Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীকে মনে রাখার মতো গণসংবর্ধনা দেবে আ’লীগ

প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বর্ণিল সাজে সাজবে ঢাকা : বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত থাকবে নেতাকর্মীরা : হাতি-ঘোড়া, ঢোল, ব্যান্ড পার্টি থাকবে : নেতাদের অবস্থানের রুট জানিয়ে দেয়া হয়েছে : রাস্তায় ফুল ছিটিয়ে দেয়া হবে
তারেক সালমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনে রাখার মতো বর্ণাঢ্য গণসংবর্ধনা দেবে আওয়ামী লীগ। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১৭ দিনের সফল সফর শেষে আজ শুক্রবার বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা
জাতিসংঘ থেকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ দুটি পুরস্কার গ্রহণ শেষে দেশে ফেরার দিন প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়ার বিশাল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বিপুল জনসমাগম ঘটাতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দল ও সমমনা বিভিন্ন সংগঠনও উদ্যোগ নিয়েছে। গণসংবর্ধনা সফল করতে ইতোমধ্যেই দলের সিনিয়র নেতারা একাধিক প্রস্তুতি সভাও সম্পন্ন করেছেন। এক কথায় স্মরণকালের জমকালো সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনসমূহ।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশন এবং মন্ট্রিলে গ্লোবাল ফান্ড মিটিংয়ে যোগ দেন। তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করেন। সফরের প্রথম পর্যায়ে তিনি ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডায় অবস্থান করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে তিনি গ্লোবাল ফান্ড মিটিংয়ে যোগ দেন। কানাডা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে একটি উপায় বের করতে একমত হন। শেখ হাসিনা ট্রুডোর কাছে ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার সম্মাননা হস্তান্তর করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ট্রুডোর পিতা পিয়েরে ট্রুডোর অসামান্য অবদান ও সমর্থনের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শরণার্থী ও অভিবাসন সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অধিবেশনে তিনি বাংলায় বক্তব্য দেন। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শরণার্থী ও অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হওয়ার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের জন্য পুনরায় আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া শেখ হাসিনা সুইডেনের প্রেসিডেন্ট জোহান সেনিডার আম্মান, কমনওয়েলথ মহাসচিব পেট্রিসিয়া জেনেট স্কটল্যান্ড, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন।
এদিকে, গত বুধবার ছিল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন। দিনটিতে তিনি ৬৯ বছর পার করে ৭০ বছরে পা দিলেন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ঘরে জন্ম নেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় প্রধানের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী অত্যন্ত জাঁক-জমকের সঙ্গে উদযাপনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু হঠাৎ করেই লেখক-কবি সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে মূল কর্মসূচিগুলো স্থগিত ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। শুধুমাত্র বিভিন্ন মসজিদ ও ধর্মীয় সংগঠনে দোয়া-মিলাদ এবং বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজনেই শেষ করতে হয় প্রধানমন্ত্রীর জন্ম উৎসব পালন। যে কারণে সারাদেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী আনন্দ আয়োজন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই দেশে ফেরার সময় চোখ ধাধানো সংবর্ধনার মাধ্যমে তারা সেই বঞ্চনা পুষিয়ে নিতে চান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে বরণ উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজবে রাজধানী ঢাকা। প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে সংবর্ধনা জানাবে। রাস্তার দুই পাশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের রঙিন ব্যানার-পোস্টার থাকবে। পাশাপাশি সাজিয়ে তোলা হবে রাস্তার দুইপাশ। এছাড়াও ধুলাবালিমুক্ত, ঝকঝকে তকতকে এবং সড়কের থাকবে বর্ণিল আলোকচ্ছটা। সড়কদ্বীপের দেশি-বিদেশি গাছগুলোকে পরিচর্যা দিয়ে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে। ফোয়ারায় থাকবে আলো-ছায়ার খেলা। পানির ছোঁয়ায় শহরের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যগুলো ফের প্রাণ ফিরে পাবে। প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে এভাবে রাজধানী ঢাকাকে নতুন সাজে সাজাবে আওয়ামী লীগ। এতে একদিনের জন্য বদলে যাবে চিরচেনা রাজধানীর দৃশ্যপট।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ঘটাতে একাধিক প্রস্তুতি ও যৌথ সভা করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা আয়োজিত হলেও ১৪ দলসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দল ও সংগঠন এবং সব শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেবেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথ সভা থেকে সব রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বুধবার ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম ও গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাফরুলে ঢাকা মহানগর উত্তর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে শুধু ভালোবাসা ছাড়া দেয়ার মতো আমাদের কিছু নেই। আমরা তাকে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ দেব। তিনি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে এলে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়া হবে। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর তাঁকে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত অভ্যর্থনা দেবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন এমন উচ্চতায় পৌঁছেছেন যে তিনি এখন আর শুধু আওয়ামী লীগের নন, পুরো জাতির। বিমানবন্দর থেকে মিছিলসহকারে প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সবাইকে নিয়ে মনে রাখার মতো এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা ব্যানার-পোস্টারে তিনজনের বাইরে আর কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না বলে দল থেকে নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই তিনজন হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথসভায় এ নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। নেতাদের ছবি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আশরাফ বলেন, আমাদের দলীয় একটি সিদ্ধান্ত আছে। সে অনুযায়ী দলীয় কোনো অনুষ্ঠানে ব্যানার-পোস্টারে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয় এ তিন জনের ছবির বাইরে আর কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। এই অনুষ্ঠানেও এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তিনি বলেন, আমি আশা করব গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনজনের ছবি ছাড়া আপনারা আর কারও ছবি ব্যবহার করবেন না।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিদ মাহামুদ চৌধুরী ব্যানার-পোস্টারে নাম ব্যবহার করা যাবে কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, ব্যানার-পোস্টারের নিচে সৌজন্য দাবিদাররা তাদের নাম ব্যবহার করতে পারবেন। এই নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের মাটিতে অবতরণের পর বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর গণভবন পর্যন্ত তাকে স্বাগত জানাতে রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর জন্য রুট করে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ ইনকিলাবকে জানান, শুক্রবার রাজধানী ঢাকা হবে উৎসবের নগরী। ঢাকার অলিগলি রাজপথে ব্যানার-ফেস্টুনে শুধুমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি থাকবে। মুরাদ বলেন, উৎসবমূখর পরিবেশে আমরা আমাদের নেত্রীকে বরণ করে নেব। এই উৎসব নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় তা আমাদের থাকবে। ব্যান্ড পার্টি, ঢোল-বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে হাতি থাকবে। ঘোড়া থাকবে। রঙিন ও বর্ণিল পোশাকে দলের সাফল্যের জয়গান গাইবে নেতাকর্মীরা।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণকে যথাসময়ে এই অভ্যর্থনা কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীকে মনে রাখার মতো গণসংবর্ধনা দেবে আ’লীগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ