জন্য নিজেদের বাসাবাড়ি ও এর আশপাশের এলাকা নিজেদেরই পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ‘দশটায় ১০ মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসাবাড়ি করি পরিষ্কার’ স্লোগান নিয়ে কাজ করছেন।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এবার ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এ রোগের প্রকোপও বেশি। ম্যালেরিয়া রোগের ক্ষেত্রে সাধারণ মশা যেখানে একজনের বেশি মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টি করতে পারে না, সেখানে একটি এডিস মশা ৮ থেকে ১২ জন মানুষের দেহে আক্রমণ করে ডেঙ্গু রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তাই এবার এডিস মশার সংখ্যা বেশি হওয়ায় কারণে দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপও বেশি।
কীটতত্ত¡বিদদের গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়, ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তারের জন্য যেখানে জীবন চক্র ১২ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা সেখানে এখন পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দ্রুত এডিস মশার বংশ বিস্তার হওয়ায় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপও দ্রুতই বাড়ছে। একদিকে তাপমাত্রা বেশি ও অন্যদিকে ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার বংশ বিস্তার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় কম লাগছে। বৃষ্টি বা অন্য কোন উপায়ে যে কোন স্থানে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লার্ভা পর্যায়ের সৃষ্টি হয়। ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে লার্ভা থেকে পিউপা পর্যায়ে যায় এবং পিউপা থেকে ১ দিনের মধ্যেই এডিস মশা উড়তে পারে এবং পূর্ণাঙ্গ মশা হিসেবে বিচরণ করে।
অবশ্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মনে করেন অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসবে ডেঙ্গু। তিনি বলেন, সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ভবিষ্যৎবাণী ছিলো ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ডেঙ্গু রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা তিনগুণ বেশি হবে। কিন্তু আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনগুলোর মেয়ররাও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মসা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। তারা জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। এখন এডিস মশার ঊর্বর সময় হওয়াতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা হবে বলে জানান তিনি।
তবে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ২০২০ সালে দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭ জন মানুষ। আর এবার ইতোমধ্যেই ৪ জন মারা গেছে। এবার মারা যাওয়া ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের বয়সই ৫ বছরের নিচের বয়সী শিশু।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা ডেঙ্গু থেকে শিশুদের রক্ষা করতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি শিশুকে ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ রাখতে শরীর সার্বক্ষণিক ঢেকে রাখতে হবে। তাদের মশারির ভেতর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া শিশুদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণেও জ্বর যেমন হয়, ডেঙ্গুতেও তাই হয়। করোনাভাইরাস আর ডেঙ্গুর জোড়া প্রকোপে ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশার বংশবিস্তার থামাতে জোর দিতে বলছেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, করোনা মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সব হাসপাতালে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও মুখপাত্র প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগের সুচিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যেই ৫ হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও সারাদেশের সকল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। কীটতত্ত¡বিদরা ডেঙ্গু নিয়ে জরিপ করছে। আর সেই জরিপ রিপোর্ট অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতর বা সিটি করপোরেশনগুলো তৎপর হলেই চলবে না বরং ডেঙ্গু মোকাবেলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর কীটতত্ত¡বিদ ড. শেফালী বেগম জানান, ডেঙ্গু রোগ হয় এডিস মশার আক্রমণে। বাসাবাড়িতে বিভিন্নভাবে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি বা আশপাশে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এই ডিম থেকে হয় লার্ভা। আর এই লার্ভাগুলো পূর্ণাঙ্গ মশা হওয়ার পর মানুষের দেহে ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। যতই কীটনাশক স্প্রে করা হোক না কেন এভাবে এডিস মশা নিধন করা সম্ভব নয়। তাই বাসাবাড়ি ও আশপাশের এলাকা সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না। ফুলের টব বা ডাবের খোসাসহ কোন কিছুতেই যাতে পানি জমে থাকতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আর শুধু সরকার, স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা সিটি করপোরেশনের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। যার যার অবস্থানে থেকে মশা নিধনে কাজ করতে হবে। বাসাবাড়ি ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এদিকে মিরপুরের শাহ আলী মাজার এলাকায় ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশক নিধনে চিরুনি অভিযান পরিদর্শনকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এখন ৬৫ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে আর ২৫ শতাংশ ওয়াসার পানির মিটারের গর্তের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বাকিগুলো পরিত্যক্ত জিনিস, ডাবের খোসা, কমোড, দইয়ের বাটি, ফুলের টবসহ বিভিন্ন জিনিসে। সিটি করপোরেশন সাধ্যমতো চেষ্টা করছে ডেঙ্গু নিধনের। তবে কোন বাড়ির ছাদে ও বেলকনিতে আমরা যেতে পারছি না। মোহাম্মদপুর একটি একটি বাড়ির ছাদে অনেক টায়ার এবং দইয়ের বাটি পাই অভিযানকালে। এই দইয়ের বাটির মধ্যেও ডেঙ্গুর অবস্থান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মনে করেন, ডিএসসিসি এলাকায় সরকারি আবাসন বেশি এবং এসব সরকারি আবাসনে এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়। তবে আগের সময়ের তুলনায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি তার। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর তুলনায় এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরও এডিস মশা নিধনে কাউন্সিলদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
চিকিৎসা ও সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে হঠাৎ করে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী। একসঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে গতকাল (সোমবার) ডেঙ্গু আক্রান্ত সবার চিকিৎসা নিশ্চিতে সারাদেশের সিভিল সার্জনদের বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর রোগীদের জন্য আমিন বাজারে ৫০ বেডের একটি হাসপাতাল, ২৫০ বেডের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল এবং মিটফোর্ড হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুটি হাসপাতালকে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখায় গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য মহাপরিচালক।
উল্লেখ্য, গত বছর দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৪০৫ জন। আর এবার সে সংখ্যা ইতোমধ্যে তিন হাজার ছাড়িয়েছে। আর অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের মৌসুম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই ডেঙ্গু নিয়ে এবার দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।